২৪ জনে টেনে তুলল ৪০০ কেজির শাপলা পাতা, এলাকায় চাঞ্চল্য
হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
১০ মণ ওজনের বিরল শাপলা পাতা মাছ। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নোয়াখালীতে জেলের জালে ধরা পড়েছে ১০ মণ ওজনের (৪০০ কেজি) বিরল শাপলা পাতা মাছ। বিশাল আকারের এই সামুদ্রিক প্রাণীটি ঘিরে স্থানীয় জেলে, ব্যবসায়ী ও কৌতূহলী মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নিষিদ্ধ প্রজাতির এই মাছ ধরা ও বিক্রির ঘটনায় এলাকায় তৈরি হয় নানা আলোচনা।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে হাতিয়া উপজেলার মেঘনার মোহনায় মাছটি ধরা পরে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকালে বুড়িরচর ইউনিয়নের দানারদোল মাছ বাজারে মাছটি নিলামে তোলা হয়। আইন অনুযায়ী এ মাছ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও শেষ পর্যন্ত স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী খবির উদ্দিন ব্যাপারী ১ লাখ ৩১ হাজার টাকায় মাছটি ক্রয় করেন।
হাতিয়ার মেঘনা নদীর মোহনায় সাগরে গ্যাসকূপের কাছে জাল ফেলেছিলেন স্থানীয় জেলে কামাল মাঝি ওরফে মালয়েশিয়া মাঝি। ওই রাতে নিয়মিত মাছ ধরার কাজ শেষে ফজরের আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করেন তারা। ভোরে জাল টানতে গিয়ে মাঝিদের মনে হয় জালে হয়তো অনেক মাছ উঠে এসেছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তারা বুঝতে পারেন, জালের ওজন অস্বাভাবিক ভারি—এটি কোনো সাধারণ মাছ নয়।
বোটে থাকা ১৫ জন মাঝি-মাল্লা মিলে জাল টানার চেষ্টা করেও সফল হতে না পেরে পাশের একটি নৌকার জেলেদের সহযোগিতা নেন। দুই নৌকার প্রায় ২৪ জন মানুষের চেষ্টায় অবশেষে উত্তোলন করা হয় বিশালদেহী শাপলা পাতা মাছটি। পরে মাছটি নৌকা করে নিয়ে আসা হয় দানারদোল মাছঘাটে।
বিরল মাছটি ধরার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে জেলে কামাল মাঝি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, অনেক দিন ধরেই ধার-দেনা করে নৌকা ও জাল নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছি। এত বড় মাছ পাওয়ায় আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। বোটের সবাই পরিশ্রম করেছে, তাই মাঝি-মাল্লাদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে দিতে পেরেছি। তবে ভালো দামের ব্যবসায়ী না থাকায় প্রত্যাশার তুলনায় দাম কম পেয়েছি।
মাছ ক্রেতা খবির উদ্দিন ব্যাপারী বলেন, বিরল সামুদ্রিক প্রাণীটি ধরা পড়ায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। মোকামে শাপলা মাছের ভালো চাহিদা থাকে। তাই বেশি দামে বিক্রির আশায় মাছটি কিনেছি। সব মিলিয়ে হয়তো ২০ হাজার টাকা লাভ হতে পারে।
এ ঘটনায় আইনগত বিষয়টি পরিষ্কার করে হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ফয়জুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী শাপলা পাতা মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহণ ও হেফাজত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মাছটি বিপন্ন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এদের অস্তিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন ভঙ্গ করলে সাজার বিধানও রয়েছে।
তিনি আরও জানান, অনেক সময় জেলেরা আইন সম্পর্কে অবগত না থাকায় অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন ঘটনা ঘটে। এজন্য সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

-693bb284cc9fd.jpg)