‘জুলাই শহিদদের একটাই দাবি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ১০:৩৭ পিএম
আলোচনা সভায় অতিথিরা। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, শেখ হাসিনা গত ১৬ বছর ধরে তাদের দমন করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি পারেননি। জুলাই বিপ্লবের যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের একটাই দাবি— নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। বিএনপি ক্ষমতার জন্য নয়, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন চায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জনগণকে একটি নির্বাচন রোডম্যাপ দিন, তারা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেবে। বিএনপি ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করেছে। তারেক রহমানও বলেছেন- ভোটকেন্দ্রে আমরা যাব। এবার আমাদের দাবি— একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন, যেখানে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।’
বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে ফার্মেসি অ্যাসোসিয়েশনের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং ৩১ দফা রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জুলাই মাসে যে নিপীড়ন চালিয়েছে, তার বিচার অবশ্যই করতে হবে। জনগণ ও সাংবাদিক সমাজ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, তাদের এই অবদান গণতন্ত্রের পথে বড় শক্তি।
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরা আজ যা লিখতে পারছেন, তা সম্ভব হয়েছে শহিদদের আত্মত্যাগের কারণে। মিডিয়াকর্মীদের অবদানেই আজকের গণতন্ত্রের আলো দেখা যাচ্ছে। আগামীতেও তাদের নিরপেক্ষভাবে লেখার আহ্বান জানাই।
ফারুক বলেন, আজ যারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন- তারা অতীতে কোথায় ছিলেন? বিগত সরকারের সময় তো কিছু বলেননি। এখন দেশের মানুষ শুধু একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এ দেশের মানুষের পালস আছে— তারা এখন ভোট চায়, অধিকার চায়।
শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার সমালোচনা করে ফারুক বলেন, শেখ মুজিব গণতন্ত্র ধ্বংস করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা সেই পথেই হেঁটেছেন। ইতিহাস ভুলে গেলেও এসব লেখা থাকবে। তিনি বলতেন- ‘আমার বাবার দেশ’, কিন্তু গণতন্ত্র মানে কি এক পরিবারের শাসন?
ফারুক বলেন, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার পর শেখ মুজিব যদি সত্যিই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন, তবে শহিদদের কবর জিয়ারত করে বলতেন— ‘আমার থেকে শিক্ষিতদের হাতে ক্ষমতা দিচ্ছি।’ তাহলে সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডগুলোও হতো না। শেখ মুজিব তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, পরে দেশে ফিরে একদলীয় শাসন চালু করেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি ১০ জানুয়ারি একটি আবেদন দিয়েছে- আওয়ামী লীগকে আইনের আওতায় এনে নিষিদ্ধ করা উচিত। তারা দেশের ইতিহাসে একের পর এক কলঙ্কের জন্ম দিয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে ফারুক বলেন, তার দেশে-বিদেশে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, কোনো সম্পদ নেই। তারপরও তিনি গণতন্ত্রের জন্য রাস্তায় আন্দোলন করেছেন। এমন নেতৃত্ব ইতিহাসে বিরল।
এ সময় বিএনপির এই নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পালিয়ে যাওয়ার সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করছিল- এ প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘তারা যদি তৎপর হতো, তাহলে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলকর্মী সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন মাদকের আড্ডা, জুয়ার আসর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত এসব দমন করা।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কয়ছর এম আহমদ, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল এবং তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. কাজী মনিরুজ্জামান মনির।
বাংলাদেশ জাতীয় ফার্মেসি অ্যাসোসিয়েশন (বিএনপিএ) কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ডা. মো. এবি সিদ্দিক হাওলাদারের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মহসীন হোসেন হাওলাদারের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামীম মিয়া।
