Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

কার রান্না খাওয়া যাবে কার রান্না খাওয়া যাবে না

মুফতি সফিউল্লাহ

মুফতি সফিউল্লাহ

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম

কার রান্না খাওয়া যাবে কার রান্না খাওয়া যাবে না

প্রশ্ন: অমুসলিম (অন্য ধর্মাবলম্বীদের) হাতে রান্না করা খাবার মুসলমানদের জন্য খাওয়া কি শরীয়তসম্মতভাবে বৈধ?

উত্তর: ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম।  মুসলমানদের হালাল খাবারের মূলনীতি একেবারে পরিষ্কার।

 খাদ্যের উৎস এবং উপাদান হতে হবে হালাল ও পবিত্র। প্রস্তুতকারী বা রান্নাকারী ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় এখানে মুখ্য বিষয় নয়; যতক্ষণ না তিনি খাবারে কোনো হারাম বস্তু মিশ্রিত করেন।

১. সাধারণ খাবারের ক্ষেত্রে মূলনীতি

অমুসলিমদের হাতে রান্না করা সব ধরনের সাধারণ খাবার (যেমন: ভাত, রুটি, সবজি, ফল, মিষ্টি ইত্যাদি) মুসলমানদের জন্য খেতে কোনো বাধা নেই। যদি সেই খাবারের উপাদানসমূহ সবই হালাল ও পবিত্র হয়, এবং নিশ্চিতভাবে তাতে কোনো হারাম বা নাপাক বস্তু মেশানো না থাকে, তাহলে তা খাওয়া বৈধ।

এই বিধানের মূল ভিত্তি হলো উদারতা এবং পবিত্রতা। 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন: আজ তোমাদের জন্য সব পবিত্র বস্তু হালাল করা হয়েছে। আহলে কিতাবদের খাবার তোমাদের জন্য হালাল, এবং তোমাদের খাবার তাদের জন্য হালাল।  (সূরা আল-মায়িদা, ৫:৫)।

তাছাড়া নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় যে তিনি অমুসলিমদের দেওয়া দাওয়াত গ্রহণ করেছেন এবং তাদের দেওয়া উপহার (হাদিয়া) খেয়েছেন। একবার এক ইহুদি মহিলা তাকে বিষ মিশ্রিত গোশত হাদিয়া করেছিলেন, যা রাসুল (সা.) গ্রহণ করেছিলেন (যদিও পরে বিষের বিষয়টি জানা যায়)। এটি প্রমাণ করে যে, অমুসলিমদের আতিথেয়তা গ্রহণ করা জায়েজ, যতক্ষণ না খাবারে সন্দেহ জাগে।

২. মাংসের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা

মাংসের ক্ষেত্রে ইসলামে কঠোর ও স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এখানে শুধু রান্নাকারী নয়, বরং জবাইকারীর পরিচয় এবং জবাইয়ের পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জবাইয়ের শর্ত: মাংস হালাল হওয়ার জন্য পশুটিকে অবশ্যই একজন মুসলমান, অথবা আহলে কিতাব (মূল ইহুদি বা খ্রিষ্টান, যারা স্বধর্মের মৌলিক শিক্ষায় অবিচল) ব্যক্তি কর্তৃক আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে জবাই করতে হবে। 

কুরআনের নির্দেশ, তোমরা সে সমস্ত প্রাণীর মাংস খেও না, যার ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি; নিশ্চয়ই তা পাপ।  (সূরা আল-আন‘আম, ৬:১২১)।

যদি জবাই করা মাংস শরীয়তের এই শর্ত পূরণ করে (তা হালাল), তবে সেই মাংস অমুসলিম রান্না করলেও তা খাওয়া বৈধ।

কিন্তু যদি জবাইকারীর ধর্মীয় পরিচয় বা জবাইয়ের পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ থাকে, তবে সেই মাংস যেই রান্না করুক—মুসলমান হোক বা অমুসলিম—তা খাওয়া বৈধ নয় (হারাম)। 

বর্তমান প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ পশ্চিমা বা অমুসলিম দেশে জবাইয়ের শরয়ী পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না বিধায়, অমুসলিমদের জবাই করা পশুর মাংস বর্জন করাই উত্তম বা সতর্কতা।

৩. তাকওয়া ও সতর্কতা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হালাল স্পষ্ট, আর হারামও স্পষ্ট।  (সহিহ বুখারি, হাদিস- ১৯৪৬)।  ইসলাম মুসলমানদের পরিচ্ছন্নতা, সতর্কতা এবং তাকওয়ার পথে চলতে নির্দেশ দেয়।

অমুসলিমের হাতে রান্না করা হালাল খাবার খাওয়া জায়েজ হলেও, একজন মুসলমানের উচিত খাবারের উৎস ও উপাদানের ব্যাপারে সতর্ক থাকা। 

যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, রান্নায় কোনো হারাম বস্তু মিশ্রিত হয়েছে (যেমন: গোমূত্র, অ্যালকোহল বা অন্য কোনো নাপাক উপাদান), তবে তা বর্জন করা আবশ্যক।

যেখানে সন্দেহ বা অনিশ্চয়তা আছে, সেখানে পরিহার করাই আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি।

সূত্র: ফাতাওয়ায়ে সিরাজিয়া ৩২৭, তাতারখানিয়া১৮/১৬৬, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি ৫/৩৪৭

উত্তর দিয়েছেন: মুফতি সফিউল্লাহ, শিক্ষক, জামিয়া মিফতাহুল উলুম নেত্রকোনা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম