সিরিয়ার নতুন জাতীয় প্রতীক ‘সোনালি ঈগল’ কী বার্তা দিচ্ছে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৩:২৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ফলো করুন |
|
---|---|
দীর্ঘ সংঘাতের পর সিরিয়া এখন এক নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে। এই পরিবর্তনের
অংশ হিসেবে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি নতুন জাতীয় প্রতীক হিসেবে ‘সোনালি ঈগল’
উন্মোচন করেছে। এই প্রতীক শুধু একটি চিত্র নয়, বরং এটি বাশার আল-আসাদ সরকারের স্বৈরশাসন
থেকে বেরিয়ে এসে একটি নতুন, গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীন সিরিয়ার গভীর আকাঙ্ক্ষা ও মূল্যবোধকে
তুলে ধরছে।
এই সোনালি ঈগলের পেছনে লুকিয়ে আছে কোন বার্তা, আর কেনই বা এটি সিরিয়ার
ভবিষ্যৎ নির্দেশনার প্রতীক হয়ে উঠেছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল চলছে ব্যাপক
আলোচনা।
সোনালি ঈগল বহু শতাব্দী ধরে মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি, শক্তি এবং সার্বভৌমত্বের
প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই প্রতীকের মাথায় রয়েছে তিনটি তারা, যা সিরিয়ার জনগণের
মুক্তিকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরে। ঈগলের লেজের পাঁচটি পালক দেশটির পাঁচটি ভৌগোলিক অঞ্চল-উত্তর,
পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ ও কেন্দ্রকে নির্দেশ করে।
আর ডানার ১৪টি পালক প্রতিটি প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। সরকারের ভাষ্য
অনুযায়ী, এই ১৪টি পালকের প্রতিটিই বিগত ১৪ বছরের ‘বিপ্লবের প্রতিরোধের গল্প’ বহন করে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, নতুন জাতীয় পরিচয় চালুর ফলে শিগগিরই
জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ সরকারি কাগজপত্রে নতুন এই নকশা যুক্ত করা হবে।
জাতীয় এই প্রতীক উন্মোচন অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা
বলেন, ‘আজ আমরা যে পরিচয় চালু করছি, তা আমাদের ঐক্য, আবিভাজ্য এবং নতুন ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি।
সোনালি ঈগল আমাদের শক্তি, দৃঢ়তা, গতি ও উদ্ভাবনের প্রতীক।
তিনি আরও বলেন, ‘দামেস্কের ইতিহাস বিশ্ব ইতিহাসের সূচনা ও শেষের গল্প।
আমরা যে অপমানজনক সময় পার করেছি, সেটি দামেস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায়। সেই
অধ্যায় শেষ হয়েছে। আমাদের পতনের সময় পেরিয়ে গেছে, শুরু হয়েছে পুনর্জাগরণের সময়’।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সিরিয়ার অবস্থান শক্তিশালী করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার
কথাও জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শাইবানি। তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে বিশ্বের
বিভিন্ন নেতার সঙ্গে বৈঠকে সিরিয়ার নতুন পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। আর আমরা বিশ্বের কাছে
এখন আর শুধুই আশা নয়, বাস্তবতার অংশ।
আল-শাইবানি আরও বলেন, আগের সরকারের ফাঁকা স্লোগান নয়, এখন আমাদের লক্ষ্য
জনগণের সম্মান ও দেশের প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত করা।
নতুন জাতীয় পরিচয় ঘিরে রাজধানী দামেস্কসহ বিভিন্ন শহরে বর্ণাঢ্য উৎসব
অনুষ্ঠিত হয়েছে। দামেস্কের উমাইয়া স্কয়ার, বীর অজানা সৈনিকের সমাধি, ফেয়ারগ্রাউন্ড,
লাতাকিয়া, আলেপ্পো, ইদলিব, দেইর আল-জোর, হামাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আনন্দ উদ্যাপন হয়।
দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা নতুন জাতীয় প্রতীকের ঘোষণাসংক্রান্ত বার্তা পেয়েছেন,
যেখানে একে ‘স্বাধীনতার আকাশে দৃঢ়তা ও মুক্তির নবায়নকৃত প্রতীক’ হিসেবে উল্লেখ করা
হয়।
উল্লেখ্য, প্রায় ২৫ বছর সিরিয়া শাসন করার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার
আল-আসাদ গত ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ায় পালিয়ে যান। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে অন্তর্বর্তী
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন আহমেদ আল-শারা। তার নেতৃত্বে সিরিয়া নতুন রাজনৈতিক
পর্বে প্রবেশ করেছে।