Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

যেসব বিশ্বাসে মুমিন পৌঁছে যাবে প্রকৃত শান্তির ঠিকানায়

Icon

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৭ পিএম

যেসব বিশ্বাসে মুমিন পৌঁছে যাবে প্রকৃত শান্তির ঠিকানায়

ছবি: সংগৃহীত

দুনিয়া ও পরকালে শান্তি ও মুক্তি প্রত্যাশা করে না— এমন মানুষ নেই। শুধু মুমিন মুসলমানই নয়, বরং সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষই চায় চূড়ান্ত সফলতা ও নিরাপত্তা; কিন্তু সেই শান্তি ও মুক্তির প্রকৃত উপায় কী? কোনো মৌলিক বিশ্বাস ছাড়া সত্যিকারের মুক্তি সম্ভব নয়? কোনো ভিত্তিমূলেই দাঁড়িয়ে আছে ইসলামের চেতনভিত্তিক জীবন ব্যবস্থা?

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বারবার সফলতার উপাদান ও ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসসমূহ তুলে ধরেছেন। এর প্রতিটিই মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের পথনির্দেশ। আল্লাহ বলেন—

الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ -  وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِکَ ۚ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ -  اُولٰٓئِکَ عَلٰی هُدًی مِّنۡ رَّبِّهِمۡ ٭ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

‘যারা না দেখা (অদৃশ্য) বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুজি (জীবিকা) দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে। এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু আপনার (রাসুল) প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা আপনার পূর্ববর্তীদের (নবি-রাসুলদের) প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখিরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা বাক্বারা: আয়াত ৩-৫)

এই আয়াতগুলোতে যেমন সফলতার নির্দেশ এসেছে, তেমনি ইসলামের মৌলিক কিছু বিশ্বাসও স্পষ্ট করা হয়েছে। দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তি পেতে হলে এগুলোর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও অনুশীলন জরুরি। যে মৌলিক বিশ্বাসগুলো দুনিয়া–আখিরাতের মুক্তি এনে দেবে, তাহলো- 

১. অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস (ইমান বিল গায়েব)

পাঁচ ইন্দ্রিয় বা বুদ্ধিবৃত্তির বাইরে যে বাস্তবতা রয়েছে—যেমন আল্লাহ, রিসালাত, জান্নাত, জাহান্নাম, পরকাল—এসবের প্রতি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে নিশ্চিত সংবাদ পাওয়ায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা। এটাই ইমানের প্রথম ভিত্তি।

২. নামাজ প্রতিষ্ঠা

ইমানের পর ইসলামের সর্বোচ্চ ইবাদত হচ্ছে নামাজ। যথাযথভাবে নামাজ আদায় করলেই দুনিয়া ও পরকালের সফলতা সুনিশ্চিত। হাদিসের ঘোষণা হলো- পরকালে সর্ব প্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। সঠিকভাবে নামাজ আদায় করলে পরবর্তী হিসাব সহজ হবে। নম্রতা, বিনয়, খুশু-খুজু ও শরিয়তের নিয়ম মেনে নামাজ প্রতিষ্ঠা করাই প্রকৃত সফলতা।

৩. আল্লাহর পথে ব্যয় (দান–সদকা ও জাকাত)

দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণের অন্যতম মাধ্যম হলো আল্লাহর পথে ব্যয় করা—গোপনে বা প্রকাশ্যে। চাই সে অধিক সম্পদের অধিকারী হোক কিংবা কম সম্পদের অধিকারী হোক। আল্লাহর দেওয়া জীবিকা থেকে অল্প হলেও দান করা। যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, তার জন্য জাকাত (২.৫%) ফরজ। এই আয়াতে ফরজ জাকাতসহ প্রতিটি নফল দান–সদকায় উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

৪. কুরআনের প্রতি অকাট্য বিশ্বাস

কুরআন মুসলমানের জীবনপথের আলোকধারা। এ গ্রন্থের প্রতিটি বিধান, প্রতিটি শিক্ষা বিশ্বাস করা এবং তা অক্ষরে অক্ষরে মানার নামই ইমান। আংশিক মানা–আংশিক অমান্য করা ঈমানের পরিপন্থী। তবে সে সফলতা পাবে না। সুতরাং কুরআনের প্রতি বিশ্বাসই মানুষকে দুনিয়া ও পরকালে সফলতার চূড়ান্ত শাখায় উন্নীত করে দেবে।

৫. পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবসমূহে বিশ্বাস

তাওরাত, যাবুর, ইনজিল—এসব আসমানি কিতাব ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। কুরআন নাজিলের পর সেসবের বিধান রহিত হলেও, এগুলো যে আসমানি গ্রন্থ ছিল—এ বিশ্বাস রাখা ইমানের অন্যতম অংশ এবং সফলতার মূলমন্ত্র।

৬. পরকালের প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস

দুনিয়ার পর যে অনন্ত জীবন রয়েছে— যেখানে রয়েছে হিসাব-নিকাশ, পুরস্কার ও শাস্তি— এ বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করা ইমানের প্রধান শাখা। এই বিশ্বাসই মানুষকে সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করে এবং পাপ থেকে ফিরিয়ে রাখে। আর তা দুনিয়া ও পরকালে সফলতার অন্যতম উপায়।

ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভ

ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস বা পাঁচটি স্তম্ভ কী? যেগুলোর প্রতি সর্বাগ্রে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য। শুধু বিশ্বাসই নয়—এসবের প্রতি মৌখিক স্বীকৃতি, অন্তরের পূর্ণ আস্থা এবং কর্মে বাস্তবায়ন—এই তিনটিই একজন পরিপূর্ণ ইমানদারের জন্য আবশ্যক। ইসলামের এই পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির কথা হাদিসে পাকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মৌলিক বিশ্বাসের সারাংশ নবীজি (সা.) এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন—

হযরত আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ বিন ওমর বিন খাত্তাব (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি রাখা হয়েছে। (তাই) এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে-

১. আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল—এ সাক্ষ্য দেওয়া।

২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা।

৩. জাকাত প্রদান করা।

৪. সামর্থ্য থাকলে হজ পালন করা।

৫. রমজানের রোজা রাখা। (বুখারি ও মুসলিম)

এগুলো কেবল বিশ্বাস নয়; অন্তরের দৃঢ় আস্থা, মুখের স্বীকৃতি এবং কর্মে বাস্তবায়ন—সব মিলেই গঠিত হয় পরিপূর্ণ ইমান।

শেষকথা- যারা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা চায়, তাদের অবশ্যই ইসলামের এই মৌলিক বিশ্বাস ও কোরআনের নির্দেশাবলি অনুসরণ করতে হবে। তাদের জন্য মহান আল্লাহ এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—

اُولٰٓئِکَ عَلٰی هُدًی مِّنۡ رَّبِّهِمْ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

‘তারাই তাদের প্রতিপালকের পথনির্দেশে রয়েছে; তারাই সফলকাম।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ৫)

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম