Logo
Logo
×

সারাদেশ

অনলাইন জুয়ার ফাঁদে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন গ্রামের মানুষ

Icon

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪২ পিএম

অনলাইন জুয়ার ফাঁদে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন গ্রামের মানুষ

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়া নামক সামাজিক ব্যাধি। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে এখন গ্রামের তরুণ থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক অনেকেই অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, স্থানীয় বিকাশ দোকান, হাট-বাজার কিংবা চায়ের দোকানেও মোবাইল ফোনে অনলাইন জুয়া খেলার দৃশ্য। এক বিকাশ এজেন্টের দোকানে দেখা যায়, অটোরিকশা চালক নিজের একাউন্টে টাকা জমা দিতে এসে ফোনে ব্যস্ত। তার মোবাইল স্ক্রিনে খোলা ছিল একটি অনলাইন জুয়ার সাইট। বোঝা যায়, তিনি টাকা রিচার্জ করে জুয়া খেলছেন। দেখতে ভিডিও গেমের মতো হলেও, সেখানে প্রতিনিয়ত হারাচ্ছেন তার কষ্টার্জিত টাকা। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, লোভের বশবর্তী হয়ে অনেক যুবক এই জুয়ার জগতে পা রেখেছেন। কেউ কেউ ভাগ্যের জোরে কিছু টাকা জিতে হঠাৎ ধনী হয়ে পড়ছেন, আবার অনেকেই সব হারিয়ে পথে বসছেন। এলাকায় এমন অনেকের দেখা মেলে যারা কোনো দৃশ্যমান কাজ না করেও হঠাৎ বাড়ি, গাড়ির মালিক হয়েছেন। ফলে অনেক তরুণ তাদের অনুকরণ করে লোভে পড়ে সব হারিয়ে ফেলছেন।

সিএনজি চালক আব্দুল হালিম বলেন, আগে আমার দুটি সিএনজি ছিল। এক পরিচিত বন্ধুর মাধ্যমে অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়ি। প্রথমে কিছু টাকা জিতেছিলাম, পরে হারতে হারতে সব শেষ। এখন আমি একেবারে নিঃস্ব।

দিনমজুর রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন কাজ করে ১২০০ টাকা আয় করতাম, যা দিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলতো। একদিন এক বন্ধুকে দেখি ১০ মিনিটে ১০০ টাকার বিনিময়ে ১০ হাজার টাকা জিতলো। এটা দেখে লোভে পড়ে আমিও জুয়া খেলতে শুরু করি। এখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আমি পালিয়ে বেড়াই।

স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জুয়া খেলার পেছনে কাজ করছে একাধিক স্থানীয় এজেন্ট। তারা মূলত অনলাইন জুয়া সাইটের প্রতিনিধিত্ব করে। একজন খেলোয়াড় যত বেশি টাকা হারান, তার নির্দিষ্ট একটি শতাংশ সরাসরি ওই এজেন্টের একাউন্টে জমা হয়। ফলে দিন দিন এজেন্টের সংখ্যা বাড়ছে এবং তারাই এই জুয়ার নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে গ্রামে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনলাইন জুয়া বন্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সবাইকে সতর্ক ভূমিকা নিতে হবে। একই সঙ্গে টেলিকম ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে, যাতে এসব অবৈধ অ্যাপ ও লেনদেন বন্ধ করা যায়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম