যেসব কুসংস্কারের প্রভাব ঈমান পর্যন্ত গড়ায়
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৪ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমাদের সমাজে এখনও বহু ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে, যা শুধু মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক জগৎকেই অন্ধকারাচ্ছন্ন করে না, বরং ঈমান-আকিদাকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।
কখনো কখনো এই কুসংস্কার মানুষকে কুফর ও শিরকের মতো ভয়াবহ গুনাহের দিকে ঠেলে দেয়। অথচ ইসলাম এসব অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল ঘোষণা করেছে।
ভবিষ্যৎ জানার চেষ্টা
আমাদের সমাজে অনেকেই হাতের রেখা দেখে কিংবা রাশি গণনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। কেউ কেউ গণকের কাছে গিয়ে অদৃশ্য কোনো খবর জানার চেষ্টা করে এবং তাতে বিশ্বাসও স্থাপন করে। অথচ ইসলামে এসব কিছুই হারাম এবং ঈমান নষ্ট করে দেয়।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন— যে ব্যক্তি গণকের কাছে গিয়ে কোনো গায়েবি বিষয়ে প্রশ্ন করে, তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল করা হয় না। (সহিহ মুসলিম-৫৭১৪)
এছাড়া আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন— বলে দাও, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানে না। এবং তারা জানে না কখন পুনরুত্থিত হবে। (সুরা আন-নামল-৬৫)
পেঁচা, শনিবার-মঙ্গলবার, এবং অশুভ লক্ষণ
আজও সমাজে একটি প্রচলিত কুসংস্কার হলো— ঘরের আঙিনায় পেঁচা দেখা গেলে বা পেঁচার ডাক শোনা গেলে সেটাকে অশুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অনেকে মনে করেন, এটি কোনো অমঙ্গল বা বিপদের ইঙ্গিত বহন করে। আবার কেউ কেউ শনিবার বা মঙ্গলবারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করা থেকে বিরত থাকেন, এসব কিছুকেই ইসলাম ভিত্তিহীন ও গর্হিত কাজ বলে ঘোষণা করেছে।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন— রোগে সংক্রমণ নেই, শুভ-অশুভ লক্ষণ বলে কিছু নেই, পেঁচায় অশুভ কিছু নেই এবং সফর মাসে কোনো অকল্যাণ নেই।
(সহিহ বুখারি-৫৭৫৭)
অর্থাৎ, এইসব কুসংস্কারের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই; এগুলো নিছক অন্ধবিশ্বাস। পশু-পাখির ডাক প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে হয়— তাদের ডাক কোনো অশুভ ইঙ্গিত নয়।
রোগ সংক্রমণ
আরেকটি ভ্রান্ত বিশ্বাস হলো— রোগ নিজে নিজেই সংক্রমিত হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কোনো রোগ আল্লাহর হুকুম ছাড়া এক শরীর থেকে আরেক শরীরে যেতে পারে না। এটি বিশ্বাস করা একজন মুমিনের জন্য অপরিহার্য।
একজন প্রকৃত মুসলমানের বিশ্বাস হওয়া উচিত, জীবনের সকল ভালো-মন্দ তাকদীর অনুযায়ী সংঘটিত হয়। আর তাকদীর আল্লাহর নির্ধারিত বিধান।
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন- বলে দাও, আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন, তা ছাড়া অন্য কোনো কষ্ট আমাদের স্পর্শ করতে পারে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর মুমিনদের উচিত শুধু আল্লাহর ওপরই ভরসা করা। (সুরা তাওবা-৫১)
কসম করে শিরক
অনেক সময় মানুষ তার সন্তান, ব্যবসা কিংবা অন্য কিছু নিয়ে শপথ করে, যা কখনো কখনো শিরকের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এটি একটি মারাত্মক গোনাহ। ইসলামে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করা সম্পূর্ণ হারাম।
সাইদ বিন আবু উবাইদা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) এক ব্যক্তিকে এভাবে শপথ করতে শুনলেন, “না! এ কা‘বার শপথ।” তখন ইবনু উমার (রা.) তাকে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করে, সে শিরক করলো।(আবু দাউদ, হাদিস: ৩২৫১)
ইসলাম মানুষকে মুক্তচিন্তা ও প্রকৃত সত্যের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের শিক্ষা দেয়। ইসলাম কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা এবং গায়েবের বিষয়ে অন্ধবিশ্বাসকে ঘৃণা করে। এসব থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের উচিত আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে জীবন পরিচালনা করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক ইসলামী বিশ্বাস ও জীবনাচারে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।



