Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

সৃষ্টির সেবায় স্রষ্টার সন্তুষ্টি

Icon

মাহমুদ আহমদ

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০৭:১১ এএম

সৃষ্টির সেবায় স্রষ্টার সন্তুষ্টি

ছবি: সংগৃহীত

একদিকে বিশ্বময় মহামারী করোনাভাইরাস অপর দিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে শীতের তীব্রতা। এতে করে সাধারণ খেটে খাওয়া এবং দরিদ্র মানুষ পড়েছে বড়ই বিপাকে। 

গরীব ও খেটে খাওয়া মানুষদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি সমস্যা শীত নিবারণ এবং জীবন ধারণের। করোনা আর এই শীতকালে আমাদের সময় এসেছে মানব সেবার। 

নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী খেটে খাওয়া এবং অসহায়দের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য। 

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, মানুষ হিসেবে আল্লাহপাকের কাছে সবাই সমান। কার ধর্ম কী তা পরের বিষয়, কেননা সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার ভুক্ত। 

কেউ বিপদে পড়লে আরেকজন তাকে উদ্ধার করবে এটাই ধর্মের শিক্ষা। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের প্রতি এমনকি অপরাপর জীবজন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শন করাই হচ্ছে ধর্ম। 

হাদিসে এসেছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড় দেবেন। 

যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি)।

মানব সেবার মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রুষা করোনি।’ 

বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা কীভাবে আমি আপনার শুশ্রুষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কী জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কী জান না, যদি তুমি তার শুশ্রুষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে।’ 

আল্লাহতায়ালা বলবেন ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি?’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব! আপনি হলেন বিশ্ব পালনকর্তা, আপনাকে আমি কীভাবে আহার করাব?’ 

তিনি বলবেন, ‘তুমি কী জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে তবে আজ তা প্রাপ্ত হতে?’ 

আল্লাহতায়ালা বলবেন ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু! আপনি তো রাব্বুল আলামীন, আপনাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ 
তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ (মুসলিম)

তাই আমরা যদি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই তাহলে আমাদেরকে বান্দার অধিকার আদায় করতে হবে। আমরা কিন্তু সহজেই বিভিন্নভাবে বান্দার হক আদায় করতে পারি। 

যেমন ডাক্তার তার সেবা দ্বারা, বক্তা তার বক্তৃতার মাধ্যমে, লেখক তার লেখার মাধ্যমে, বিত্তশালীরা তার সম্পদ দ্বারা, বুদ্ধিমান তার বুদ্ধির দ্বারা, জ্ঞানী তার জ্ঞান দ্বারা, স্বাস্থ্যবান তার শক্তির দ্বারা সমাজের সেবা করতে পারে। 

একজন ডাক্তার সহজেই পারেন চিকিৎসার মাধ্যমে জনসেবা করতে আর এর ফলে তার বিদ্যা কমে যাবে না বরং তার বৃদ্ধি ঘটবে, প্রদীপ্ত হয়ে উঠবে। তেমনি একজন সম্পদশালীও পারেন অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা করতে। 

কারো শরীরের কোন অঙ্গ যদি আঘাত পায় বা দুর্বল হয়ে পড়ে তবে সে কী আনন্দ পায়? বরং কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক। 

সমাজের এক অংশ ক্ষুধার্ত, ব্যাধিগ্রস্থ, বস্ত্রহীন এবং শীতার্ত অবস্থায় থাকলে অপর অংশ তাদের সাহায্যার্থে মন থেকে সাহায্য করবে। তবেই না সুষ্ঠু ও বলিষ্ঠ জাতি গড়ে উঠবে। 

আত্মতুষ্টির জন্যও সৃষ্টি সেবার প্রয়োজন রয়েছে। খেটে খাওয়া এবং শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময় এখনই। আমার আশপাশের প্রতিবেশির দিকে আমাকে অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রত্যেক ব্যক্তি যদি তার দায়িত্বের প্রতি সজাগ থাকে তবেই সৃষ্টি সেবার মহান এক সংঘ গড়ে উঠবে। 

অপরের প্রতি অনুকম্পা, সহানুভূতি, উদারতা ও দয়া প্রদর্শন করা আজ আমাদের মৌলিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। দয়া হতে দানশিলতার সৃষ্টি হয়। দানশিলতা ও সেবা করা মানবচরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য আর নির্দয় ব্যক্তি পাষানবৎ। 

অপরের অশ্রু দর্শনে যার হৃদয় বিগলিত হয় না, সে জনসেবার দাবি করতে পারে বটে, কিন্তু কার্যত: কোনো উপকারই করতে পারে না। 

দুঃখির দুঃখমোচন, বিপন্নকে উদ্ধার, শোকাতুরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা সৃষ্টি সেবার অন্তর্ভুক্ত। 

তাই আসুন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী মানব সেবায় রত হই।

 

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট 
masumon83@yahoo.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম