নাগরিক নিরাপত্তার সংকট: ইসলামের আলোকে কারণ ও প্রতিকার
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আজকের সমাজে অপরাধ যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, হত্যা— এ যেন সংবাদপত্রের নিত্য খবর।
প্রশ্ন হলো— কেন এমন হচ্ছে? রাষ্ট্র, পরিবার, সমাজ— কোথায় ভাঙন ধরেছে? উত্তর পাওয়া যায় কুরআন ও হাদিসে, যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে: নৈতিক অবক্ষয় ও আল্লাহভীতির অভাবই সমাজ ধ্বংসের মূল কারণ।
আল্লাহভীতি হারানোর পরিণতি
আল্লাহ তাআলা বলেন—যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ করে দেবেন।”(সুরা আত-তালাক, ৬৫:২)
মানুষ যখন আল্লাহভীতি হারায়, তখন অন্যায়কে অন্যায় মনে হয় না। আজ মানুষ জ্ঞান অর্জন করছে, কিন্তু বিবেক হারাচ্ছে। দ্বীনি শিক্ষা থেকে দূরে গিয়ে কেবল দুনিয়াবি সাফল্যের পেছনে দৌড়াচ্ছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— যখন আমানত হারিয়ে যাবে, তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১৩৫)
আজ সেই আমানত— দায়িত্ব, সততা, ন্যায়বোধ— সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, যার ফলেই নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে।
অবিচার ও বৈষম্য: চুরি ও ডাকাতির মূল শেকড়
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—যাতে ওই সম্পদ কেবল ধনীদের মধ্যেই ঘুরে না বেড়ায়।-(সুরা আল-হাশর :৭)
যখন সমাজে জাকাত, সদকা ও ন্যায়বিচার অনুপস্থিত থাকে, তখন ধনীরা আরও ধনী হয় আর গরিবেরা অপরাধের পথে যায়। ইসলাম অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে জাকাতকে ফরজ করেছে, কিন্তু যখন মানুষ তা অবহেলা করে, তখন সমাজে অন্যায়ের আগুন জ্বলে ওঠে।
লজ্জাশীলতা বিলুপ্ত: ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের কারণ
ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন কোনো একক অপরাধ নয়, এটি সমাজের নৈতিক দেউলিয়াত্বের ফল। ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সুরক্ষা।
আল্লাহ তাআলা বলেন—মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে এবং নিজেদের পবিত্র রাখে; আর নারীদেরও বলো, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে। (সুরা আন-নূর, ২৪:৩০–৩১)
আর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—যখন লজ্জা হারিয়ে ফেলবে, তখন যা খুশি তাই করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৪৮৩)
অতএব, লজ্জাশীলতা ও পর্দার বিধান অবহেলা করলে সমাজে অনৈতিকতা ছড়িয়ে পড়বে— যা আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি।
হত্যা ও সহিংসতা: ঈমানহীনতার পরিণতি
আজ মানুষ তুচ্ছ কারণে খুন করছে, প্রতিশোধ নিচ্ছে, ক্ষমতার লোভে জীবন নিচ্ছে। অথচ কুরআনে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেছেন- যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে একটি প্রাণ হত্যা করে, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল। (সুরা আল-মায়িদা :৩২)
ইসলামী সমাজে হত্যার শাস্তি ছিল কঠোর, যাতে অপরাধী ভয় পায়। কিন্তু আজ শাস্তি বিলম্বিত ও বিচার দুর্বল, তাই হত্যাও বেড়ে চলছে।
কুরআনভিত্তিক সমাজ গঠনই একমাত্র সমাধান
আল্লাহ বলেন—নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের পরিবর্তন করে। (সুরা আর-রা’দ :১১)
অপরাধ দমন শুধু আইন প্রয়োগে সম্ভব নয়। প্রয়োজন নৈতিক বিপ্লব— পরিবারে কুরআনের শিক্ষা, সমাজে ন্যায়বিচার, রাষ্ট্রে আল্লাহভীতি প্রতিষ্ঠা। যখন প্রতিটি মানুষ নিজের ঈমান জাগ্রত করবে, তখনই নিরাপত্তা ফিরে আসবে।
পরিশেষে বলতে চাই, কুরআনের আলোয় শান্ত সমাজ চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, হত্যা— এসবের মূল কারণ আল্লাহভীতির অভাব ও আত্মিক শূন্যতা। কুরআন ও হাদিস আমাদের শেখায়, নিরাপত্তা তখনই সম্ভব, যখন সমাজ আল্লাহর নির্দেশ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-র আদর্শে ফিরে আসে। তাই এখনই প্রয়োজন কুরআনভিত্তিক নৈতিক পুনর্জাগরণ— যাতে নাগরিক নিরাপত্তা নয়, পুরো জাতিই শান্তি ও ন্যায়ের পথে ফিরে আসে ইনশাআল্লাহ।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
