বৈশ্বিক ব্র্যান্ড সূচকে টানা দ্বিতীয়বার সর্বনিম্নে ইসরাইল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি মূল্যায়নের সূচক নেশন ব্র্যান্ডস ইনডেক্স (এনবিআই)-এ টানা দ্বিতীয় বছরের মতো সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে ইসরাইল।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এই তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ব্র্যান্ডআইএল (BrandIL)।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত প্রায় দুই দশকের মধ্যে এটিই এনবিআই সূচকে ইসরাইলের সবচেয়ে নিচের অবস্থান। নীতিনির্ধারণী উপদেষ্টা সাইমন আনহোল্ট প্রণীত এই সূচকে দেশগুলোর বৈশ্বিক ভাবমূর্তি ছয়টি প্রধান ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করা হয়। ক্ষেত্রগুলো হলো— পর্যটন, জনগণ, সংস্কৃতি, অভিবাসন, রফতানি ও সুশাসন।
সূচকে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে জাপান, জার্মানি, কানাডা, ইতালি, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য। অন্যদিকে ইসরাইল অবস্থান করছে ভারত, কেনিয়া, রাশিয়া, ইউক্রেন ও নামিবিয়ারও নিচে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত রাষ্ট্র না হওয়ায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সূচকে ইসরাইলের চেয়েও নিচে রয়েছে।
স্কোর কমেছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ
২০২৫ সালের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় ইসরাইলের সামগ্রিক স্কোর ৬ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। বিশেষ করে রফতানি ও পণ্য বিষয়ে ধারণার ক্ষেত্রে ইসরাইল সবচেয়ে নিচের অবস্থানে রয়েছে। এর পেছনে দেশটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্য ও সেবা কিনতে ক্রেতাদের ক্রমবর্ধমান অনীহা বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। আগে যেখানে সমালোচনা মূলত ইসরাইলি সরকারের নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ ইসরাইলি নাগরিকদের প্রতিও। এই নেতিবাচক মনোভাবের সঙ্গে গাজায় চলমান যুদ্ধের সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে।
ইসরাইলি দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে, বিদেশে ইসরাইলিরা ক্রমেই ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ বা অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছেন।
গাজা ও পশ্চিম তীরে প্রাণহানি
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে ৭২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
তরুণদের মধ্যে ‘অবৈধ’ রাষ্ট্র হিসাবে ধারণা
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বজুড়ে ইসরাইল বিরোধী সমালোচনা যেমন বাড়ছে, তেমনি জেন জেড (Gen Z) প্রজন্মের মধ্যে ইসরাইলকে ‘অবৈধ’ ও ‘ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র’ হিসাবে দেখার প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি গণমাধ্যম।
এছাড়া ‘মেইড ইন ইসরাইল’ লেবেলযুক্ত পণ্য সরাসরি নেতিবাচক প্রভাবের মুখে পড়ছে, কারণ বিশ্বজুড়ে ইসরাইল বিরোধী বয়কট আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
যদিও এনবিআই সরাসরি ক্রয় আচরণ পরিমাপ করে না, তবে ব্র্যান্ডআইএল সতর্ক করেছে— এর ফলে বৈশ্বিক আস্থাহীনতা বৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস, পর্যটন খাতে ক্ষতি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরাইলের অবস্থান দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে সমর্থন সর্বনিম্ন
অক্টোবর ২০২৩-এর পর থেকে বিভিন্ন গবেষণা ও জনমত জরিপে ইসরাইলের বৈশ্বিক অবস্থান দ্রুত নিম্নমুখী হয়েছে। সাম্প্রতিক ইউগভ (YouGov) জরিপে দেখা গেছে, ২০২৫ সালে ইউরোপে ইসরাইলের প্রতি জনসমর্থন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ডেনমার্ক, স্পেন ও ইতালিতে পাঁচ ভাগের এক ভাগেরও কম মানুষ ইসরাইল সম্পর্কে ইতিবাচক মত প্রকাশ করেছেন। জরিপটি ১২ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত পরিচালিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে পিউ রিসার্চ সেন্টার-এর এপ্রিল মাসে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যায়, বর্তমানে ৫৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিক ইসরাইল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। ২০২২ সালের মার্চে, অর্থাৎ ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের হামলার আগে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ।
ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে নেতিবাচক মতামত বেশি— ৬৯ শতাংশ, যেখানে রিপাবলিকানদের মধ্যে এই হার ৩৭ শতাংশ। তবে রিপাবলিকানদের মধ্যেও ২০২২ সালের তুলনায় নেতিবাচক মত ১০ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে।
বিশ্বজুড়ে নেতিবাচক মনোভাব
পিউ-এর আরেক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ মানুষ ইসরাইল ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত ২৪টি দেশে পরিচালিত জরিপে ২০টি দেশেই ইসরাইল সম্পর্কে নেতিবাচক মতামত পাওয়া গেছে।
যদিও আরব ও মুসলিম দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই ইসরাইল বিরোধী মনোভাব বিদ্যমান, নতুন জরিপে ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়াতেও এই বিরূপতা বাড়ার চিত্র উঠে এসেছে। পশ্চিম ইউরোপ ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও ইসরাইল সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।

