|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এ কুরবানি ঈদের আগে ফারদিনের বউ বিপাশা আবদার করে বসল, এবার তাকে মেঘ কালারের শাড়ি কিনে দিতে হবে। গত ঈদে রোদ কালার শাড়ি কিনেছে। এবার মেঘ কালার।
যেহেতু ঈদের পরপরই আষাঢ় মাস, তাই যে সে মেঘ হলে হবে না, আষাঢ় মাসের মেঘ হতে হবে। আষাঢ় মাসে মেঘ করলে আকাশ যে কালার হয়, সেই কালার।
ফারদিন খুবই নরম গলায় বলল, ‘জান, বৈশাখের মেঘ কালার হলে হবে না? বৈশাখ মাস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শাড়ি বাজারে আসে, আষাঢ় মাসে তো আসে না!’
বিপাশা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, ‘আরে বুদ্ধু, বৈশাখ আর আষাঢ় কি এক হলো? কোথায় ফারদিন আর কোথায় রাতদিন! আমার আষাঢ় মাসের মেঘ কালারই লাগবে। আষাঢ় মাসে আমি বৈশাখী কালার পরব? মান থাকবে? তোমার তো দেখি শুধু বয়স বাড়ছে, বুদ্ধি বাড়ে নাই একফোঁটাও। কোন ব্র্যান্ড কখন পরতে হয় সেটা শিখে তারপর তোমার বিয়ে করা উচিত ছিল।
বেচারা ফারদিন স্বীকার করে নিল, আসলেই তার ব্র্যান্ড চয়েজ খারাপ। নিরীহ গলায় জানতে চাইল, ‘বউ, আষাঢ় আর বৈশাখের মেঘের কালারের পার্থক্য কী?’
বউ হাহাকার করে উঠল, ‘হায় আল্লাহ! কেন যে তোমার মতো নাদানকে বিয়ে করতে গেলাম! বৈশাখ আর আষাঢ়ের পার্থক্যও বুঝতে পারে না! আমার কপালে এই ছিল?’
ফারদিন মিনমিনে গলায় বলল, ‘বউ, আমার অপরাধ কী?’
বিপাশা বিলাপ করতে করতে বলল, ‘তুমি বৈশাখ আর আষাঢ়ের পার্থক্য বুঝতে পার না, তোমাকে বিয়ে করতে বলেছে কোন ছাগলে? সত্যি কর বল, কেন বিয়ে করছো?’
বউয়ের হাহাকার শুনে বেচারা বসে বসে ভাবতে চেষ্টা করল, আসলেই তো, কেন বিয়ে করেছে! অনেক ভেবেও সঠিক কারণ বের করতে পারল না। অবশেষে মনে হলো, গালাগাল শোনার জন্য হলেও একটা বউ দরকার, সেজন্যই বিয়ে করেছে।
বউয়ের বিলাপ দেখে তার বুক ফেটে কান্না এলো। হৃদয় ছিঁড়ে চৌচির হয়ে গেল। দৌড় দিল মার্কেটে। যে করেই হোক আজকে মেঘ কালারের শাড়ি কিনেই ছাড়বে। বউয়ের আবদার বলে কথা!
পুরো ঢাকা শহরের সব মার্কেট চষে ফেলল, বউয়ের পছন্দের কালার খুঁজে পেল না। কয়েকবার বউকে ভিডিও কল দিয়ে শাড়ি দেখাল, কাজ হলো না। কোনোটায় মেঘের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, কোনোটা আবার কম হয়।
বিপাশা বলল, ‘খুঁজতে থাকো, পশ্চিম আকাশে মেঘ করলে যেমন কালার হয়, আমার কিন্তু তেমন শাড়িই লাগবে!’
বেচারা এ দোকান সেই দোকান ঘুরে। অনেক দোকানদার তার কালারের নাম শুনে চোখ টিপে হাসে। কেউ কেউ তাকে উম্মাদ মনে করে।
অবশেষে বড় এক মার্কেটে একটা দোকানে গিয়ে একটা শাড়ি পেল। দোকানদার বলল, ‘ভাই, এইটাই নিয়ে যান। আপনার বউয়ের জন্য এটাই পারফেক্ট হবে।’
নিশ্চিত হওয়ার জন্য বউকে সে আবারও ভিডিও কল দিল।
বিপাশা শাড়ি দেখে চিৎকার করে বলল, ‘তুমি তো দেখাচ্ছো দক্ষিণ আকাশের কালার। মাগো! দুনিয়ায় আজকাল এমন বেকুবও থাকে! বউয়ের সামান্য একটা আবদার পূরণ করতে পারে না! আমার কী হবো গো!’
ফারদিন দোকানিকে বলল, ‘ভাই, আপনি দক্ষিণ আকাশের মেঘ কালার শাড়ি দেখাচ্ছেন কেন? আপনি তো দেখাবেন পশ্চিম আকাশের মেঘ কালার শাড়ি।’
দোকানি বলল, ‘আপনি এ শাড়ি বাংলাদেশের এক জায়গা ছাড়া আর কোথাও পাবেন না। আপনি এক কাজ করুন, আমি ঠিকানা লিখে দিচ্ছি, আপনি ওখানে চলে যান।’
তার মন খুশিতে লাফিয়ে ওঠে, ‘দেন ভাই, তাড়াতাড়ি ঠিকানাটা একটা কাগজে লিখে দেন।’
দোকানদার ঠিকানা লিখে দিল-মানসিক হাসপাতাল, হেমায়েতপুর, পাবনা। ফারদিন বুঝল, দোকানদার তাকে সত্যি সত্যি পাগল ভেবেছে।
