Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

কুরআন অনুধাবন সবচেয়ে জরুরি ইবাদত

Icon

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কুরআন অনুধাবন সবচেয়ে জরুরি ইবাদত

কুরআন অনুধাবন করা মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক। আল্লাহ প্রশ্ন করে বলেন, ‘তবে কি তারা কুরআন অনুধাবন করে না, নাকি তাদের অন্তরগুলো তালাবদ্ধ?’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২৪)। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কুরআন নিয়ে চিন্তা করলে মানুষ এর উপদেশ, আদেশ-নিষেধ ও পারস্পরিক সত্যায়ন উপলব্ধি করতে পারত। ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে না, যে চিন্তা করে না এবং যে অনুযায়ী আমল করে না, তিনজনই কুরআন পরিত্যাগকারীর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কুরআন নিয়ে গবেষণা মানেই শুধু বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণ নয়; বরং ইমান, ইখলাছ ও আমলের মানসিকতা নিয়ে কুরআন অনুধাবন করাই হলো প্রকৃত তাদাব্বুর। আল্লাহ এমন লোকদের সমালোচনা করেছেন, যারা মনোযোগ ছাড়া কুরআন শোনে এবং উপকৃত হয় না (মুহাম্মাদ ৪৭/১৬)।

কুরআন অনুধাবনের ক্ষেত্রে প্রথম প্রয়োজন আরবি ভাষার জ্ঞান। কারণ কুরআন আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে। ইমাম শাফেঈ (রহ.) ও ইবনে তায়মিয়াহ (রহ.) আরবি ভাষা জানাকে ফরজ হিসাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে বর্তমান সময়ে যেহেতু নির্ভরযোগ্য অনুবাদ ও তাফসির বিদ্যমান, তাই আরবি না জানা মুসলমানও কুরআন বোঝার চেষ্টা করতে পারে। তবুও সাধ্যানুযায়ী আরবি শেখার চেষ্টা করা অপরিহার্য, কারণ অনুবাদ কখনোই কুরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য ও গভীরতা পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারে না। আরবি জানা থাকলেও কুরআনের সব আয়াত শুধু ভাষাগত জ্ঞান দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। এজন্য সহিহ হাদিস, সাহাবায়ে কেরামের ব্যাখ্যা এবং বিশুদ্ধ তাফসিরের আশ্রয় নিতে হয়। কুরআন বুঝতে হবে রাসূল (সা.) ও সাহাবাদের বুঝ অনুযায়ী; মনগড়া ব্যাখ্যা বিপথগামিতার কারণ হতে পারে। বিশেষত আল্লাহর সিফাতসংক্রান্ত আয়াতে সতর্কতা আবশ্যক।

কুরআন অনুধাবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো গভীর মনোযোগ। আল্লাহ বলেন, ‘যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং নীরব থাকো’ (আ’রাফ ৭/২০৪)। মনোযোগী তিলাওয়াত ও শ্রবণই কুরআনের আলো গ্রহণের পথ খুলে দেয়। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) বলেন, চিন্তাভাবনা করে একটি আয়াত তিলাওয়াত করা, না বুঝে পুরো কুরআন খতম করার চেয়ে উত্তম। সালাফে সালেহীন কুরআনের প্রতি আমলকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, তারা দশটি আয়াত শেখার পর সেগুলোর অর্থ ও আমল না করা পর্যন্ত পরবর্তী আয়াতে অগ্রসর হতেন না। আজ কুরআন হেফজ সহজ হলেও তার ওপর আমল কঠিন হয়ে পড়েছে।

কুরআনে আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি জগতের নিদর্শন, জান্নাত-জাহান্নাম, ইতিহাস, গায়েবি সংবাদ ও জীবন পরিচালনার বিধান বর্ণনা করেছেন, যাতে মানুষ চিন্তা করে ইমান সুদৃঢ় করে। এ কিতাব মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ বার্তা। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, পূর্ববর্তী লোকরা কুরআনকে আল্লাহর বিশেষ বার্তা হিসাবে গ্রহণ করতেন রাতে চিন্তা করতেন, দিনে তার বাস্তবতা অন্বেষণ করতেন। ইমাম শা’বী (রহ.) বলেন, কুরআন তিলাওয়াতের সময় আয়াত অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত জিকিরের আয়াতে জিকির, জাহান্নামের আয়াতে পানাহ চাওয়া এবং জান্নাতের আয়াতে জান্নাত কামনা করা। এভাবেই কুরআন অন্তরকে জীবিত করে।

লেখক : গবেষক ও ইসলামি চিন্তাবিদ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম