Logo
Logo
×

বিচ্ছু

যত দল তত বল

বাজার এতো কম আনলে কেন? * আমি ডায়েট কন্ট্রোল পার্টির সদস্য তো তাই

Icon

মো: রায়হান কবির

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম

যত দল তত বল

বেকার ছেলে দেখতে কার ভালো লাগে! অনেকে যেখানে পুরো পড়াশোনা শেষ না করেই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থান করে, সেখানে দু-তিন বছর আগে মাস্টার্স শেষ করা ছেলে এখনো যদি বাপের হোটেলে খায়, তাহলে কারও ভালো লাগার কথা নয়। তাই বাবা হিসাবে আকরাম সাহেবের দায়িত্ব এবার ছেলের কর্মসংস্থান করা। 

নিজে যদিও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিন্তু সেভাবে কানেকশন নেই যে ছেলেকে একটা প্রতিষ্ঠানে বসিয়ে দেবেন। অন্যদিকে সে রকম আর্থিক সংগতিও নেই যে ব্যবসা দিয়ে দেবেন। তাই এবার ভিন্ন পথেই হাঁটলেন তিনি।

ছেলেকে ডেকে বললেন, ‘সারা দিন বাসায় বসে বসে মোবাইল ফোন না ঘেঁটে কিছু একটা করতেও তো পারিস! সব বন্ধুবান্ধব মিলে একটা দল করলেও তো বেকারত্ব দূর হবে। কাজ মিলবে।’ বাবার কথা শুনে ছেলে কিছুটা রাগ করেই বলল, ‘দল করলে কর্মসংস্থান হয় কীভাবে? উলটো আরও খরচ হবে।’

এবার আকরাম সাহেব বললেন, ‘আরে, বোকার দল! রাজনৈতিক দল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলের চেয়ে কম কিসে! সেখানে প্লেয়ারদের দল বদলে হিউজ ট্রান্সফার ফি থাকে, রাজনৈতিক দলের প্লেয়ারদের দল বদলেও ট্রান্সফার ফি হলে সমস্যা কী! জাস্ট একটা দলের প্রধান হিসাবে নিজেকে মেলে ধর, হয়তো অন্য দল থেকে ডাক এসে হাজির হবে। শুধু নিজেকে একটু ভাইরাল রাখতে হবে, এ-ই যা।’

এবার ছেলে কিছুটা আশা ফিরে পেয়ে বলল, ‘কিন্তু বাবা, এত দলের ভেতর নিজেকে মেলে ধরবো কীভাবে?’

‘এই জন্যই তো তোদের বোকার দল বলি। আরে দুই-চারটা সংবাদ সম্মেলন করে ভাইরাল স্পিচ দে, কিছু ছেলে পেলে সব সময় চারদিকে রাখ, দেখবি মিডিয়ার নজরে চলে আসবি। আর একবার যদি কোনো টকশোতে যেতে পারিস, ভাববি তারকা হয়ে গেছিস!’

ছেলে ভাবল আসলেই তো, দল গঠনের চেয়ে ভালো কাজ আর নাই। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করে কত জায়গায় সিভি দিলাম কেউ ডাকল না। এত দিন বসে বিভিন্ন জায়গায় সিভি ড্রপ না করে, নিজের কিছু ফেসবুক রিল, টিকটক ড্রপ করলে অনেক দূর এগিয়ে যেতাম। সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও আয় হতো, আবার টকশো করে, সাক্ষাৎকার দিয়ে, আরও নানাভাবে ইনকাম করা যেত। যাক, এখনো সময় ফুরিয়ে যায়নি।

কদিনের মধ্যে আকরাম সাহেবের ছেলে পুরোদস্তুর নেতা হিসাবে আবির্ভূত হলো। এলাকা বা সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে কথা বলে ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিল একের পর এক। দেশজুড়ে টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ঘুরে। তারাও ২৪ ঘণ্টা চালানোর মতো কন্টেন্ট পায় না সব সময়। তাই অনেক সময় নাম সর্বস্ব দলের প্রধানের সাক্ষাৎকার প্রচার করে। আর ভিউ ব্যবসায়ীরা তো আছেই! এদের ইউটিউব চ্যানেল চালানোর জন্য হলেও এমন সব নেতার দরকার।

এইদিকে আকরাম সাহেবও খুশি নেতার বাবা হয়ে। দুইদিন আগেও যে বেকার ছেলে ছিল বোঝা, সে-ই এখন অহংকার! যেসব মেয়ের বাবারা আগে আকরাম সাহেবকে এড়িয়ে চলতা, তারাই এখন গাছের প্রথম ফল, পুকুরের বড় মাছ নিয়ে এসে ভাব জমানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। দল আসবে নিজেদের বল বাড়ানোর জন্য। তাতে সমস্যা নাই। আমরা আম-জনতা। দেশপ্রেমিক দলের আগমন হলে আমাদের আপত্তি নাই। তবে মাথায় রাখতে হবে কথা একটাই-করা যাবে না একটুও খাই খাই!

বিচ্ছু

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম