Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

মোহরানা পরিশোধ করতে অক্ষম হলে স্ত্রীর সঙ্গে থাকা যাবে?

মুফতি সফিউল্লাহ

মুফতি সফিউল্লাহ

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৪ এএম

মোহরানা পরিশোধ করতে অক্ষম হলে স্ত্রীর সঙ্গে থাকা যাবে?

স্ত্রীর মোহরানা: স্বামীর ওপর ফরজ ঋণ। মোহর পরিশোধের সময়সীমা, দাবি করার অধিকার এবং সহবাসের শরয়ী বিধান কী? ছবি: সংগৃহীত

ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে মোহরানা হলো স্ত্রীর একটি পূর্ণ অধিকার এবং স্বামীর ওপর বর্তানো একটি ফরজ ঋণ। তবে মোহরের ধরণ অনুযায়ী স্ত্রী কখন এটি দাবি করতে পারবেন এবং মোহর পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক (সহবাস) বৈধ হবে কিনা, সে বিষয়ে শরীয়তের সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলেমদের ফতোয়া ও কোরআনের নির্দেশনা নিচে তুলে ধরা হলো।

যদি মোহর এমন হয় যে, স্ত্রী যখন দাবি করবেন তখন দিতে হবে—তাহলে স্ত্রী দাবি করলে স্বামীর জন্য মোহর পরিশোধ করা ওয়াজিব।

আর যদি মোহরের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা—যেমন এক বছর বা দুই বছর—নির্ধারণ করা থাকে, তবে সেই সময় শেষ হওয়ার পর স্ত্রী মোহর দাবি করতে পারেন এবং তখন স্বামীর জন্য তা পরিশোধ করা ফরজ। তবে সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে স্ত্রী তা দাবি করার অধিকার রাখেন না।

কিন্তু যদি মোহর শুধু বিলম্বিতভাবে নির্ধারিত হয়, অথচ কোনো নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না থাকে, তাহলে এর মানে হলো—এই মোহর পরিশোধের সময় বিচ্ছেদের পর (অর্থাৎ তালাক বা স্বামীর মৃত্যু)। এই অবস্থায় স্ত্রী জীবিত দাম্পত্য জীবনে সেই মোহর দাবি করতে পারেন না।

এখন, যদি প্রথম দুই অবস্থায় স্বামী মোহর পরিশোধ না করতে পারেন— তাহলে স্ত্রীর হাতে দু’টি বিকল্প রয়েছে: যদি স্ত্রী রাজি ও সন্তুষ্ট থাকেন, তবে স্বামী-স্ত্রীর সহবাস বা দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করা জায়েজ (বৈধ)।

কিন্তু যদি স্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেন যে, মোহর না পাওয়া পর্যন্ত সম্পর্ক স্থাপন করবেন না, তাহলে শরীয়ত তাকে এই অস্বীকারের অধিকার দিয়েছে—স্বামী তাকে জোর করতে পারবেন না।

অন্যদিকে, যদি মোহর এমনভাবে নির্ধারিত থাকে যে তা কেবল বিচ্ছেদের পর প্রদানযোগ্য, তাহলে স্ত্রী সেই সময়ের আগে সম্পর্ক প্রত্যাখ্যানের অধিকার রাখেন না, এবং স্বামী-স্ত্রীর সহবাস বৈধ থাকবে।

সারকথা —মোহর স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার ও স্বামীর দায়। তাই এটিকে হালকাভাবে না নিয়ে, সামর্থ্য অনুযায়ী দ্রুত পরিশোধের চেষ্টা করা উচিত। মৃত্যুর আগে বা বিচ্ছেদের সময় পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা ঠিক নয়। এটি শুধু আর্থিক বিষয় নয়, বরং নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্বও বটে।

সূত্র: মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা 4/360; আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া ১/৩১৮; আল-মাবসুত (আস-সারাখসি)৬/১৯০; বাদায়েউস সানায়ে৫/৪৬৮;

উত্তর দিয়েছেন: মুফতি সফিউল্লাহ, শিক্ষক, জামিয়া মিফতাহুল উলুম নেত্রকোনা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম