হজ ও ওমরায় তাওয়াফকারীরা। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
হজ ও ওমরাহ— উভয়টিই আল্লাহর বিশেষ ইবাদত। কিন্তু ইসলামি শরিয়তে এ দুটির মর্যাদা ও বিধান এক নয়। হজ হচ্ছে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি আর ওমরাহ একটি মুস্তাহাব (অত্যন্ত প্রশংসনীয়) ইবাদত। প্রশ্ন হলো— যদি কারো ওপর হজ ফরজ হয় অথচ তিনি আগে ওমরাহ করতে যান, তবে শরিয়তের দৃষ্টিতে তার অবস্থান কী?
কুরআনের আলোকে হজ ও ওমরাহ
ওমরাহ নিঃসন্দেহে এক বরকতময় ইবাদত। কিন্তু এটি ফরজ হজের বিকল্প নয়। যার ওপর হজ ফরজ হয়েছে, তার প্রথম কর্তব্য হলো— হজ আদায় করা। তারপর সুযোগ থাকলে ওমরাহ করা। হজ ও ওমরা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন-
وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ
‘তোমরা আল্লাহর জন্য হজ ও ওমরাহ সম্পূর্ণ করো।’ (সূরা আল-বাকারা: আয়াত ১৯৬)
এই আয়াতে উভয় ইবাদতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, কিন্তু শরিয়ত হজকে করেছে ফরজ, আর ওমরাহকে করেছে সুন্নাত বা মুস্তাহাব।
হজের ফরজিয়ত সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ
হজ শুধু সফর নয়— এটি আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার সর্বোচ্চ প্রকাশ। সামর্থ্য হলে বিলম্ব নয়, দ্রুত হজ পালনই মুমিনের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ
‘মানুষের ওপর আল্লাহর হক হলো— যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বায়তুল্লাহর হজ করে। আর যে তা অস্বীকার করে, আল্লাহ তো জগতসমূহের মুখাপেক্ষী নন।’ (সূরা আলে ইমরান: আয়াত ৯৭)
এই আয়াত দিয়ে হজের ফরজিয়ত প্রমাণিত। অতএব, যার ওপর হজ ওয়াজিব হয়ে যায়, তার জন্য প্রথম কর্তব্য হলো হজ আদায় করা, ওমরাহ নয়।
বিলম্বে হজ করলে গুনাহ ও অনিশ্চয়তা
ফরজ হজ বাদ দিয়ে ওমরাহ করা– মাকরুহ (অপছন্দনীয়)। হজ ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আদায় করা উত্তম। তাই কারো ওপর হজ ফরজ হলে তা না করে ওমরাহ করা উচিত নয়। কেননা হজ ফরজ হওয়ার পর তা দ্রুত আদায় করার তাগিদ এসেছে হাদিসে। ইসলামিক স্কলাররা বিলম্বে হজ আদায়কারীদের গুনাহগার হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করে বলেছেন-
مَنْ أَرَادَ الْحَجَّ فَلْيَتَعَجَّلْ، فَإِنَّهُ قَدْ يَمْرَضُ الْمَرِيضُ، وَتَضِلُّ الضَّالَّةُ، وَتَعْرِضُ الْحَاجَةُ
‘যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছা পোষণ করে, সে যেন তাড়াতাড়ি করে; কারণ এমন হতে পারে যে, সে অসুস্থ হয়ে যাবে, পথ হারাবে বা অন্য কোনো প্রয়োজন তাকে ব্যস্ত করে দেবে।’ (ইবনে মাজাহ ২৮৮৩)
মনে রাখতে হবে
জীবন অস্থির, মৃত্যু অনিশ্চিত। আজ সামর্থ্য আছে, কাল নাও থাকতে পারে। আজ স্বাস্থ্য ভালো, কাল হয়তো হুইলচেয়ারেই বসে থাকতে হবে। তাই হজ ফরজ হলে, দেরি নয়; কিংবা এমনটিও বলা নয় যে, ‘ইনশাআল্লাহ পরের বছর যাব’— কারণ এই দেরি বিপদ ডেকে আনতে পারে।
আলেমদের মতামত
যদি আল্লাহ তাআলা কাউকে হজ করার সামর্থ্য দেন, আর তিনি যদি হজ না করে ওমরাহ করতে যান তবে এটি একটি ফরজ দায়িত্বকে পেছনে ঠেলে দেওয়া। তাই ইসলামিক স্কলাররা বলেছেন-
> হযরত ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন, ‘যার ওপর হজ করা আবশ্যক, তিনি যদি ওমরাহ করতে যান অথচ হজ করতে বিলম্ব করেন, তাহলে তিনি গুনাহগার।’ (আল-মাজমু’ ৭/১০৭)
> হযরত ইবনে কুদামা (রহ.) বলেছেন, ‘হজ ফরজ হয়ে গেলে তা বিলম্ব করা জায়েজ নয়; কেউ বিলম্ব করলে সে গুনাহ করবে।’ (আল-মুগনি ৩/২০৫)
তবে যদি কারও ওপর হজ ফরজ হওয়ার আগে ওমরাহ হয়ে যায়, তবে তাতে কোনো সমস্যা নেই বরং এটি ইবাদত হিসেবে মুস্তাহাব বা উত্তম।
পরিশেষে হজ ফরজ হলে প্রথম কর্তব্য হজ আদায় করা। ওমরাহ একটি উত্তম ইবাদত, কিন্তু এটি ফরজ হজের বিকল্প নয়। তাই ফরজ হজ বাদ রেখে ওমরাহ করা শরিয়তের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় ও গুনাহের কাজ।
