|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘স্যার, গুতেরেস।’
‘কীসের রেস? কোথায় রেস?’
প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে তাকালাম কোট, টাইপরা আলাভোলা লোকটার দিকে।
‘স্যার, আমার নাম আন্তেনিও গুতেরেস। জাতিসংঘের মহাসচিব। আপনার কাছে এসেছি অত্যন্ত জরুরি বিষয় নিয়ে।’
‘হুট করে এসে পড়লেই হলো? অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এসেছেন? কোনো ধারণা আছে আমার সম্পর্কে?’
আমার ঝাড়িতে বেচারার ফর্সা মুখ লাল হয়ে উঠল। হাত কচলে বলল, ‘আপনাকে চেনে না, গ্যালাক্সিতে এমন কেউ আছে? যে কোনো সমস্যার সমাধান আপনার কাছে ন্যানো সেকেন্ডের মামলা। আসলে হয়েছে কী, হাতে একদম সময় নেই বলে ছুটে এসেছি। ওয়াদা করছি, এমন ভুল আর হবে না। এবার দয়া করে সমস্যার কথাটা কি শুনবেন?’
‘না, আমার হাতেও সময় নেই। এখন ছুটতে হবে মাছ বাজারে। আজ যদি ছোট মাছ কিনতে না পারি গিন্নি ঘরে ঢুকতে দেবে না।’
‘আপনার দরকার মাছ, আর আমার দরকার আপনাকে। যদি কিছু মনে না করেন আমার লোক দিয়ে মাছ কিনে আনাই? ততক্ষণ আমার কথা শোনেন।’
গুতে’র কথা শুনে মাথা দোলালাম। এটা অবশ্য ভালো প্রস্তাব, ‘আচ্ছা শোনেন, আপনার লোককে বলেন, কাঁচকি, মলা, ঢেলা, টেংরা, পুঁটি ছোট মাছ যা যা পাওয়া যায়, যেন কেনে। তারপর সেই মাছ নিয়ে যাবে মতিন মিয়ার কাছে। বাজারের একেবারে কোনায় বসে। ছোট মাছ সবাই কাটে না। মতিন কাটে।’
‘এ্যঁ!’
‘হ্যাঁ। কিনে, কেটে কুটে নিয়ে আসলেই আপনার সমস্যার সমাধান দিতে পারি।’
গরমে ঘামতে ঘামতে কাকে যেন ফোন করল গুতেরেস। ফোনে কথা শেষ করে কোট খুলে, টাই দিয়ে মুখ মুছে বলল, ‘স্যার, মাছের ব্যবস্থা হচ্ছে। এখন তাহলে বলি? জানেনই তো, ইসরাইল আর ইরানের ভয়াবহ যুদ্ধ হচ্ছে। যুদ্ধের যে অবস্থা, এখন তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগার অবস্থা। এ যুদ্ধ থামাতে হবে। কিছু একটা করেন।’
‘আমি কিছু করব কেন? যুদ্ধ লাগার আগে আমার কাছে পরামর্শের জন্য কেউ এসেছিল? যারা গিরিঙ্গি বুদ্ধি দিয়ে যুদ্ধ লাগায়, তাদের গিয়ে বলেন।’
গুতেরেস মাথা চুলকালো। যে গিঁট্টু লাগছে, ‘কেউ ছুটাতে পারছে না।’
‘আপনি জাতিসংঘের মহাসচিব না? আপনি গিয়ে ছুটান।’
‘সে চেষ্টা কি করিনি? কেউ আমাকে পাত্তা দেয়? এই যুদ্ধ থামাতে না পারলে আমার তো চাকরি থাকবে না।’ ‘নিজে না পারলে গুটিবাজ ট্রাম্পকে বলেন থামাতে।’
‘তার কথাও তো কেউ শুনছে না। আমেরিকা, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান থেকে শুরু করে ইরান, ইসরাইল সবাই বলছে, শুধু আপনিই পারেন অভূতপূর্ব সমাধান দিয়ে যুদ্ধ থামাতে। এমনেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর দেরি করা ঠিক হবে না, স্যার।’
‘ঠিক বলেছেন। তাড়াতাড়ি একটা ফোন লাগান।’
‘কাকে? ইরানের প্রেসিডেন্টকে নাকি ইসরাইলের?’
‘যাকে মাছ বাজারে পাঠিয়েছেন তাকে। মাছ কাটাকাটির খবর কী? বাসায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে সেটা থামাবে কে?’
‘স্যার, আপনি গৃহযুদ্ধ নিয়ে আছেন? এদিকে যে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাচ্ছে! যুদ্ধ থামানোর উপায়টা বলুন।’
‘আমাকে এত বোকা ভাবার কিছু নেই। আগে বাজারের ব্যাগটা হাতে পাব, তারপর বলব। ততক্ষণ আমার মাথা টিপেন।’
গুতেরেস মুখ গোমড়া করে মাথায় আঙুল গুঁতাতে লাগল। আহ্, কী আরাম। বোজা চোখে বললাম, ‘গুতেরেস ব্রো, চাকরি চলে গেলেও চিন্তা নাই। আপনি ভালো মাথা টিপতে পারেন। কী হলো, চুল ধরে এত জোরে জোরে টানছেন কেন?’
প্রবল টানাটানিতে চোখ মেলে দেখি, দাঁত কিড়মিড় করে তাকিয়ে আছে গিন্নি। মাথায় অবশিষ্ট চুলগুলোর টানে ধড়মড় করে উঠে পড়লাম। দাঁত ব্রাশ করতে করতে গুতেরেসের কথা মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। আহা রে, বেচারা কী আগ্রহ নিয়েই না ছোটমাছের পোঁটলা হাতে অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
