‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা ঘিরে উত্তেজনা, পুলিশের পদক্ষেপে মুসলিম সম্প্রদায়ের তীব্র প্রতিবাদ
কলকাতা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে শুরু হয়ে উন্নাও, বরেলি, কৌশাম্বী, লাখনউ ও মহারাজগঞ্জ, এমনকি উত্তরাখণ্ডের কাশীপুর ও তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা কেন্দ্র করে মুসলিম সম্প্রদায়ের আন্দোলন। বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে কানপুরের এক ধর্মীয় মিছিলে, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা হাতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা সাইনবোর্ড নিয়ে উপস্থিত হন। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
পুলিশ শুরুতে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে এবং ধর্মীয় মিছিলে প্রচলিত নিয়ম
মানার নির্দেশনা দেয়। তবে পোস্টার সরানো ও নতুন স্থানে বসানো নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ তৈরি হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের অভিযোগ, তাদের সাইনবোর্ড ছিঁড়ে ফেলা
হয়েছে; অন্যদিকে হিন্দু পক্ষও একই অভিযোগ তোলে।
এরপর ঘটনাটি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ৯ সেপ্টেম্বর কানপুর পুলিশ সাম্প্রদায়িক
সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগে ২০ জনের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে, যেখানে
অজ্ঞাত পরিচয়ের ১৫ জনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই মামলাকে কেন্দ্র করে মুসলিম সম্প্রদায়ের
মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। উন্নাওয়ে বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়; আন্দোলনকারীরা
ইট নিক্ষেপ করেন এবং মহিলা পুলিশ সদস্যদের হাত থেকে লাঠি ছিনিয়ে নেন। একই ধরনের উত্তেজনা
দেখা দেয় বরেলি, কৌশাম্বী, লখনউ ও মহারাজগঞ্জেও।
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি পুলিশের
পদক্ষেপকে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা কোনো অপরাধ
নয়। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, আমি শাস্তি নিতে প্রস্তুত।
তার মতে, পুলিশ প্ররোচনার ভিত্তিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে,
যা অনুচিত এবং সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে। ওয়াইসির এই মন্তব্য আন্দোলনে নতুন
মাত্রা যোগ করেছে।
পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, কেবল অন্য ধর্মের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগেই
মামলা হয়েছে, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা নিয়ে নয়। তবুও মুসলিম সম্প্রদায়ের
মধ্যে পুলিশের অতিসক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। মহারাজগঞ্জে নির্ধারিত বিক্ষোভের আগেই
মিছিল আটকে দেওয়া হয়; কৌশাম্বী ও লখনউয়ে বহুজনকে আটক করা হয়। কয়েকটি এলাকায় ১৪৪ ধারা
জারি করা হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সমাজবাদী পার্টির
মুখপাত্র আমিক জামাই অভিযোগ করেন, পুলিশ সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে।
তার ভাষায়, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বা ‘আই লাভ রাম’ লেখা অপরাধ নয়।
অন্যদিকে বিজেপির মুখপাত্র রাকেশ ত্রিপাঠী বলেন, আইন ভাঙলে ব্যবস্থা
নেওয়া হবে, আর পুলিশের পদক্ষেপ যথাযথ। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও প্রশাসনকে সতর্ক
থাকার নির্দেশ দেন এবং সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আন্দোলন ধর্মীয় আবেগ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়ে
দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে
পুলিশের কঠোর তৎপরতা সত্ত্বেও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ থামেনি; বরং প্রতিটি মিছিল
ও বিক্ষোভে তা আরও তীব্র হচ্ছে।
