সেবা গ্রহীতাদের অভাবে অলস পড়ে আছে দুই হাজার কোটি টাকার ওয়াসা প্রকল্প
আবেদ আমিরী (পটিয়া), চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:২১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বহুল প্রতিক্ষিত ওয়াসা প্রকল্পে সেবা গ্রহীতার অভাবে অলস বসে আছে এ প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৩ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনসহ চট্টগ্রাম ওয়াসা দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার বাসিন্দা ও শিল্প কারখানার জন্য অগ্রাধিকার হিসেবে এ প্রকল্প নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু পানির সংযোগের জন্য আশানুরূপ আবেদন মিলছে না। চট্টগ্রাম মহানগরের বাইরে ভান্ডালজুরি পাহাড়ের পাদদেশে এ প্রকল্পের পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হয়। পটিয়ায় বিতরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতিটি উপজেলায় বিতরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক মিলছে না।
অভিযোগ রয়েছে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহৃত সিমেন্টের গুণগত মান নির্ণয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পক্ষ থেকে সরবরাহ করা একাধিক টেস্ট রিপোর্টের অধিকাংশের কিউআর কোড ও স্বারক নকল। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ রেজাউল মাকসুদ জাহেদী বলেন, পটিয়া পৌরসভায় পুরোপুরি ও উপজেলা সমূহের যেসব ইউনিয়নের পানির স্তর একেবারে কম সেখানে টিউবওয়েল দ্বারা ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন দ্রুতই বন্ধ করা হবে। এছাড়া প্রকল্পে ব্যবহৃত সিমেন্টের গুণগত মানের টেস্ট রিপোর্টের কপি আসল কিনা খতিয়ে দেখা হবে।
জানা গেছে, গত এক দশক ধরে বাস্তবায়ন করা ভান্ডালজুরি প্রকল্প লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গ্রাহক পাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা ও শিল্পকারখানার মালিকরা পানির সংযোগ নিতে আগ্রহী নয়। ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ করার কথা ছিল। সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় পরে প্রকল্পের ব্যয় ৯৫৮ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। দশ বছরে কাজ সম্পন্ন হয়। তবে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ২০২৩ সালের শুরুর দিকে আবাসিক ও শিল্পকারখানায় পানি সরবরাহে সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু করে। এরপরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না ওয়াসা। এ প্রকল্পের আওতায় ১৫ হাজার গ্রাহককে সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গত আড়াই বছরে গ্রাহক পেয়েছে তিন হাজারের কম।
ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল শিল্প কারখানাগুলো ওয়াসার প্রধান লক্ষ্য হলেও এ পর্যন্ত চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) ছাড়া কেইপিজেডসহ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান পানির সংযোগ নেয়নি বলে জানা গেছে। তারা এখনো গভীর নলকূপের পানির উপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ারা বেগম জানান, ভান্ডালজুরি প্রকল্পের মাধ্যমে সকলের কাছে পানি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ রেজাউল মাকসুদ জাহেদী আরো বলেন, পানি সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার পাবে পটিয়া। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয়ের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। প্রকল্পভুক্ত পৌর এলাকায় টিউবওয়েল সমূহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এছাড়া যেসব ইউনিয়নে পানির স্তর সবচেয়ে নিচে সেসব ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করে সেখানে ওয়াসার পানি সরবরাহ অগ্রাধিকার পাবে।
এদিকে গত শনিবার পটিয়ায় বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহেদী। পরে উপজেলা মিলনায়তনে বিভিন্ন ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানদের সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার মহাপরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মীর আবদুস সাহিদ, এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আলী আজগর, এলজিইডির চট্টগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা, পটিয়া উপজেলা প্রকৌশলী কমল কান্তি পালসহ অন্যরা।

