Logo
Logo
×

বিএনপি

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমেদ

আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট একটা নির্বাচন করা

Icon

খুলনা ব্যুরো

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১০:৪২ পিএম

আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট একটা নির্বাচন করা

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এই দেশে বন্দর, করিডর সবকিছু নাকি ইউনূস সরকারের অধিকারের মধ্যে পড়ে। বিদেশে আপনি কী কন্ট্রাক্ট করে এসেছেন জানি না। আপনি অবলীলাক্রমে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর, নদীবন্দর, করিডর সব বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর করবেন কী চুক্তি করে এসেছেন? কী এখতিয়ার আছে আপনার? কী ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছেন? আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট বাংলাদেশে একটা সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। সুন্দর, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।

তিনি বলেন, আমরা বলছিলাম যথষ্টে হয়েছে নির্বাচনমুখী যেসব জরুরি সংস্কার করা দরকার, সেসব সংস্কার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। আপনি আশ্বস্ত করেছিলেন, আবার আপনি সরে গেলেন।

শনিবার বিকালে খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দানে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন। 

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী এবং যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান এবং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনি কি চান নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক? এ দেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক? হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, অধ্যাপক ড. ইউনূস সাহেব, আপনি বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব, সম্মানিত জন। আপনি সম্মানের সঙ্গে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করুন ডিসেম্বরের মধ্যে। যে কথা আপনি আমাদের দিয়েছিলেন। অনন্তকাল আপনি বিচার ও সংস্কারের বাহানা দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কণ্টকাকীর্ণ করবেন না।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। আপনার কি সেই আক্কেলজ্ঞান নেই? একজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান করবে কীভাবে ভাবলেন? সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি রোহিঙ্গা করিডরের নামে, মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চান। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আপনি কথা বলেননি। এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করেননি। অত্যন্ত এরোগেন্টলি আপনার সেই উপদেষ্টা বলছে, তাতে নাকি কিছু যায় আসে না। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। হয় তিনি নিজে পদত্যাগ করবেন, না হয় আপনি তাকে বিদায় করবেন। এ দেশের নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো জাতীয় দায়িত্ব বিদেশি কোনো নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। এই নাগরিক ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য। আমরা তা হতে দেব না।

সরকারপ্রধানকে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনি মনে করছেন জনগণ আপনাকে অসীম ক্ষমতাশালী বানিয়েছেন? বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ আপনার মানার দরকার নেই? যদি তাই মনে করেন, আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ হবে। এরই মধ্যে কিছু কিছু উপদেষ্টা আপনার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে উচ্চাভিলাষ প্রণয়ন করছে। তাদের উদ্দেশ্য অনির্দষ্টিকাল পর্যন্ত অনির্বাচিতভাবে যেন এই সরকার থাকতে পারে। যাদের কথায়, যাদের পরামর্শে আপনি বিভ্রান্ত হচ্ছেন, সেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের আপনার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আপনি অপসারণ করেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম আপনার উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর আছে। আমরা চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম, এখন কিছু বিদেশিদের দোসর আছে। আমরা এখন তাদের অপসারণের কথা বলছি। আর যারা এনজিও মার্কা উপদেষ্টা আছে, যারা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের কথা শোনার প্রয়োজন নেই, তাদের আপনি অপসারণ করুন। না হলে আপনি সসম্মানে বিদায় নিতে পারবেন কি না, আমি অত্যন্ত সংশয় প্রকাশ করি।

ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, গণ-অভু্যত্থানের পর আপনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু মনে করবেন না রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আপনাদের আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইব। এখন মানুষ আপনার সরকারকে বলছে এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির দুজন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা, আবার এনসিপি সংগঠন করে। অফিশিয়ালি করে না, কিন্তু সবাই সবকিছু জানে। ওপেন সিক্রেট। যদি আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, তাহলে সেই এনসিপি মার্কা সেই দুজনকে পদত্যাগ করতে বলেন। যদি পদত্যাগ না করে, আপনি বিদায় করুন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস জন্মলগ্ন থেকেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। আওয়ামী লীগের মৃতু্য হয়েছে রাজনৈতিকভাবে ঢাকার মাটিতে। দাফন হয়েছে দিলি্লতে। তিনি বলেন, গণহত্যা চালানোর পরও শেখ হাসিনা ও তার দলের কোনো অনুশোচনা নেই। তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করেনি, তারা দুঃখপ্রকাশ করেনি। উলটো দিলি্লতে বসে এদেশে গণতানি্ত্রক আন্দোলনকারীদের অপরাধী হিসাবে তকমা দিচ্ছে। 

শতাধিক গাড়ি নিয়ে তারুণ্যের সমাবেশে বরিশাল বিএনপি : তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ডাকে সাড়া দিয়ে শতাধিক যানবাহন নিয়ে খুলনার তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দিয়েছে বরিশাল বিএনপি। এসব যানে বরিশাল যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শনিবার দুপুরে খুলনায় পৌঁছান। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে সার্কিট হাউজ ময়দানে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশে যোগ দেন নেতাকর্মীরা।

বিএনপি সালাহউদ্দিন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম