Logo
Logo
×

সারাদেশ

সন্তানের স্বীকৃতি পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে শিশু শাহাদাত

Icon

তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম

সন্তানের স্বীকৃতি পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে শিশু শাহাদাত

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সন্তানের স্বীকৃতি পেতে প্রশাসনের দ্বারস্থ শিশু সন্তান শাহাদাত ও তার মা। ছবি: যুগান্তর

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সন্তানের স্বীকৃতি পেতে আদালতসহ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা ও তার শিশু সন্তান শাহাদাত। তবুও মিলছে না ন্যায়বিচার ও বাবার কাছে প্রাপ্য সন্তানের হক।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সন্তানের স্বীকৃতি পেতে মা শাহিনুর বেগম বাদি হয়ে আব্বাস উদ্দীন রতনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি গ্রহণ করে বিচারক মো. শাহীন উদ্দীন ২৬ নভেম্বর শুনানীর জন্য আদেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদি শাহিনুর আক্তার রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউপির বংশীব্রীজ এলাকার আইয়ুব আলীর মেয়ে। অভিযুক্ত আব্বাস উদ্দীন রতন রায়পুর পৌরসভার নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা ও কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক কর্মকর্তা।

স্থানীয়রা জানায়, ২০০০ সালের ৩ মার্চ শাহীনুর ছিল ১০ বছরের কিশোরীওই সময় তার মা-বাবা চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে শাহীনুরকে জোরপূর্বক বাল্য বিয়ে দেনদুই মাস পর তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।

শাহীনুর বেগম ২০০২ সালে নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা মৃত আবদুল লতিফ ভুঁইয়ার ছেলে, রায়পুরের সাবেক কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা আব্বাস উদ্দিন রতনের সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে তার বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন। বাসায় কাজ করার সময় শাহীনুরের ওপর কুদৃষ্টি পড়ে রতনের। বিভিন্ন সময়ে জোরপূর্বক মেলামেশা করার চেষ্টা করতেন তিনি। সফল হতে না পেরে গোপনে নতুন বাজার জামে মসজিদের ঈমামকে দিয়ে বিয়ে করেন দুজনেবিয়ে করলেও চতুর আব্বাস উদ্দিন রতন তাদের কাবিন করেননি। কিছুদিন পর শাহিনুর আক্তারের শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

২০১৪ সালের ২৪ আগষ্ট তিনি পুত্র সন্তান শাহাদাতকে জন্ম দেন। শিশুটির বর্তমান বয়স ১১ বছর। শাহিনুর আক্তারে কাছে বিয়ের কাবিননামা না থাকায় স্বামী আব্বাস উদ্দীন রতন পুত্র সন্তান ও শাহিনুরকে অস্বীকার করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।

এরপর স্বামী ও সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় আদায়ের লক্ষ্যে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর শাহিনুর বাদী হয়ে আব্বাস উদ্দিন রতনকে অভিযুক্ত করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সি আর মামলা দায়ের করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে শাহিনুর আক্তারআব্বাস উদ্দীন রতনের শারীরিক সম্পর্কের কারণে শাহিনুর গর্ভবতী হন এবং একটি পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করেসন্তান হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে তার বাসার গৃহকর্মীর কাজ থেকে বিতাড়িত করে দেওয়া হয়

মামলা দায়েরের পর আদালত ডিএনএ টেস্টের আদেশ দিলে আসামি আব্বাস উদ্দিন রতন রায়পুর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতাকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে শাহিনুরকে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেন। মামলা প্রত্যাহার করার পূর্বে কাবিনের টাকা বাবদ ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয় শাহিনুরকে। বলা হয়- শাহাদাতকে ছেলে হিসেবে মেনে নিয়েছেন এবং প্রতি মাসে ছেলের ভরনপোষণ বাবদ ৫ হাজার টাকা দেবেন। কিন্তু কৌশলে মামলা প্রত্যাহার করানোর পর সন্তানের স্বীকৃতি বা ভরনপোষণ কোনোটাই এখন পর্যন্ত দেয়নি রতন। 

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী (এপিপি) আবদুল আহাদ শাকিল পাটোয়ারী বলেন, জোরপূর্বক ও প্রতারণামূলকভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে পূর্বের মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাই সন্তানের ভরনপোষণ আদায়ের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করা হলেও কাবিন না থাকায় সংশ্লিষ্ট আদালত মামলাটি রিজেক্ট করে দেয়। আমরা উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল দায়ের করেছি। আপিল মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আছে, আমরা আশা করছি ন্যায় বিচার পাব এবং ডিএনএ টেস্ট করালেই প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা যাবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্বাস উদ্দীন রতন বলেন, শাহিনুর আমার বাসার গৃহকর্মী ছিলেন। এলাকার একটি কুচক্রী মহল শাহিনুরকে দিয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। তাকে দিয়ে আদালতের মামলা দিয়ে তা প্রত্যাহার করেও নিয়েছেন। এখন আবারও আমাকে হয়রানি করছে। আবারও প্রমাণ করব আমি নির্দোষ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম