Logo
Logo
×

বিনোদন

‘মুখ ও মুখোশ’ শুধু সিনেমা নয়, এক সমুচিত জবাব

Icon

আনন্দনগর প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১০:৫৬ পিএম

‘মুখ ও মুখোশ’ শুধু সিনেমা নয়, এক সমুচিত জবাব

ছবি: সংগৃহীত

১৯৫৪ সালের ৬ আগস্ট হোটেল শাহবাগে মহরত হয় বাংলা ভাষায় প্রথম সবাক সিনেমা ‘মুখ ও মুখোশ’র। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর ইস্কান্দার মির্জা মহরত উদ্বোধন করেন। এতে যারা অভিনয় করেছেন তাদেরও অভিনয়ের বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না। অনেকটা মনের সাহসে নতুন কিছু করার প্রত্যয়ে বিনা পারিশ্রমিকে অভিনয় করেন তারা। 

কারণ সংশ্লিষ্টরা চেয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সিনেমা নির্মাণ নিয়ে পশ্চিমের নেতিবাচক মন্তব্যের সমুচিত জবাব দিতে। শুটিং আরম্ভ হলে দৃশ্যধারণের পর নেগেটিভ ডেভেলপের জন্য লাহোরে পাঠানো হয়। সে সময় স্থানীয়ভাবে কোনো স্টুডিও না থাকায় বাধ্য হয়ে লাহোরের স্টুডিওর দ্বারস্থ হতে হয়। 

দীর্ঘ দুই বছর যাবত নির্মাতা জব্বার খানের নিজ হাতের অতি-যত্নের ফসল এই সিনেমা। পুড়িয়েছেন বহু কাঠখড়। কলকাতা থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আনা মরিচা ধরা একটি আইএসও ক্যামেরা ও অতি সাধারণ মানের একটি ফিলিপস টেপ রেকর্ডার দিয়ে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছিল। টেপ রেকর্ডারটি ব্যবহার করা হয়েছিল শব্দ গ্রহণের কাজে। ওইসময় ধারেকাছে কোনো ফিল্ম প্রোডাকশন স্টুডিও ছিল না। তাই এর নেগেটিভ ডেভেলপের জন্য সুদূর লাহোরে পাঠানো হয়। লাহোরের শাহনূর স্টুডিওতে ‘মুখ ও মুখোশ’-এর মুদ্রণ, পরিস্ফুটন ও সম্পাদনার কাজ সম্পন্ন হয়।

সিনেমার শুটিং শুরু হয় ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। সিদ্ধেশ্বরী, কমলাপুর বৌদ্ধ বিহারের পুকুরপাড়, মিরপুর ও তেজগাঁওয়ের জঙ্গল, বুড়িগঙ্গার ওপারে কালীগঞ্জ, তেজগাঁওয়ের জঙ্গল, জিঞ্জিরা, রাজারবাগ ও লালমাটিয়ার ধানক্ষেত এবং টঙ্গীর বিভিন্ন জায়গা হয়েছে এর শুটিং। ১৯৫৫ সালের ৩০ অক্টোবর শেষ হয় সমস্ত দৃশ্য ধারণ। 

সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালের ২৩ আগস্ট। পরিচালনা করেন জব্বার খান। 

মতান্তরে এর নির্মাণ ব্যয় ছিল তৎকালীন পাকিস্তানী মুদ্রায় ৬৪ হাজার রুপি। আবার কোনো কোনো জায়গায় বলা আছে এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৮২ হাজার রুপি। এর মধ্যে ৪২ হাজার রুপি দিয়েছিলেন চিত্রনায়ক আলমগীরের বাবা কলিম উদ্দিন আহমেদ দুদু মিয়া। বাকি ৪০ হাজার দিয়েছেন তার চার বন্ধু। মুক্তির পর সিনেমাটি প্রথম দফায় আয় করে প্রায় ৪৮ হাজার রুপির মতো।

শুরু থেকেই দেশের দর্শকমহলে সিনেমাটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। কারণ, নিজ দেশের তৈরি প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক সিনেমা, উচ্ছ্বাস ও প্রত্যাশার পারদ তুঙ্গে থাকারই কথা। 

এটি নিয়ে চরম উৎসাহের আরেকটি কারণ হলো, সেসময়ে পূর্ব পাকিস্তানে নিজস্ব কোনো সিনেমাশিল্প গড়ে উঠেনি। স্থানীয় যেসব প্রেক্ষাগৃহ ছিল, সেগুলোতে হিন্দি, উর্দু এবং কলকাতার বাংলা সিনেমা প্রদর্শিত হতো। তখন সময় সিনেমার পরিপূর্ণ বিকাশ না হওয়া এবং নানা প্রতিবন্ধকতায় নারী অভিনয়শিল্পী খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। পরিচালক চেয়েছিলেন, কোনো এক পুরুষ শিল্পীকে ধরে নারী সাজিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দেবেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা থেকে পরে সরে যেতে হয়। তাই নারী শিল্পী খোঁজার জন্য বেছে নেওয়া হয় পত্রিকার বিজ্ঞাপন। 

‘চিত্রালী’ ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জহরত আরা ও ইডেন কলেজের ছাত্রী পিয়ারী বেগম। কলকাতা থেকে এসেছিলেন পূর্ণিমা সেন গুপ্ত। পরবর্তীতে তিনিই নায়িকা কুলসুমের চরিত্র করেছেন। পিয়ারী অভিনয় করলেন নায়ক আফজালের বোন রাশিদার চরিত্রে। ডাকাত সরদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ইনাম আহমেদ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নায়ক আফজাল চরিত্রে বিনাপারিশ্রমিকে কোনও অভিনেতা রাজি না হওয়াতে পরিচালক নিজেই সে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। অসৎ পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে ছিলেন অভিনেতা আলী মনসুর। আর তার স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন জহরত আরা। অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন রফিক, নুরুল আনাম খান, সাইফুদ্দীন, বিলকিস বারী প্রমুখ। দর্শকনন্দিত এ সিনেমাটি গভীরভাবে হৃদয়ে দাগ কাটে তরুণ সমাজের। ফলে ‘মুখ ও মুখোশ’র নির্মাণ কথা যেন আপাদমস্তক এক রূপকথার গল্প।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম