দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে খাল খনন আবার শুরু করা হবে: তারেক রহমান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৭ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে দেশ পরিচালনার সুযোগ দিলে খাল খননের কাজ আবার শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে দেশের মানুষ যতবার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিয়েছে, ততবারই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তখন একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। তা ছিল খাল খনন প্রকল্প। এ নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু এর পেছনে অনেক কারণ ছিল। খাল খননের মাধ্যমে তিনি একদিকে যেমন বন্যা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, আরেকদিকে ফসলের সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছিলেন। এর ফলে যে জমিতে একটি ফসল হতো, সেখানে দুটি ফসল হওয়া শুরু করল শুধু পানি সরবরাহ ঠিকভাবে করার কারণে। এজন্য তার আমলের আগে বাংলাদেশ যেখানে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, জিয়াউর রহমানের আমলে সেখানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিল। সেই সঙ্গে, অল্প পরিমাণ হলেও আমরা বিদেশে রপ্তানি করতেও সক্ষম হয়েছিলাম। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে আবার দেশ পরিচালনার সুযোগ দিলে খাল খননের কাজ আবার শুরু করা হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সারা দেশের ৭৫টি ইউনিটের বিভিন্ন পর্যায়ের এক হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।
প্রবাসীদের নিয়ে তারেক রহমান বলেন, আজকে আমরা দেখি প্রায় দেড় কোটির কাছাকাছি মানুষ বিদেশে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে অর্থ পাঠান। যা দিয়ে দেশের মানুষ ও রাষ্ট্রের চাহিদা পূরণ করা হয়। এই যে জনশক্তি রপ্তানি, এর উপায় প্রথম বের করেছিলেন জিয়াউর রহমান, যখন তিনি দেশ পরিচালনা করছিলেন। আমরাও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, এই মানুষগুলোকে যদি সঠিকভাবে ট্রেনিং দেওয়া যায়- তা অনেক কাজে লাগবে।
তিনি আরও বলেন, যেই ৮ থেকে ১০ লাখ অদক্ষ মানুষ বিদেশে যাচ্ছে তাদেরকে আমরা ভ্যালু এড করে ১৫ থেকে ২০ লাখ করতে চাই। এই মানুষগুলো যেন ধীরে ধীরে ভালো কাজ করতে পারে। অর্থাৎ এখন যদি তাদের একটি ভাষার কোর্স করানো হয় বা ট্রেনিং দেওয়া হয়, তাহলে যেখানে তারা ১০০ ডলারের বেতন পায়, সেটা বেড়ে ৩০০ ডলার হয়ে যাবে। আর এতে দেশের রেমিট্যান্সের পরিমাণও বেড়ে যাবে।
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ফ্রিল্যান্সিং ও ডিজিটাল আয় নিয়ে কথা বলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, পেপালের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা অলরেডি একটা টিমের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেক তরুণ আছে যারা বিভিন্ন কন্টেন্ট তৈরি করে, কিন্তু সঠিক প্ল্যাটফর্মে তা দিতে পারছে না। এর ফলে তাদের আয় অনেক কম হচ্ছে। আমরা যদি তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় পলিসি করি, পেপাল, গুগল, মেটাসহ ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিস এখানে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যারা আছে, তাদের ইনকাম অনেক বেড়ে যাবে।
এ সময় ঢাকা শহরসহ সারা দেশের বাযুদূষণ রোধে বৃক্ষরোপণের কথা জানান তিনি। সেই সঙ্গে দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার কথাও বলেন। অপরদিকে প্রাইমারি শিক্ষকদের যথাযথ ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে আরও দক্ষ শিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নয়, ধানের শীষ মুখ্য বলে দলের নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের বসে থাকার সময় নেই। বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। হয়ত এমনও হতে পারে দলের পক্ষ থেকে এলাকায় যেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে তোমার পছন্দের প্রার্থী হয়ত পাওনি। যে পেয়েছে তার সঙ্গে হয়ত তোমার সম্পর্ক আছে একটু কম। তুমি তো প্রার্থীর জন্য কাজ করছো না, তোমার ধানের শীষের জন্য কাজ করছ। এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে তোমার দল বিএনপি, ধানের শীষ। এখানে মুখ্য হচ্ছে দেশ। মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রায় দিলে দেশ গড়ার প্রত্যেকটা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারব এবং করব।’
তারেক রহমান বলেন, দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো পরিকল্পনার মধ্যে রাখব না। এগুলোকে আমরা যেকোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করব, জনগণের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে। আজকে প্রতিজ্ঞা, কর্মপন্থা হলো আমাদের এই পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গেই বাংলাদেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করব। এটাই হচ্ছে আমাদের পরবর্তী দুই মাসের কাজ। এর বাইরে আর কোনো কাজ নেই।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো নিয়ে নিজ নিজ এলাকার মানুষকে সম্পৃক্ত করা, সমর্থন নেওয়া ও সমর্থন জোগাড় করার জন্য আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। খাল খনন, বায়ুদূষণ রোধ, পরিবেশের উন্নয়ন, বর্জ্য অপসারণ, সারা দেশে ক্রীড়ার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বেকারত্ব দূর, ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মাস কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ডসহ বিএনপির পরিকল্পনাগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে নেতাকর্মীদের তা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন তারেক রহমান।
তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তোমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ওপর নির্ভর করছে। তোমরা যদি এগিয়ে আসো, ঐক্যবদ্ধ হও, তাহলে এদেশের সামনে একটি ভবিষ্যৎ আছে। তা না হলে একটি ভয়াবহ কিছু হয়ত অপেক্ষা করছে। আমরা যদি আজকে ঐক্যবদ্ধ হই, যদি যে যার অবস্থান থেকে কাজ করি দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আজকে আর বসে থাকার সময় নেই।
কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় আরও ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।
