বিহারের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ, ওয়াইসির দলকে জোটে নেবেন রাহুল-লালু?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ফলো করুন |
|
---|---|
ভারতের বিহার রাজ্যের রাজনীতিতে ফের নতুন সমীকরণ তৈরির জল্পনা শুরু হয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল
মুসলিমীনকে (এআইএমআইএম) মহাজোটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে
চলছে জোর আলোচনা। লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং রাহুল গান্ধীর
নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের মহাজোটের জন্য এআইএমআইএমের অন্তর্ভুক্তি একটি জটিল সিদ্ধান্ত
হতে পারে।
আসাদউদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন এআইএমআইএম জানিয়েছে, তারা বিহারে বিরোধী
মহাজোটের অংশ হয়ে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে চায়। বিহারে এআইএমআইএম সভাপতি আখতারুল
ইমান বলেছেন, তারা মানুষকে একটা ভালো বিকল্প দিতে চান। বিহারের সীমাঞ্চল এলাকায় তাদের
ভালো প্রভাব আছে। সেখানে বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে লড়লে বিজেপি ও নীতীশ কুমারের জেডিইউ
জোট হারবে।
এআইএমআইএমের বিহারের মুখপাত্র আদিল হাসান জানিয়েছেন, ইমান লালুপ্রসাদ,
কংগ্রেস, বাম নেতাদের চিঠি পাঠিয়ে জোটে যোগ দেওয়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন। ধর্মনিরপেক্ষ
ভোট ভাগ হওয়া উচিত নয়। শুধু সীমাঞ্চলই নয়, গোটা বিহারে তাদের প্রভাব রয়েছে। মানুষ বিজেপি-মুক্ত
বিহার চাইছে। বিজেপি-কে হারানো মহাজোটের মতো তাদেরও লক্ষ্য।
বিহারে এআইএমআইএমের শক্তি কতটা?
গত নির্বাচনে আরজেডি নেতা ও লালুপুত্র তেজস্বী যাদবের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার
স্বপ্নে জল ঢেলে দিয়েছিল এআইএমআইএম। সীমাঞ্চল এলাকায় ২০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে তারা
জিতেছিল পাঁচটি আসনে। বাকি অনেকগুলো আসনে তারা ভোট কেটে আরজেডির নেতৃত্বে মহাজোটকে
হারিয়ে দিতে পেরেছিল।
এই সীমাঞ্চল হলো কিষাণগঞ্জ, আরারিয়া, কাটিহার, পূর্ণিয়ার মতো জেলাগুলোকে
নিয়ে গঠিত এলাকা। যেখানে মুসলিম ভোটদাতার সংখ্যা ৩০ থেকে ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত। পূর্ণিয়াতে
৩০ শতাংশ ও কিষাণগঞ্জে ৬৭ শতাংশ। ওয়েইসির দল এই মুসলিম-প্রধান কেন্দ্রে প্রচুর ভোট
পেয়েছিল।
আরজেডি, কংগ্রেস, বামেদের শক্তি হলো মুসলিম, যাদব, অনগ্রসর ও উচ্চবর্ণের
ভোটের একাংশ। কিন্তু মুসলিম ভোট ভাগ হলে মহাজোট বিপাকে পড়তে বাধ্য। পরে অবশ্য ওয়েইসির
দলের জয়ী পাঁচ বিধায়কের মধ্যে চারজন আরজেডি-তে যোগ দিয়েছেন।
মহাজোট এই প্রস্তাব নিয়ে কতটা উৎসাহী?
আরজেডি নেতা মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি বলেছেন, এআইএমআইএম-এর টায়াক রেকর্ড হলো
ওরা বিজেপি-র বি টিম হিসাবে কাজ করে। বিজেপি-র লাভের জন্য ওরা লড়ে। বাকি সিদ্ধান্ত
তো লালুপ্রসাদ, তেজস্বী যাদব এবং জোটের নেতারা নেবেন। তবে বিহারে কোথাও ভোটের ভাগ বাটোয়ারা
হবে না। তেজস্বী-ঝড় চলছে। মহাজোট জিতবে।'
বিহারে মহাজোটের শরিক সিপিআই(এম এল) নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলে’কে
বলেছেন, আমি কোনো চিঠি এখনো পাইনি। ওরা ইচ্ছেপ্রকাশ করেছে, এখন জোটের নেতারা বসে সিদ্ধান্ত
নেবেন। তবে সাম্প্রতিক অতীতেও তো ওরা মোদি সরকারকে সমর্থন করেছে।
কংগ্রেসও একেবারেই ওয়েইসিকে জোটে নেয়ার পক্ষে নয়। কংগ্রেস নেতারাও অতীতে
বহুবার বলেছেন, ইন্ডিয়া জোটের কাছ থেকে মুসলিম ভোট কাটার অস্ত্র হিসাবে ওয়াইসির দলকে
ব্যবহার করে বিজেপি।
জোটে না নিলে ক্ষতি কতটা?
বিহারে জোটে ওয়াইসির দলকে না নিলে তিনি মুসলিম ভোটের একাংশ কাটবেন। তবে
সেটা গতবারের মতো হবে কি?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য মনে করেন, এবার বিহারে পরিবর্তনের পক্ষে জোরালো হাওয়া
ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন করছে, সেটা ভয়ংকর।
এটা নিয়েই বিরোধী দলগুলো মাথা ঘামাচ্ছে। বিরোধীদের
যাবতীয় মনোযোগ এখন ভোটার তালিকার সংশোধনের ওপর রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিদেশি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দিতে তারা
এই নিবিড় সংশোধন করছে। বুথ পর্যায়ের অফিসাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম
থাকা ব্যক্তিদের ডকুমেন্ট পরীক্ষা করে দেখবেন।
তারা যে ১০টি ডকুমেন্টের তালিকা দিয়েছেন, তার মধ্যে আধার কার্ড নেই। সেখানে
বোর্ডের পরীক্ষার সার্টিফিকেট, জাতিগত সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, ১৯৮৭ সালের আগের বাড়ি, জমি, এলআইসি, পাস বুকের
কপির মতো ডকুমেন্টের উল্লেখ আছে।
বিরোধীদের আশঙ্কা, লাখ লাখ ভোটদাতার নাম তালিকা থেকে বাদ পড়বে। বিশেষ
করে পরিযায়ী শ্রমিক ও গরিব মানুষ বাদ যাবেন। কংগ্রেস, আরজেডিসহ ১১টি বিরোধী দল বুধবার
নির্বচন কমিশনে গিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরোধিতা করে তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে
এসেছেন। বিরোধী দলগুলোও পার্টির তরফে ব্লক পায়ের কর্মীদের নিয়োগ করছে। আরজেডি প্রায়
৫০ হাজার, কংগ্রেস সাড়ে আট হাজার, বাম দলগুলি নিজেদের ক্ষমতামতো কর্মী নিয়োগ করবে।
বিজেপি ও জেডি ইউ-ও করবে।
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলে’কে বলেছেন, ভোটার তালিকার নিবিড়
সংশোধনের আবহে এআইএমআইএমের মহাজোটে যোগ দেওয়ার ইচ্ছের পিছনে একটা বার্তা দেয়ার বিষয়
আছে। এমআইএম নেতারা জানেন, তাদের মহাজোটে নেয়ার সম্ভাবনা কম। তাদের না নেওয়া হলে, তারা
মুসলিম এলাকায় প্রচার করতে পারবেন, তারা মহাজোটে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু লালু-রাহুল
তাদের নেননি। আর তারাই সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সবচেয়ে ভালো করে রক্ষা করতে পারবে। তাই
তাদের ভোট দেওয়া হোক। তাদের কথা ভোটদাতারা বিশ্বাস করলে তারা এবারও মহাজোটের ভোট কাটবে,
বিশ্বাস না করলে অতটা কাটবে না। কিন্তু তারাও রাজনৈতিক চাল চেলেছে।