আল্লাহর কাছে ‘তিনটি জিনিসই হোক’ মুমিনের চাওয়া
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মানুষ প্রতিদিন কত কিছুই না চায়—আরাম, স্বাচ্ছন্দ্য, সাফল্য; কিন্তু তিনটি চাওয়া এমন আছে, যা না পেলে সব পাওয়াই অর্থহীন হয়ে যায়। আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে ভিক্ষুকের মতো হলেও এমন তিনটি দান আছে- যেগুলো চাওয়া কখনো বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ এই তিনটি দানই দুনিয়ার পথকে আলোকিত করে এবং আখেরাতের দরজা খুলে দেয়। কী সেই তিন চাওয়া?
আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চেয়ে হলেও এই তিনটি জিনিস চেয়ে নেবেন—
১. হেদায়েত!
২. একজন সৎ চরিত্রের এবং দ্বীনদ্বার জীবনসঙ্গী!
৩. একটি উত্তম মৃত্যু!
হেদায়েত— সঠিক পথের আলো
হেদায়েত ছাড়া মানুষ পথহারা। জ্ঞান থাকলেও হেদায়েত না থাকলে সে জ্ঞান উপকারে আসে না। তাই কুরআনের প্রথম দোয়াটিই হলো হেদায়েতের দোয়া।
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
‘আমাদের সরল পথের হেদায়েত দান করুন।’ (সুরা আল-ফাতিহা: আয়াত ৬)
হেদায়েত মানে শুধু সঠিক জানা নয়, বরং সঠিক পথে অবিচল থাকার তাওফিক পাওয়া। এটি আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও বারবার এভাবে হেদায়েতের জন্য দোয়া করতেন—
اللَّهُمَّ اهْدِنِي وَسَدِّدْنِي وَاذْكُرْ بِالْهُدَى
‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হেদায়াত দান কর, আমাকে সরল পথে পরিচালিত কর।’ (মুসলিম ৬৬৬৩)
সৎ চরিত্র ও দ্বীনদার জীবনসঙ্গী
জীবনসঙ্গী শুধু দুনিয়ার সঙ্গী নয়; সে আখিরাতের পথচলারও সহযাত্রী। সৎ ও দ্বীনদার জীবনসঙ্গী আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় নেয়ামত। আল্লাহর কাছে তার শেখানো ভাষায় সৎ ও দ্বীনদার জীবনসঙ্গী এভাবে কামনা করা—
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
‘হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আমাদের চোখের শীতলতা বানিয়ে দিন।’ (সুরা আল-ফুরকান: আয়াত ৭৪)
সৌন্দর্য, সম্পদ ক্ষণস্থায়ী—কিন্তু দ্বীনদার চরিত্র সংসার ও আখেরাত দুটোই রক্ষা করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টভাবে দ্বীনদার জীবনসঙ্গীর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন—
تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ
‘নারীকে তার অর্থ, আভিজাত্য, রূপ-সৌন্দর্য ও দ্বীন-ধর্ম দেখে বিবাহ করা হয়; কিন্তু তুমি দ্বীনদারকে পেয়ে কৃতকার্য হও। তোমার হস্ত ধূলিধুসরিত হোক।’ (বুখারি ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, মিশকাতুল মাসাবিহ ৩০৮২)
উত্তম মৃত্যু— ইমানের শেষ পরীক্ষা
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হলো মৃত্যু। উত্তম মৃত্যু মানে ইমানের সঙ্গে পৃথিবী ছাড়ার সৌভাগ্য। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
‘হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যথাযথভাবে, এবং মুসলমান ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১০২)
উত্তম মৃত্যু হঠাৎ আসে না; এটি আসে সৎ আমল, তাওবা ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের ধারাবাহিকতায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শেখান, মানুষ যেভাবে জীবনযাপন করে, সেভাবেই তার মৃত্যু আসে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالْخَوَاتِيمِ
‘নিশ্চয়ই আমলের ভালো-মন্দ নির্ভর করে তার শেষ অবস্থার ওপর।’ (বুখারি ৬৬০৭)
শেষ পর্যন্ত মানুষ যা নিয়ে যায়, তা তার সম্পদ নয়— নিয়ে যায় তার হেদায়েত, তার চরিত্র, আর তার মৃত্যুর অবস্থা। তাই আসুন, দুনিয়ার চাওয়ার ভিড়ে হারিয়ে না গিয়ে আল্লাহর কাছে এই তিনটি দানই সবচেয়ে বেশি চাই— হেদায়েত, দ্বীনদার জীবনসঙ্গী এবং উত্তম মৃত্যু। আল্লাহ যেন আমাদের এই প্রার্থনাগুলো কবুল করেন। আমিন।

