লাইব্রেরিগুলোতে তল্লাশি অভিযান : ২৫ বই নিষিদ্ধ
এবার কাশ্মীর ইতিহাসের ওপর আক্রমণ মোদি সরকারের
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সংগৃহীত ছবি।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভারতের ইতিহাস সর্বদাই বহুমাত্রিক ও বিতর্কিত। এর মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোদি সরকারের নেতৃত্বে ভারতের শিক্ষানীতিতে যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে তা শুধু ইতিহাসের ব্যাখ্যাই নয়, এক প্রকার ‘ইতিহাস ধ্বংসে’র পরিকল্পনা। ২০২৩ সালে দেশটির দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্বলিত অধ্যায়টি সরিয়ে দেয় মোদি সরকার। আরও কয়েকটি বদল ঘটানো হয়েছে পাঠ্যবইতে। ২০২৫ সালেও চলেছে সেই একই সংস্কার। বদলে দেওয়া হয়েছে মোগলদের পরিচয়। অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে আকবরের রাজত্বকাল চিত্রিত হয়েছে ‘বর্বরতা অথচ সহনশীলতার’ প্রতিমূর্তি হিসাবে। এখানেই শেষ নয়, এবার কাশ্মীরেও সেই একই অস্ত্র মোদি সরকারের-ইতিহাসের ওপর আক্রমণ।
গত সপ্তাহে কাশ্মীর নিয়ে লেখা ২৫টি বই নিষিদ্ধ করেছে দিল্লির সরকার। নিষিদ্ধঘোষিত বইগুলোর মধ্যে বুকার পুরস্কারজয়ী ভারতীয় লেখক অরুন্ধতী রায়ের বইও রয়েছে। আল জাজিরা, বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার জম্মু ও কাশ্মীরের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৫টি বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এসব বইকে ‘সন্ত্রাসবাদকে গৌরবান্বিত’ ও ‘ভারতের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদে উসকানিমূলক’ বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এসব বইয়ের লেখকরা ভারতের, কাশ্মীরের ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব।
নিষিদ্ধ বইগুলোর মধ্যে রয়েছে-বিশিষ্ট সংবিধানবিশেষজ্ঞ এ জি নুরানির লেখা ‘দ্য কাশ্মীর ডিসপিউট ১৯৪৭-২০১২’, অরুন্ধতী রায়ের ‘আজাদি’, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমন্ত্র বসুর ‘কনটেস্টেড ল্যান্ড’ ও ‘কাশ্মীর অ্যাট দ্য ক্রসরোডস’, ক্রিস্টোফার স্নেডেনের ‘ইনডিপেনডেন্ট কাশ্মীর’, ডেভিড দেবদাসের ‘ইন সার্চ অব ফিউচার’, ভিক্টোরিয়া স্কোফিল্ডের ‘কাশ্মীর ইন কনফ্লিক্ট’, সুগত বসু ও আয়েশা জালালের ‘কাশ্মীর অ্যান্ড ফিউচার অব সাউথ এশিয়া’, জামায়াতে ইসলামী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আবুল আলা মওদুদীর লেখা ‘আল জিহাদ ফিল ইসলাম’ ও মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্নার ‘মুজাহিদ কি আজান’।
এই ২৫টি বই বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। যাদের কাছে বইগুলো পাওয়া যাবে, তাদের শাস্তি দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বইগুলো ‘অভিযোগ, ভুক্তভোগী ব্যক্তির সংস্কৃতি এবং সন্ত্রাসবাদীদের বীর বানানোর ধারা’ তৈরি করে। যা ইতিহাসকে বিকৃত করে এবং সেনাবাহিনীকে অপমান করে উগ্রপন্থা বাড়ায়।
এসব বইকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্য হুমকি বলেও উল্লেখ করা হয়। ‘দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব কাশ্মীর আফটার আর্টিকেল ৩৭০’ বইয়ের লেখক অনুরাধা ভাসিনও সরকারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘সব বই-ই গবেষণালব্ধ। একটিও সন্ত্রাসবাদকে গৌরবান্বিত করে না।’
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর বিভক্ত হয় ভারত ও পাকিস্তান। এরপর থেকে কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। দুই দেশই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারত সরকারের সিদ্ধান্তে সংবিধানের ধারা ৩৭০ প্রত্যাহার করা হয়। যা কাশ্মীরকে দিল্লির সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে রূপান্তরিত করে। এর ফলে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকাংশ অধিকার ধ্বংস হয়ে গেছে।
নিরাপত্তার নামে কাশ্মীরে বর্তমানে ৭ লাখ সেনা মোতায়েন আছে। অর্থাৎ প্রতি ১১ জন সাধারণ মানুষের জন্য সেখানে একজন সেনা। মতপ্রকাশের কিংবা স্বাধীনভাবে চলাচলের কোনো সুযোগ নেই সেখানে।
