Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

‘অনলাইন জুয়া’ খেলার বিষয়ে ইসলাম কী বলে?

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪৩ পিএম

‘অনলাইন জুয়া’ খেলার বিষয়ে ইসলাম কী বলে?

কুরআনে মদ ও জুয়াকে শয়তানের কর্ম এবং নাপাক বস্তু হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ফাইল ছবি

ইসলামে সব ধরনের জুয়া—অফলাইন কিংবা অনলাইন—হারাম এবং নিষিদ্ধ। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, যে কোনো ধরনের জুয়া, খেলায় কিংবা কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করা আল্লাহর আদেশের বিরোধী এবং শয়তানের কর্ম বলে গণ্য করা হয়। 

অনলাইন কিংবা অফলাইন, উভয় ক্ষেত্রেই জুয়ার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থও হারাম। সেই অর্থ কোনোভাবেই গ্রহণ করা, খাওয়া, বা ব্যবহার করা যাবে না। 

যদি এমন অর্থ কোনোভাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তবে সেই অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া উচিত তার মূল মালিকের কাছে অথবা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া তা দান করে দিতে হবে।

জুয়া সম্পর্কে কুরআনের নিষেধাজ্ঞা

কুরআনে মদ ও জুয়াকে শয়তানের কর্ম এবং নাপাক বস্তু হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মদ ও জুয়া থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, শয়তান এগুলোর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায় এবং নামাজ ও আল্লাহর স্মরণ থেকে তাদের বাধাগ্রস্ত করতে চায়।  

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন-

"يٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡهُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ اِنَّمَا یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّوۡقِعَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَ الۡبَغۡضَآءَ فِی الۡخَمۡرِ وَ الۡمَیۡسِرِ وَ یَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ عَنِ الصَّلٰوۃِ فَهَلۡ اَنۡتُمۡ مُّنۡتَهُوۡنَ"

‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী এবং ভাগ্যনির্ধারণী তীরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায় এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বাধা দিতে চায়। তোমরা কি বিরত হবে না?’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ৯০-৯১)

হাদিসে জুয়ার নিষেধাজ্ঞা

হাদিসেও জুয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।  হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

مَنْ حَلَفَ فَقَالَ فِيْ حَلِفِهِ وَاللَّاتِ وَالْعُزَّى فَلْيَقُلْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَمَنْ قَالَ لِصَاحِبِهِ تَعَالَ أُقَامِرْكَ فَلْيَتَصَدَّقْ

‘তোমাদের কেউ যদি বলে লাত-উজ্জার শপথ, সে যেন সঙ্গে সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। কেউ যদি অন্যকে প্রস্তাব দেয়, এসো, আমরা জুয়া খেলি, সে যেন (জরিমানাস্বরূপ) দান-সদকা করে।’ (বুখারি ৪৮৬০, মুসলিম ১৬৪৭)

এছাড়া হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنَّانٌ وَلَا عَاقٌّ وَلَا مُدْمِنُ خَمْرٍ

‘বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, অবৈধভাবে খোঁটা দানকারী এবং সর্বদা মদপানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (নাসাঈ ৫৬৭২)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

إِنَّ اللَّـهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ وَالْكُبَّةَ وَكَانَ يَقُولُ فِيهِمَا لَا تَحِلُّوا فَإِنَّهُ حَرَّمَ هَذِهِ الْمَجْمَعَةَ

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মদ, জুয়া এবং কুবা (এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র) হারাম করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৬২৫)

সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিতে জুয়া (অফলাইন বা অনলাইন) উভয়টি হারাম কাজ এবং এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থও হারাম। এই উপার্জিত অর্থ গ্রহণ, খাওয়া বা কোনো কাজে ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য। ইসলামে কোনো ধরনের জুয়া অংশগ্রহণ বা প্রচার নিষিদ্ধ এবং মুসলিমদের এটি থেকে সাবধান থাকতে বলা হয়েছে। ইসলামের শিক্ষার আলোকে, মুসলিমদের উচিত জুয়া থেকে দূরে থাকা এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলা, যাতে তারা সত্যিকার শান্তি ও সফলতা লাভ করতে পারে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম