Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

বিজেপিকে তুলোধুনো বিরোধীদের

ভারতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলন

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩৮ পিএম

ভারতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলন

ভারত সফররত আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি (ডানে), ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়মঙ্কর (বামে)। ছবি: সংগৃহীত

ভারত সফররত আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। 

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্রসহ বিরোধী রাজনীতিক ও নারী সাংবাদিকরা এ ঘটনায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

শুক্রবার নয়াদিল্লিতে আফগান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে কেবল পুরুষ সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। নারী সাংবাদিকরা উপস্থিত হলেও তাঁদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বৈষম্যের প্রতিবাদ জানালেও কোনো সাড়া মেলেনি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো নিন্দা জানায়নি। শনিবার কেবল জানানো হয়, ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন বা ব্যবস্থাপনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা ছিল না। 

তবে সাংবাদিকরা পাল্টা জানতে চান, ভূমিকা না থাকলেও বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ভারত কি আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে? আফগান সরকারের এই নীতির বিরোধিতা করেছে কি না—এ প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি।

দ্য হিন্দুর কূটনৈতিক সংবাদদাতা সুহাসিনী হায়দার এক্সে (টুইটার) লেখেন, ‘তারা ভারত সরকারের অতিথি, অথচ এ দেশে এসে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁর নারীবিদ্বেষী নীতি প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হলো। তালেবান তাদের নারীবিদ্বেষ ভারতেও টেনে আনল—এটা বাস্তববাদিতা নয়, আত্মসমর্পণ।’

সাংবাদিক স্মিতা শর্মা বিস্ময় প্রকাশ করে লেখেন, ‘মুত্তাকির সংবাদ সম্মেলনে কোনো নারী সাংবাদিককে ডাকাই হয়নি। আফগান নারীদের দুর্দশা নিয়ে জয়শঙ্করের ভাষণ বা যৌথ বিবৃতিতে একটি শব্দও নেই। অথচ তাকে লালগালিচা দিয়ে স্বাগত জানানো হলো—যে দেশে নারীর সাফল্যে গর্ব করা হয়!’

সাংবাদিক বিজেতা সিংয়ের মন্তব্য, ‘পুরুষ সাংবাদিকদের উচিত ছিল এই বৈষম্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন বর্জন করা।’ আর গীতা মোহন লিখেছেন, ‘এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিরোধী দলগুলোও সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে এক্সে লেখেন, ‘আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নারী সাংবাদিকবর্জিত সংবাদ সম্মেলন নিয়ে আপনার অবস্থান স্পষ্ট করুন। আপনার নারীনীতি কি শুধু নির্বাচনের সময় পর্যন্ত সীমিত? দেশের সবচেয়ে যোগ্য নারীদের এই অপমান কীভাবে ঘটতে দেওয়া হলো?’


তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র লেখেন, ‘নারীবর্জিত সংবাদ সম্মেলনের অনুমতি দিয়ে সরকার দেশের নারীদের সম্মানহানি ঘটিয়েছে। এটা মেরুদণ্ডহীনতার প্রকাশ।’

প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম লেখেন, ‘ভূরাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা আমি বুঝি, কিন্তু তাদের আদিম নারীবিদ্বেষী রীতি মেনে নেওয়া লজ্জাজনক। পুরুষ সাংবাদিকদেরও উচিত ছিল এই সংবাদ সম্মেলন বর্জন করা।’


কংগ্রেস মুখপাত্র শামা রহমান বলেন, ‌‘আমাদের আমন্ত্রণে এসে যদি তারা তাদের বৈষম্যমূলক নীতি প্রয়োগ করে, তবে মোদি–জয়শঙ্করের লজ্জিত হওয়া উচিত।’

নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর আফগান দূতাবাসে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে কোনো দেশের জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা হয়নি। তবে সংবাদ সম্মেলনের টেবিলে তালেবান সরকারের স্বীকৃত ছোট পতাকা রাখা হয়।

তালেবান সরকারকে ভারত এখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। তবু মুত্তাকি জানিয়েছেন, কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস পুরোপুরি চালু করার পাশাপাশি নয়াদিল্লির আফগান দূতাবাসেও নতুন কূটনীতিক নিযুক্ত করা হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম