|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বুধবার মানে মমট্যাজ’র জন্য বিশাল এক ধাক্কা। কেননা, এ দিনেই এলাকায় কম দামে সরকারি পণ্য পাওয়া যায়। তাই সকাল সকাল গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয়। যদিও মমট্যাজ কখনো বোরখা পরে না, তবে বুধবার তাকে পরতেই হয়! কারণ শত হলেও সে একজন টিকটক স্টার। তাকে তো তার এসব নিুমধ্যবিত্তের লাইনে মানায় না। রিল লাইফ আর রিয়েল লাইফের পার্থক্য, দর্শক যদি একবার জানতে পারে তবে টিকটকে স্টার হওয়া ছুটে যাবে!
যাই হোক, বুধবার সকাল বেলা রেডি হচ্ছে মমট্যাজ, এ সময় তার বান্ধবী এসে ডাক দিল, ‘কিরে, মমতাজ হইছে তোর?’ আমাদের টিকটকের মমট্যাজ তখন আস্তে করে বলল, ‘মমট্যাজ ক, মমতাজ না! আইতাছি...।’
টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে দুইবান্ধবী আফসোস করছিল, আহারে আমাদের টিকটকের ভিডিও কত সুন্দর হয়। কিন্তু আমাদের মোবাইল কমদামি হওয়ায় রেজুলেশন খারাপ আসে, আর তার জন্য ভিউ কম হয়। সুতরাং পয়সা কামানোর সুযোগ নাই। তাদের লাইফ স্টাইল দেখলে মনে হবে বলিউডের কোনো সুপারস্টারের স্ট্রাগল করার জীবনী। একটা সময় মানুষ অভিনেতা-অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখত, তার জন্য স্ট্রাগল করত। কিন্তু এখন মানুষ ফেসবুকে স্টার হতে চায়, এমন স্টার, যে স্টার টাকা উপার্জন করতে পারে, যে স্টার তার আগের লাইফ স্টাইল আমূল বদলে লাক্সারি লাইফ স্টাইলে যাবে তেমন স্টার!
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর প্রয়োজনীয় জিনিস হাতে নিয়ে দুইবান্ধবী যখন বাড়ির পথ ধরল, তখনই তাদের চোখে পড়ল একটা জটলা। দূর থেকে দেখে রাজনৈতিক জটলাই মনে হলো। মমট্যাজ বলল, ‘চল, গিয়ে একটা ভিডিও বানাই।’ মমট্যাজের বান্ধবী রুবি বলল, ‘ভিডিও বানাবি কীভাবে? দুইজনই বোরখা পরা, তার মধ্যে মেকাপও করা নাই। আমাদের ফলোয়াররা আমাদের এ অবস্থায় দেখলে চিনতেই পারবে না। আর চিনে ফেললেও বিপদ, হাতে টিসিবির মাল দেখলে ইজ্জত শেষ! চল বাসায় যাই...।’ এমন সব কথা চলতে চলতে ওরা জটলার কাছে চলে এলো। কাছে গিয়ে বুঝল এটা একটা রাজনৈতিক জনসংযোগ। একটা দল তাদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ক্ষমতায় গেলে টিসিবির পণ্য আরও কম দামে, আরও বেশি পরিমাণে দেওয়া হবে। চাল-ডালের সঙ্গে নিয়মিত মাছ, মাংস, পিৎজা, বার্গার সবই থাকবে। দেশের সব মানুষ শুধু ডাল-ভাত না, সঙ্গে ফাস্টফুড এমনকি চাইনিজ ফুডও তখন কম দামে পাবে। এ সব বক্তব্যের ফাঁকে হঠাৎ ক্যামেরা মমট্যাজের কাছে চলে এলো। মমট্যাজ ক্যামেরা দেখে দ্বিধায় পড়ে গেল। একদিকে ফ্যানবেজ, অন্যদিকে জীবনে প্রথম টিভিতে চেহারা দেখানোর সুযোগ! কী করবে? মুখ দেখাবে নাকি বোরখার আড়ালেই নিজের বক্তব্য দেবে, চাওয়া-পাওয়া বলে যাবে? শেষ পর্যন্ত নিজের ফ্যানের কাছেই আত্মসমর্পণ করল, বোরখায় মুখ ঢেকে বলে গেল, ‘দেখেন আমার মনে হয়, সব রাজনৈতিক দলের উচিত আমাদের দক্ষ করে গড়ে তোলা। টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে আমরা আর চাল, ডাল চাই না। বরং আত্মকর্মসংস্থান করার জন্য যার যার যা দরকার তা কম দামে দেওয়া হোক। যেমন-যার ভিডিও বানানোর যে সরঞ্জাম দরকার তাকে সেটা দিলেই চাল-ডাল বাইরে থেকেও কিনে খেতে পারবে। আমার যেমন আইফোন সিক্সটিন প্রো ম্যাক্স দরকার। আমি যদি সেটা পাই, আমি নিজেই আয় করতে পারব। আমি ফেসবুকে ‘মমট্যাজ’ আপির ভিডিও লাইক করি (সুযোগ পেয়ে নিজের মার্কেটিং করতে এক বিন্দু দেরি করল না। টিকটক স্টার বলে কথা!)। উনি এতো সুন্দর সুন্দর ভিডিও বানায়, কিন্তু রেজুলেশন ভালো না। ওনার মতো উঠতি স্টারদের যদি সরঞ্জাম দেওয়া হয়, তাহলে ওনারাও রেমিট্যান্স যোদ্ধা হতে পারবে। ডলার কামাতে পারবে!’ মমত্যাজের এই কথা শুনে পুরো জটলায় হইচই পড়ে গেল। কথাগুলো সত্যিই বাস্তবিক। মানুষকে ভিক্ষা দেওয়ার চেয়ে স্বাবলম্বী করা ভালো। চারদিকে তুমুল করতালি দিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করা হলো। এই যখন অবস্থা, তখন ক্যামেরায় খুব আস্তে করে একটা কথা শোনা গেল। এক নেতা আরেক নেতাকে বলছে, ‘অ্যাপল কি গাছে ধরে?’ পাশের নেতা ধরতে না পেরে বলে উঠল, ‘আপেল তো স্যার গাছেই ধরে, পরে বাক্সে করে আমাদের দেশে আসে!’
