|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বয়স হলে কি বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যায়? নাহ, আমি তা মনে করি না। ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব তো এখনো এতটুকু, নষ্ট হয়নি। প্রায় রোজ আমাদের কথা হয়, দেখা হয়, আড্ডা হয়। হয় আরও কত কিছু! মানে বন্ধুদের মধ্যে যা যা হয় আর কী!
যখন স্কুলে পড়তাম তখন কি জানতাম, আমার বন্ধুরা এক একজন এত বড় হয়ে উঠবে! ভাবছেন কত বড়? অপেক্ষা করুন, একটু বাদেই টের পাবেন। আমার সবচেয়ে ডানপিঠে বন্ধুটার কথাই ধরুন। নামটা পরে শুনুন। স্কুলে যত ঘটনা (মূলত দুর্ঘটনা) ঘটত ঠিক তার হাত থাকত। প্রায়ই অন্য বন্ধুদের সঙ্গে প্যাঁচ লাগিয়ে ঝামেলা বাঁধিয়ে বসে থাকত সে। আমার সেই বন্ধু একটু বড় হয়ে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমাল সুদূর আমেরিকায়। এখন সে দেশটির প্রেসিডেন্ট। ঠিক ধরেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথাই বলছি। একসঙ্গে আমরা স্কুলে বাকিতে কত চালতার আচার কিনে খেয়েছি তার হিসাব নাই! চালতার আচারের চেয়ে স্যাকারিনের আইসক্রিমই বেশি পছন্দ ছিল ট্রাম্পের। আমাদের আরেক বন্ধু পুতিন সেও কম ডানপিঠে ছিল না। অবশ্য তার মাথা ছিল খুব ঠান্ডা। ঠান্ডা মাথায় ঠিক সব সামলে নিত। স্কুলের পেছনে ছিল কাসেম ভাইয়ের ঝালমুড়ির দোকান। দোকানে বসে আমরা গল্প করতাম আর কখনও নগদে, কখনও বাকিতে ঝালমুড়ি খেতাম। সেও এখন একটা দেশের প্রেসিডেন্ট! ব্যস্ততার মধ্যেও প্রায় রোজই ফোন দেয়। আমার বুদ্ধি-পরামর্শ নেয়। কখন কোন দেশকে কীভাবে সামলাবে তার পরামর্শ নেয়।
আমাদের আরেক বন্ধুর কথা না বললেই নয়। ওর নাম কিম জং উন। প্রায়ই পরীক্ষায় গোল্লা পেত। গোল্লা পেতে পেতে একসময় ওর চেহারাও গোল্লার মতো হয়ে যায়। স্কুলের পেছনে একটা বড় জাম গাছ ছিল। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে জাম গাছের ওপর উঠে হুটহাট গুলতি দিয়ে মানুষের মাথা ফাটিয়ে দিত! এ নিয়ে রোজ বাসায় অভিযোগ যেত। তাতে ওর বয়েই গেছে! সে তার কর্ম ঠিক চালিয়ে যেত। আমাদের সেই ক্ষ্যাপা বন্ধুটি আজ উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট!
আরেক বন্ধু শি জিনপিং ছিল দারুণ বুদ্ধিমান। ক্লাশে কথা বলত কম। কিন্তু পরীক্ষার খাতায় ঠিকই পাশ মার্ক তুলে নিত। ঠান্ডা মাথায় সব প্রশ্নের উত্তর দিত। ওকে আমরা দেখতাম পড়াশোনায় খুব মনোযোগী। বাসা টু স্কুল, আর স্কুল টু বাসা-এই ছিল তার রুটিন কাজ। আমাদের সেই বন্ধুটিও আজ একটা দেশের প্রেসিডেন্ট!
গুতেরেস নামে আমাদের আরেক বন্ধু ছিল। ওকে আমরা কখনও কোনো দরকারি কাজে পেতাম না। প্রায়ই আমাদের বন্ধুদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া বেধে যেত। আমরা তখন গুতেরেসের কাছে যেতাম মিটমাট করতে। গুতেরেস মিটমাটের কথা বললেও আমরা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে সেটা বের করে দিতাম।
এদিকে আমার কথা কী আর বলব! আমি আবুল মিয়া। ঢাকার সদরঘাটের টং দোকানের চায়ের দোকানদার। রোজ চা বেচি আর ফাঁকে ফাঁকে হোয়াটস অ্যাপে আমার এই ভিআইপি বন্ধুদের বুদ্ধি-পরামর্শ দিই। অনেকে জানেই না, আমার বুদ্ধিতেই চলছে বিশ্ব রাজনীতি! না জানলে নাই, আমার তাতে বয়েই গেল!
