Logo
Logo
×

সারাদেশ

বেঁধে মারধর, বুকের ওপর পা চেপে মেয়ের আর্তনাদ শোনাল বাবাকে

Icon

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:০১ পিএম

বেঁধে মারধর, বুকের ওপর পা চেপে মেয়ের আর্তনাদ শোনাল বাবাকে

ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের রেহানিয়া গ্রামে বিভীষিকাময় এক ঘটনা ঘটেছে। পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হাতে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ফারজানা বেগম (২৪) নামের এক গৃহবধূ। 

অমানুষিক নির্যাতনের একপর্যায়ে তাকে খাটে বেঁধে বেদম মারধর করা হয়। এমনকি বুকের ওপর পা চেপে ধরা হয়। ফারজানার করুণ আর্তনাদ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শোনানো হয় তার বাবাকে।

এমন লোমহর্ষক ঘটনার শিকার হয়ে অচেতন অবস্থায় ফারজানাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি মহিলা ওয়ার্ডের ২৪নং বেডে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ ফারজানা জানান, সাত বছর আগে আবদুল গণির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সংসারে দুই সন্তান জন্ম নিলেও সুখের মুখ দেখেননি তিনি। শুরু থেকেই স্বামীর লোভ-লালসার শিকার হয়েছেন।

স্বামীর অতিরিক্ত অর্থের চাহিদা মেটাতে বারবার বাবার বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, আসবাবপত্রসহ নানান কিছু আনতে হয়েছে তাকে। তবুও থামেনি নির্যাতন।

সম্প্রতি স্বামী আবদুল গণি পাশের বাড়ির এক বিধবা মামাতো বোনের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানালে নেমে আসে নৃশংস নির্যাতনের খড়্গ।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সহায়তায় দরজা-জানালা বন্ধ করে ফারজানাকে খাটে বেঁধে ফেলা হয়। মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে শুরু হয় অমানুষিক প্রহার। একপর্যায়ে তার বুকের ওপর পা তুলে চেপে ধরা হয়। ফারজানার আর্তনাদ ফোনের স্পিকারে শোনানো হয় তার অসহায় বাবাকে।

নির্যাতিতার বাবা মো. হানিফ চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, মেয়েটাকে বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য নানাভাবে চাপ দিত। আজকাল আবার পরকীয়ার নামে ওর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছিল; কিন্তু মেয়ের বুকের উপর পা তুলে চিৎকার আমাকে শুনিয়েছে—এটা কি মানুষ করতে পারে? আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি, আমার মেয়ের নির্যাতনের বিচার চাই।

সূর্যমুখী মাছবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন, এ পরিবারে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। স্থানীয়ভাবে সালিশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল; কিন্তু তার আগেই এমন নৃশংস ঘটনা ঘটানো হলো। এ ধরনের পাশবিক নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি।

হাতিয়া থানার উপপরিদর্শক প্রতিক পাল জানান, গৃহবধূকে নির্যাতনের খবর পেয়ে দ্রুত অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো লিখিত অভিযোগ জমা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানুষের মুখে একটাই প্রশ্ন—একজন নারীকে বেঁধে রেখে তার বুকের উপর পা তুলে চাপা, সেই আর্তনাদ বাবাকে শোনানো—এ কেমন বর্বরতা? সমাজে এ ধরনের পশুত্ব আর নৃশংসতার কোনো স্থান নেই। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

হাতিয়ার এ ঘটনাটি শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্য লজ্জাকর। এ ঘটনার দ্রুত বিচার না হলে নারীর প্রতি সহিংসতা আরও বিস্তার লাভ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম