স্টারলিংক নেটওয়ার্কে বৈশ্বিক বিপর্যয়, থমকে গেল ইউক্রেনের ড্রোন অভিযান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
স্পেসএক্সের উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) একটি অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারজনিত সমস্যার কারণে বৈশ্বিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ বিভিন্ন অঞ্চলের লাখো ব্যবহারকারী কয়েক ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ হারান, যা স্টারলিংকের ইতিহাসে অন্যতম বড় বিপর্যয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
৬১ হাজার ব্যবহারকারীর রিপোর্ট, আড়াই ঘণ্টার বিভ্রাট
স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা (১৯০০ জিএমটি) থেকে ব্যবহারকারীরা সংযোগ হারানোর কথা জানাতে থাকেন। প্রযুক্তি বিষয়ক বিভ্রাট ট্র্যাকার ডাউনডিটেক্টর-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৬১ হাজার ব্যবহারকারী এ সময় রিপোর্ট জমা দেন।
প্রায় ১৪০টি দেশ ও অঞ্চলে ছয় মিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে স্টারলিংকের। এই বৃহৎ বিভ্রাটের পর স্টারলিংক এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে বিষয়টি স্বীকার করে জানায়, ‘আমরা সমাধানের কাজ সক্রিয়ভাবে চালিয়ে যাচ্ছি।’
সফটওয়্যার ব্যর্থতায় মূল নেটওয়ার্কে বিঘ্ন
স্টারলিংক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল নিকলস এক্স-এ লিখেন, ‘বিভ্রাটটি ঘটেছে মূল নেটওয়ার্ক পরিচালনাকারী গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যার সেবার ব্যর্থতার কারণে।’ তিনি দুঃখ প্রকাশ করে জানান, ঘটনার মূল কারণ শনাক্ত করে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্কও এক্স-এ ক্ষমা প্রার্থনা করে লেখেন, ‘বিভ্রাটের জন্য দুঃখিত। স্পেসএক্স এর মূল কারণ চিহ্নিত করে এটি যেন আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করবে।’
ইউক্রেনের সামরিক যোগাযোগে মারাত্মক ব্যাঘাত
স্টারলিংকের এই বিপর্যয়ের প্রভাব পড়ে ইউক্রেনের সামরিক যোগাযোগেও। রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ব্যাপকভাবে স্টারলিংক টার্মিনাল ব্যবহার করছে, বিশেষ করে ড্রোন পরিচালনা ও যুদ্ধক্ষেত্রের ভিডিও রিকনেসে।
ইউক্রেনীয় ড্রোন ইউনিটের কমান্ডার রবার্ট ব্রোভদি টেলিগ্রামে জানান, ‘স্টারলিংক পুরো ফ্রন্টলাইন জুড়ে বন্ধ ছিল।’ তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই বিভ্রাট রাত ১০:৪১ থেকে শুরু হয়ে রাত ১টা ৫ মিনিট নাগাদ স্বাভাবিক হয়।
তিনি বলেন, ভিডিও ফিড ছাড়া লড়াই চলেছে, ড্রোন দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে।’ এই ঘটনার পর তিনি সতর্ক করে বলেন, এককভাবে ইন্টারনেটনির্ভর যোগাযোগব্যবস্থার উপর নির্ভরতা বিপজ্জনক, এবং বিকল্প ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ড্রোন কমান্ডার রয়টার্সকে জানান, বিভ্রাটের কারণে তাদের একাধিক অভিযান স্থগিত করতে হয়।
‘ওচি’ নামক ফ্রন্টলাইনে ব্যবহৃত একটি কেন্দ্রীয় ভিডিও ফিড সিস্টেমের প্রতিষ্ঠাতা ওলেক্সান্ডার দিমিত্রিয়েভ বলেন, ‘ইন্টারনেট সংযোগ হারালে বাস্তবিক অর্থে সামরিক অভিযান পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।’ তিনি স্থানীয়ভাবে পরিচালিত বিকল্প যোগাযোগব্যবস্থার পক্ষে মত দেন।
বিভ্রাটের কারণ: সফটওয়্যার আপডেট না সাইবার হামলা?
বিভিন্ন প্রযুক্তি বিশ্লেষক এই দুর্লভ বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যার ত্রুটি, ব্যর্থ আপডেট কিংবা সাইবার হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
কর্নেল ইউনিভার্সিটির স্পেস ও সাইবার সিকিউরিটি ল্যাবের পরিচালক গ্রেগরি ফ্যালকো বলেন, ‘আমার ধারণা এটি একটি ব্যর্থ সফটওয়্যার আপডেট, যেটি গত বছরের ক্রাউডস্ট্রাইক বিপর্যয়ের মতোই।’
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ক্রাউডস্ট্রাইকের একটি ত্রুটিপূর্ণ সফটওয়্যার আপডেট বিশ্বব্যাপী উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল, বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, এবং লক্ষাধিক ডিভাইসে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
স্টারলিংকের সামরিক সংযোগ ও রাশিয়ার ব্যবহার
স্টারলিংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিভ্রাট স্টারশিল্ড নামের সামরিক সেবা এবং অন্যান্য উপগ্রহ নির্ভর সেবায় প্রভাব ফেলেছে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। স্টারশিল্ড মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, স্টারলিংক নিজে রাশিয়ায় চালু না থাকলেও ইউক্রেন দাবি করে আসছে যে, রাশিয়ার সেনারাও যুদ্ধক্ষেত্রে স্টারলিংক ব্যবহারে সক্রিয়।
২০২২ সালে স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্ক ইউক্রেনের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে স্টারলিংক সেবা সীমিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন — এমন সময় যখন ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ দখল থেকে অঞ্চল পুনর্দখলের অভিযান চালাচ্ছিল।
সরকারি তথ্যমতে, ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ইউক্রেন ৫০ হাজারের বেশি স্টারলিংক টার্মিনাল পেয়েছে।

