Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

পরকালে ভাই-বোনের দেখা হবে না— এ কথা কি সঠিক?

Icon

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম

পরকালে ভাই-বোনের দেখা হবে না— এ কথা কি সঠিক?

ছবি: সংগৃহীত

সব ধর্মের মানুষই বিশ্বাস করেন যে— ‘মৃত্যু’ সুনিশ্চিত। কিন্তু সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, মৃত্যুর পর আর ভাই-বোনের দেখা হবে না। অনেকে এ কথাটিকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসও করে থাকেন। এ কথা কি সঠিক? কুরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে কোনো দিকনির্দেশনা আছে কি?

কুরআনের দৃষ্টিতে এ কথাটি ভুল, ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই। বরং কুরআনুল কারিমের বর্ণনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, পরকালে ভাই-বোনের সাক্ষাৎ হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ভাই-বোনের পৃথক হওয়ার কথা তুলে ধরে এর প্রমাণ দিয়েছেন এভাবে—

فَاِذَا جَآءَتِ الصَّآخَّۃُ یَوۡمَ یَفِرُّ الۡمَرۡءُ مِنۡ اَخِیۡهِ

‘অতঃপর যখন বিকট আওয়াজ আসবে, সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাইয়ের কাছ থেকে।’ (সুরা আবাসা: আয়াত ৩৩-৩৪)

এই আয়াতই প্রমাণ করে মৃত্যুর পর ভাই-বোনের দেখা হবে। কাজেই যারা বলেন- মৃত্যুর পর ভাই-বোনের দেখা হবে না, তাদের কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। কেননা এমন কথা কুরআন-সুন্নাহর কোথাও নেই। এটা একান্ত কারো মনগড়া বাক্য।

এ ব্যাপারে কুরআন-হাদিসের একাধিক দৃষ্টান্ত আছে; তাহলো—

১. یُّبَصَّرُوۡنَهُمۡ ؕ یَوَدُّ الۡمُجۡرِمُ لَوۡ یَفۡتَدِیۡ مِنۡ عَذَابِ یَوۡمِئِذٍۭ بِبَنِیۡهِ

‘(যদিও) তাদেরকে একে অপরের দৃষ্টির সামনে রাখা হবে। অপরাধী সেই দিনে শাস্তির বদলে দিতে চাইবে নিজ সন্তান-সন্ততিকে।’ (সুরা মাআরিজ: আয়াত ১১)

তাফসিরকারদের মতে—মানুষ পরকালে সন্তান-সন্ততি, আত্মীয় ও পরিচিতদের চিনবে কিন্তু ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে সাহায্য করতে পারবে না। সবাই নিজের নিজের চিন্তায় থাকবে। তাই চেনা-পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও একে অপরকে জিজ্ঞাসা করবে না। (আহসানুল বায়ান)

২. وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ اتَّبَعَتۡهُمۡ ذُرِّیَّتُهُمۡ بِاِیۡمَانٍ اَلۡحَقۡنَا بِهِمۡ ذُرِّیَّتَهُمۡ وَ مَاۤ اَلَتۡنٰهُمۡ مِّنۡ عَمَلِهِمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ ؕ كُلُّ امۡرِیًٴۢ بِمَا كَسَبَ رَهِیۡنٌ

‘যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান সন্ততিরা ঈমানের সঙ্গে পিতামাতাকে অনুসরণ করে, আমি তাদের সঙ্গে তাদের সন্তান সন্ততিকে মিলিত করব। তাদের ‘আমালের কোনো কিছু থেকেই আমি তাদেরকে বঞ্চিত করব না। প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়বদ্ধ।’ (সুরা তুর: আয়াত ২১)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে— বাপ ও বেটাদেরকে পরস্পর মিলিত করবেন। যাতে তাদের চক্ষু শীতল হয়। তবে শর্ত হল যে, উভয়েই যেন ঈমানদার হয়।

হাদিসের নির্দেশনা থেকে জানা যায়, জান্নাতে মুমিনরা একে অপরকে চিনবে, সাক্ষাৎ করবে এবং কথা বলবে। এখন ভাই-বোন যদি জান্নাতি হয় তবে অবশ্যই তাদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ ঘটবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ لَيَتَزَاوَرُونَ فِيهَا

‘নিশ্চয়ই জান্নাতের বাসিন্দারা সেখানে একে অপরের কাছে যাতায়াত করবে (সাক্ষাৎ করবে)।’ (মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ يَتَرَاءَيُونَ أَهْلَ الْغُرَفِ مِنْ فَوْقِهِمْ كَمَا يَتَرَاءَيُونَ الْكَوْكَبَ الدُّرِّيَّ الْغَابِرَ فِي الأُفُقِ مِنَ الْمَشْرِقِ أَوِ الْمَغْرِبِ

‘অবশ্যই জান্নাতবাসী তাদের উপরের বালাখানার অধিবাসীদের এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জল দীপ্তমান তারকা দেখতে পাও।’ (বুখারি ৩০২৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

يَتَحَدَّثُ أَهْلُ الْجَنَّةِ بَيْنَهُمْ…

‘জান্নাতিরা নিজেদের মাঝে আলোচনা করবে…’ (মুসনাদে আহমাদ)

তাবারানি, আল-মুজাম আল-কাবিরের এক বর্ণনায় এসেছে—

‘জান্নাতিরা একে অপরকে স্মরণ করবে’—এমন বর্ণনাও পাওয়া যায়।

সুতরাং ভাই-বোন যদি জান্নাতি হন তবে পরকালে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ হবে, এতে কোনো সন্দেহ। বরং এটি ইমানের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম