Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

রাসুলের (সা.) নির্দেশে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় যে মসজিদ

আরাফাত বিন শাহ আলম

আরাফাত বিন শাহ আলম

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৮ এএম

রাসুলের (সা.) নির্দেশে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় যে মসজিদ

খাজরাজ গোত্রের আবু আমির, জাহেলি যুগে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে বৈরাগ্য জীবনযাপন শুরু করে। রাসুল (সা.) মদিনায় আসার আগে সে ছিল মদিনাবাসীর কাছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র।

রাসুল (সা.) তাকে সত্য দ্বীনের দাওয়াত দিলে সে দাওয়াত কবুল না করে রাসুলের (সা.) প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। বদর থেকে হুনাইন পর্যন্ত প্রতিটি যুদ্ধে সে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। 

হুনাইন যুদ্ধে ইসলামের বিজয় হলে সে সিরিয়ায় চলে যায়। কিন্তু সেখানেও তার ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। সিরিয়া থেকে সে মদিনার মুনাফিকদের কাছে চিঠি লেখে যে, সে রোম সম্রাটের সঙ্গে মদিনায় আক্রমণ করার এবং মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে। এ পরিকল্পনা সফল করার জন্য তোমাদেরও কাজ করতে হবে। তোমরা নিজেদের প্রস্তুত করো, সংগঠিত হও, যাতে আক্রমণ করলে তোমরা মদিনার ভেতর থেকে সহযোগিতা করতে পারো।

আরো পরামর্শ দেয় যে, তোমরা মসজিদ নামে একটি ভবন তৈরি কর। মুসলমানরা মনে করবে সেটা মসজিদ। কিন্তু আসলে তা হবে আমাদের মিশন বাস্তবায়নের কার্যালয়। 

গোপনে সেখানে অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করবে, পরিকল্পনা করবে এবং আমার পক্ষ থেকে কেউ মদিনায় গেলে তাকে সেখানেই আশ্রয় দেবে।

তার এমন পরামর্শে মুনাফিকরা মদিনার কুবা এলাকার কাছে তথাকথিত একটি মসজিদ তৈরি করে।

তারা রাসুলের (সা.) কাছে আবেদন করে যে, আমাদের মধ্যে অনেক বয়স্ক ও দূর্বল লোক আছে, যারা মসজিদে কুবায় গিয়ে নামাজ পড়তে পারে না। তাদের সুবিধার জন্য আমরা এই মসজিদ নির্মাণ করেছি। আপনি কোন এক সময় এই মসজিদে নামাজ আদায় করলে আমরা বরকত লাভ করবো।

তখন রাসুল (সা.) তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাই তিনি বললেন যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর ইচ্ছায় আমি সেখানে নামাজ পড়ব।

কিন্তু তাবুক থেকে ফেরার পথে রাসুল (সা.) যখন মদিনার কাছাকাছি ‘যূ আওয়ান’ নামক স্থানে পৌছলেন, তখন এই আয়াত নাযিল হলো:

 এবং (কিছু লোক এমন), যারা মসজিদ নির্মাণ করেছে (মুসলিমদের) ক্ষতিসাধন করা, কুফরী কথাবার্তা বলা, মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং পূর্ব থেকে আল্লাহ ও তার রাসূলের সঙ্গে যে ব্যক্তি যুদ্ধ করেছে, তার জন্য একটি ঘাঁটির ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে। তারা অবশ্যই কসম করবে যে, আমরা সদুদ্দেশ্যেই এটা করেছি। কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, নিশ্চয়ই তারা মিথ্যুক। (তাওবা ১০৭)

রাসুলকে (সা.) মসজিদে জিরারে নামাজ পড়তে নিষেধ করা হল। তিনি তৎক্ষণাৎ মালিক ইবনে দুখশুম ও মা’ন ইবনে আদি (রা.) এই দুই সাহাবিকে সেই মসজিদ নামের  ঘাঁটিটি ধ্বংস করার জন্য পাঠিয়ে দিলেন। সুতরাং তারা গিয়ে সেটি জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিলেন।

তাফসিরুল মুনিরে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মালিক বিন দুখশুম, মাআন বিন আদি, আমের বিন সাকান ও ওহশিকে ডেকে এই মসজিদ জ্বালিয়ে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে তারা সেটি জ্বালিয়ে দেন এবং ধ্বংস করে ফেলেন। 

অবিশ্বাসের বিস্তার ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ব্যক্তিদের ঘাঁটি হিসেবে এ মসজিদ বানানো হয়েছিল। সেখানে তারা লোক দেখানো নামাজ পড়ত আর অশান্তি সৃষ্টি এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে বহিঃশত্রুর আক্রমণের সুযোগ তৈরিসহ নানা রকম ষড়যন্ত্র করত।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম