Logo
Logo
×

বিচ্ছু

পাঠক রস

প্রেম থেকে পালিয়ে

Icon

সাঈদুর রহমান লিটন

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রেম থেকে পালিয়ে

তখন ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে পড়তাম। রাজেন্দ্র কলেজে ছিল তখন দুইটি শাখা। একটি ইন্টারমিডিয়েট, অন্যটি ডিগ্রি শাখা। আমি পড়তাম তখনকার ইন্টারমিডিয়েট শাখায়। আমার এক খুব কাছের বন্ধু ছিল, নাম জাকির। এখন মধ্যপ্রাচ্যে থাকে। আমরা ইন্টারমিডিয়েটে পড়তাম, আমাদের শাখায় কোনো ছাত্রী ছিল না। আর পাশেই আরেকটা কলেজ সারদা সুন্দরী কলেজ, সেই কলেজে ছাত্র ছিল না। সবাই দুই কলেজকে ফোড়ন কেটে বিধবা কলেজ বলে সম্বোধন করত। রাজেন্দ্র কলেজকে পুরুষ বিধবা, আর সারদা সুন্দরী কলেজকে নারী বিধবা বলা হতো। মাঝে মাঝে ক্লাস না থাকলে আমরা সারদা সুন্দরী কলেজের রাস্তা দিয়ে ওই কলেজের মেয়েদের দেখতে যেতাম। এর জন্য অনেক বকাও শুনেছি। অনেক অভিযোগও এসেছে। তারপরও রাজেন্দ্র কলেজের ছেলেরা ফুরসত পেলেই সারদা সুন্দরী কলেজের আশপাশ দিয়ে দুই-এক চক্কর দিত। আমরাও দিতাম।

আমরা থাকতাম গোয়ালচামট মোল্যা বাড়ি সড়কে। হেঁটেই কলেজে যেতাম। গোয়ালচামট মোল্যা বাড়ি সড়কে জাকিরদের বাসা। আর আমি ওদের বাসার পাশেই এক বাসাতে সাবলেট থাকি। মাসিক টাকা দিই, খাই-দাই ঘুমাই। একদিন জাকির বলল, ‘দোস্ত, একটা জায়গায় যেতে হবে।’

বললাম, ‘কোথায়?’

‘জেনারেল হাসপাতালের সামনে।’

‘চল যাই।’

জেনারেল হাসপাতালের সামনেই ফরিদপুর সরকারি গার্লস স্কুল। বলল, ‘এখানে একটু দাঁড়াব।’ কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। বারোটার দিকে স্কুল ছুটি হলো। দলে দলে মেয়েরা বের হচ্ছে। আকাশী রঙের ড্রেস পরা সবাই। জাকির স্কুলের গেটের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে বলল, ‘তুইও গেটের দিকে তাকিয়ে থাকবি।’

আমিও তাকিয়ে রইলাম। একবার বলল, ‘ওই মেয়েটাকে দেখ। পিঠে কালো ব্যাগ। হাতে সোনালি ফিতার ঘড়ি। খুব সুন্দর দেখতে। পরির মতো। পরি অবশ্য কখনও দেখিনি। যাহোক আমি বললাম, ‘দেখলাম, দারুণ! মেয়েটি কে?’

জাকির বলল, ‘জানি না। দোস্ত, আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি। নাওয়া, খাওয়া, চলা ফেরায় ওর কথা মনে পড়ে। ঘুমাতে পারি না। ওর ছবি ভেসে আসে। দোস্ত তুই একটু ম্যানেজ করে দে?’

দেখা যাক বলে সেদিন চলে এলাম। আমরা রোজ গার্লস স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়াই। কিছু দূর এগিয়ে যাই ওর পিছু পিছু। তারপর ফিরে আসি। কিছু আর বলা হয়ে ওঠে না সাহস করে। কী বলব না বলব, ভয়ে সামনেই যেতে পারি না আমরা। তা ছাড়া ওকে প্রপোজ করার জন্য আমাকেই দায়িত্ব দিয়েছে। মেয়েটি এতো সুন্দর যে, কার জন্য প্রস্তাব দিব, ভেবে ভেবে অনেক দিন পার হয়ে গেল। আমরা নিয়মিত ক্লাস করি না। করতে পারি না। প্রতিদিন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে গার্লস স্কুলের গেটের একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকি। ওর পিছু পিছু যাই। মেয়েটি জেনারেল হাসপাতালের পেছনে লাশ কাটার ঘর পার হয়ে একটু দূরে অফহোয়াইট কালারের বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়ে, আর আমরা ফিরে আসি। এভাবেই দিন যায় আমাদের। এদিকে পড়াশোনা চুলোয় উঠেছে। ওকে কিছু না বলা পর্যন্ত কারও ভালো লাগছে না।

সেদিন ছিল রোববার। আমরা যথারীতি গেটের সামনে দাঁড়ালাম। ওদের স্কুল বন্ধ আমরা জানতাম না। কিন্তু মেয়েটিকে দেখে ফেললাম। মনে হয় প্রাইভেট পড়ে ফিরছে। একদম একা। ভাবলাম, আজ যে করেই হোক কথাগুলো বলব। আমার অথবা জাকিরের কথা। আর পড়াশোনা নষ্ট করা যায় না। হাসপাতাল পার হয়ে লক্ষ্মীপুর রোড পর্যন্ত ওর পিছু পিছু গেলাম। নির্জন রাস্তা। আমরা তিন জন ছাড়া কেউ নেই। মেয়েটি খুব ধীরে হাঁটছে। আমরাও। কয়েকবার পেছনে তাকাল। আমাদের দেখে হেসে দিল। কী দারুণ হাসি! বেমক্কা মেয়েটি দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল, ‘কিছু বলবেন?’

আহা! কী মধুর কণ্ঠ। শত জন্ম পার করা যায় এ কণ্ঠ শুনে। কানে পল্লীগীতির মতো বাজতে লাগল আমাদের।

‘কিছু বলবেন?’

‘হ্যাঁ।’

জাকির আমার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। মেয়েটি বলল, ‘আপনারা প্রতিদিনই আসেন। আমিও আপনাদের মিস করি। আপনাদের জন্যই আমি কোনো দিন স্কুল কামাই দেওয়ার কথা ভাবতে পারি না।’

শুনে খুব সাহস হলো। মেয়েটি বলল, ‘কী বলবেন বলেন?’

বললাম, ‘ও আমার বন্ধু জাকির। আমরা রাজেন্দ্র কলেজে পড়ি। আমার বন্ধু তোমাকে খুব ভালোবাসে। তুমি এ ব্যাপারে কী বলো?’

‘আমি আপনাদের সম্পর্কে সব কিছু জানি। আপনারা খুব ভালো ছেলে তাও জানি। আপনার প্রস্তাবও ভালো। তবে আমি আমার আব্বুর একমাত্র সন্তান। জীবনের এতো বড় সিদ্ধান্ত আমার আব্বুর সঙ্গে শেয়ার না করে নিতে পারি না। আজ আপনাদের কথা আব্বুকে জানাব। আমার আব্বু এ থানার ওসি। আগামীকাল ওনাকে বাসায় থাকতে বলব। আপনারা চলে আসবেন, সরাসরি কথা হবে।’

আমার বন্ধু জাকির ওসির কথা শুনে ভয়ে আমার হাত ধরে টান দিয়ে বলল, ‘চল, ভিক্ষে চাই না কুত্তা ঠেকা!’

আমরা আর একমিনিটও দেরি করলাম না। বিদ্যুৎগতিতে স্থান ত্যাগ করলাম। আমাদের অবস্থা দেখে মেয়েটি মুচকি মুচকি হাসছিল! কী অপমান! কী অপমান!

মধুখালী, ফরিদপুর

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম