|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মেঘডুম্বরের আকাশে সব সময় মেঘ চরে না বেড়ালেও এখানকার প্রায় মানুষ গরু চরায়। গরু পালন তাদের প্রধান পেশা। গোচারণভূমির জন্য বেশ নাম ডাক। খোলা আকাশের নিচে সবুজ নরম ঘাসের সে দেশ। সেই ভূমিতে হাজার হাজার গরু ইচ্ছে মতো ঘাস খায়। এখানকার মানুষ যেমন গরুর মুখের ভাষা বোঝেন, তেমনি গল্পের গরুকেও তারা গাছে চড়াতে জানেন।
অসুখ-বিসুখ, ব্যথা-বিষের বড়ির তখনো ওই গন্ড গাঁয়ের মানুষ ব্যবহার শেখেননি। আশপাশের নানা অঞ্চলের বইদ্যানীরা এসে শিঙ্গা লাগাতেন এ গ্রামের কারোর কোমরে, পিঠে, ঘাড়ে, পায়ের গোড়ালিতে। বিনিময়ে পেতেন টাকা-পয়সা, ধান, চালসহ অন্যান্য শস্য।
এক বইদ্যানীর সঙ্গে সেকেন্দার খাঁর বাধলো ক্যাচাল। বইদ্যানীকে ডেকে খাঁ সাহেব তার শরীরের শিঙ্গা লাগাতে বলেছিলেন। কিন্তু বইদ্যানী দরদাম নিষ্পত্তি না করে শিঙ্গা লাগাতে রাজি হচ্ছিলেন না। খাঁ সাহেবও নাছোরবান্দা। বললেন, ‘লাগাও আগে। আমি মানুষ ঠকাই না।’
বইদ্যানী কিছুতেই দর ঠিক না করে মুখে শিঙ্গা লাগাবেন না। কিন্তু খাঁ সাহেবও গুচি বাইম মাছের মতো পিছলাতে থাকেন। পেরে না উঠে বইদ্যানী খাঁ সাহেবকে বলে ওঠেন, ‘বাপুরে তোরা গরু চরা ভাত খাস, গরুর বার্তা বুঝিস। আমরা বাপু মানুষ চরা খাই, মানুষের হাব ভাব বুঝি।’ এ ঘটনাটির কথা এখনো যে দু’একজন বলেন, তারা মূলত নিজের প্রজ্ঞা-যশ ঠাওর করাতে চান। বলা যায়, মাতব্বর টাইপের মানুষের কাছে খাঁ সাহেবের গল্প টিকে আছে।
আরেকটি গল্প ওই গ্রামেরই যুবক ঝন্টুকে নিয়ে। তার বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে। পাত্রীপক্ষের লোক আসার আগে চাচাতো ভাই দুলাল নাকি ঝুন্টুকে পটিপটি করে শিখিয়ে দিয়েছিলেন, ‘তোর নাম জিজ্ঞেস করলে বলবি, আরিফুল ইসলাম ঝন্টু।’ পাত্রীপক্ষের লোক তার কাছে গ্রামের নাম-ঠিকানা, পিতার নাম এবং পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে সবই ঠিকঠাক বলেছিলেন। শেষে নিজের নামটি জানতে চাইলে ঝন্টু নাকি বলেছিলেন, ‘দেরি করেন। বাড়ির ভেতর থাইক্যা দুলাল ভাই’র কাছে আমার নাম শুইনা আসি।’
ফিরি কিবরিয়া মৃধার গল্পে। তাকে সবাই বেডি সাহেব বলে চেনেন। বিএড থেকে বেডি! কী অদ্ভুত! তার প্রকৃত নাম সবার সামনে ভেসে উঠেছিল নির্বাচনের পোস্টারে। ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বর পদে নির্বাচন না করলে তার প্রকৃত নাম জানা হতো না।
বছর তিরিশ হয়ে গেছে সেই নির্বাচনের। তবু তাকে নিয়ে প্রচলিত গল্পটি মানুষ মানুষকে কারণে অকারণে স্মরণে এনে দেয়। যাকে বলে পোক মারা। খোঁচানো।
সেটিই এখন বলা যাক-মেঘডুম্বর গ্রামের উত্তর-পশ্চিমের গ্রামগুলো পড়েছে এক উপজেলায়। দক্ষিণ-পশ্চিমের গ্রামগুলো পড়েছে অন্য জেলায়। মৃধা সাহেব নাকি প্রচারণা চালাতে পাশের থানায় গিয়েছিলেন। নির্বাচনে তার ফলাফল জেনে সেই গ্রামের কে যে গল্প বানায়ে ফেলেছিল-‘বেডি সাহেব ভোট পাইবো কোন থাইক্যা। নিজের ইউনিয়ন ছাইড়া ভোট চাইতে গেছিল পাশের থানায়!’
