ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভারত-কানাডা সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত মিলেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কানাডার কানানাসকিসে অনুষ্ঠিতব্য জি-৭ সম্মেলনে (১৫-১৭ জুন) আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। ট্রুডোর পদত্যাগের আগে দু’দেশের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছিল। সেই অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির আমন্ত্রণে মোদির এ সফরকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী
মোদি জি-৭ সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি কার্নির সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায়
আছেন বলেও জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার এক্সে দেওয়া এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী মোদি জানান,
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তিনি ফোন পেয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, উভয় দেশ
পারস্পরিক সম্মান ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে ‘নতুন উদ্যমে’ কাজ করবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি লিখেছেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির
কাছ থেকে ফোন পেয়ে আনন্দিত। তার সাম্প্রতিক নির্বাচনী জয়ে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি
এবং চলতি মাসের শেষের দিকে কানানাসকিসে অনুষ্ঠেয় জি-৭ সম্মেলনে আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ
জানাচ্ছি। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত ও কানাডা পারস্পরিক সম্মান
এবং অভিন্ন স্বার্থের দ্বারা পরিচালিত হয়ে নতুন উদ্যমে কাজ করবে। সম্মেলনে তার সঙ্গে
সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছি।
ভারত ও কানাডার মধ্যে চলমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রধানমন্ত্রী
কার্নি মোদিকে আমন্ত্রণ জানাবেন কি না তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা ছিল। এর আগে সম্মেলনের
দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হলেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি মোদিকে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি আমন্ত্রণ
পেলেন। যদি তিনি এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পেতেন, তবে ২০১৯ সালের পর এটিই প্রথম জি-৭
সম্মেলন হতো যেখানে মোদি আমন্ত্রণ পাননি।
কিছুদিন আগে ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই একটি সূত্রের বরাত
দিয়ে জানিয়েছিল, দুই দেশের বর্তমান সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এমন একটি সফরে ‘অনেক প্রস্তুতির’
প্রয়োজন। তাই আমন্ত্রণ পেলেও প্রধানমন্ত্রী হয়তো এ সম্মেলনে যোগ দিতেন না।
২০২৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পার্লামেন্টের এক
ভাষণে দাবি করেছিলেন, খালিস্তানি সন্ত্রাসী হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ‘ভারতীয় এজেন্টরা’
জড়িত ছিল। এরপরেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। তবে ভারত বারবারই
এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আবার কানাডা এমন দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। এর
পরের বছরই ভারতীয় হাইকমিশনারকে নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত
করে ভারত। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। ভারত এ নতুন অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলে
উড়িয়ে দেয় এবং ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার স্টুয়ার্ট রস হুইলারসহ ছয় কানাডীয় কর্মকর্তাকে
বহিষ্কার করে। পাশাপাশি ভারতীয় হাইকমিশনার ও কয়েকজন কূটনীতিককে দেশে ফিরিয়ে নেয়।
চলতি বছরের শুরুতে ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করলে, এপ্রিল
মাসে মার্ক কার্নি কানাডার নির্বাচনে জয়ী হন। এরপর সম্পর্কের উন্নতি নিয়ে আশা তৈরি
হয়। যদিও কার্নি ট্রুডোর লিবারেল পার্টির সদস্য, তবে তিনি ভারত-কানাডা সম্পর্ককে
‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। কার্নি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ‘পারস্পরিক
শ্রদ্ধার’ মাধ্যমে মতপার্থক্য সমাধান করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মোদিকে জি-৭ সম্মেলনে
আমন্ত্রণ কার্নির এ পদক্ষেপেরই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি কানাডায় থাকা খালিস্তানি
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য এটি একটি ধাক্কা। কারণ, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে দাবি করা
হয়, এই খালিস্তানিরাই মোদিকে আমন্ত্রণ না পাঠানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল।
