মহিউদ্দিন মিশু, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:৪০ | অনলাইন সংস্করণ
‘আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, প্লিজ আমাদের একা থাকতে দিন’, এ কথা বলেছেন আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আন্তঃনগর মহানগর তূর্ণা নিশীথার চালক (লোকোমাস্টার) তাসের উদ্দিন (৫৫) ও সহকারী চালক অপু দে (৩৫)।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হতাহতদের খোঁজ নিতে গেলে সেখানে যুগান্তরকে তারা এ কথা বলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেলস্টেশনের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পেছনে চালকের ভুলকেই সম্ভাব্য কারণ বলে মনে করছেন রেলমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় তাদের দায়ী করে বরখাস্ত করেছেন রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত ব্যক্তিদের খোঁজে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে জানা যায়, পুরুষ কেবিনে দুজন ব্যক্তি ভর্তি আছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তারাই অভিযুক্ত চালক তাসের উদ্দিন ও সহকারী চালক অপু দে।
একই বেডে দুজন ব্যক্তি শুয়ে আছেন। আপনারা কি ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন? এমন প্রশ্নে প্রথমে কোনো জবাব মেলেনি। একই প্রশ্ন একাধিকবার করার পর উত্তর দেন। একপর্যায়ে চালক তাসের উদ্দিন ও সহকারী অপু দে যুগান্তরকে বলেন, ‘প্লিজ আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, আমাদের একা থাকতে দিন’।
তাদের নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে অপু দে বলেন, ভোলা জেলার বাপদা গ্রামের কৃপা চার্য্য দের ছেলে তিনি। সে সময় চালক তাসের উদ্দিন তার বাড়ি মানিকগঞ্জ বলে জানান।
সেই সময় তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলেন, ওই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন তারা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। এর বেশি কথা বলতে উভয়ই নারাজ। তবে কথা বলার সময় তাসের উদ্দিন তার হাত দিয়ে বারবার কপাল চাপড়াচ্ছিলেন। তখন ওদের ভীষণ হতাশাগ্রস্ত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিল।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে তাদের বহনকারী আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. তাজুল ইসলাম বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত একাধিক ব্যক্তিকে অ্যাম্বুলেন্সে আখাউড়ায় নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই দুজন আখাউড়া হাসপাতালে ছিলেন। তবে ওরা যে তূর্ণা নিশীথার চালক (লোকোমাস্টার) তাসের উদ্দিন ও সহকারী চালক অপু দে আমি বুঝতে পারিনি।
হাসপাতাল ছেড়ে দেয়ার পর ওদের নাম-ঠিকানা মিডিয়াতে জানাজানি হলে জানতে পারি, ওরাই ছিল আন্তঃনগর মহানগর তূর্ণা নিশীথার বরখাস্তকারী চালক (লোকোমাস্টার) তাসের উদ্দিন ও সহকারী চালক অপু দে।
প্রসঙ্গত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে ১০ এবং হাসপাতালে নেয়ার পর ছয়জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন ৭৪ জন।
সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের লুপলাইনের মুখে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ দুর্ঘটনার জন্য তূর্ণা নিশীথার চালক (লোকোমাস্টার) তাসের উদ্দিন ও সহকারী অপু দেকে দায়ী করে বরখাস্ত করা হয়। ট্রেন দুর্ঘটনার পর তারা আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।
মন্দবাগ রেলস্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, আউটার ও হোম সিগন্যালে লালবাতি (সতর্ক সংকেত) দেয়া ছিল। কিন্তু তূর্ণার নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করে ঢুকেপড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াৎ উদ-দৌলা খানও এ কথা জানিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০০০-২০১৯