Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

তাকওয়া ও ঐক্যের আসল কথা

Icon

শায়লা সিমি

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ০১:২২ পিএম

তাকওয়া ও ঐক্যের আসল কথা

সবাই ইবাদতের ক্ষেত্রে ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে কিছু রীতিনীতি মেনে চলে। অথচ তার মধ্যে মূল আদর্শ ও চেতনা অনেক ক্ষেত্রেই ভঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। তাকওয়া, আল্লাহর ভালোবাসা, ন্যায়বিচার, সততা এসব দৃঢ় হওয়ার তাগিদে আমরা হজ পালন করি; সালাত আদায় করি।

অথচ সালাত আদায়ে ক্ষেত্রে পোশাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখি কিন্তু আত্মার পরিচ্ছন্নতাও তো অপরিহার্য। সবার মধ্যে ঐকমত্য বজায় রাখার নিয়মগুলো আল্লাহর তরফ থেকে নবী করিম (সা.) বর্ণনা করে গেছেন এবং নিজ জীবনে তা প্রতিষ্ঠা করেও গেছেন।

যেমন ধরুন- ভিন্ন দিনে ঈদের চাঁদ দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে, তাতে করে আমরা ভিন্ন দিনেই ঈদের নামাজ পালন করি। এতে করে কোনো বিভক্তি আজ পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি। কারণ চাঁদ দেখে ঈদের দিন ধার্য করা বিষয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই আল্লাহর নির্দেশে এ নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে।

নবী করিম হজরত মোহাম্মদ (সা.) প্রায়ই রাতে দ্বিপ্রহরের পরে অর্থাৎ শেষ রাতে তাহাজ্জতের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে জাগ্রত হতেন। উঠে ওজু করতেন এরপর সর্বপ্রথম তিনি এ দোয়াটি পড়তেন যাতে ঐক্যের বিষয়ে বলা হয়েছে- "হে আল্লাহ, তুমি জিব্রাইল (আ.), মিকাইল (আ.) এবং ইস্রাফিল (আ.) ফেরেশতাদের প্রতিপালক। আসমান-জমিনের সৃষ্টিকর্তা, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যের তুমি জ্ঞাতা, তোমার বান্দাদিগের মতানৈক্যের বিষয়সুমূহের তুমি মীমাংসাকর্তা হে পরোয়ারদিগার। তোমার যে সত্য পথ আমি বিস্মৃত হচ্ছি, সেই সত্যপথে আমাকে পরিচালিত করো। নিশ্চয়ই তোমার যাকে ইচ্ছা (তুমি তাকে) সত্যপথে পরিচালিত করছ।" 

উম্মাতের ঐক্যের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে- ১ আল্লাহর নির্দেশ; সরাসরি তার থেকে বর্ণিত অর্থাৎ কোরআন মাজিদ, ২ রাসূলে করিম (সা.) থেকে বর্ণিত জীবনবিধান, ৩ যারা সুফী ও আউলিয়ার সান্নিধ্য পেয়েছেন তাদের শিক্ষাকে সম্মানের সঙ্গে মেনে চলা; কারণ তারা আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ।

মহাপুরুষের সংস্পর্শে এসে মানুষ বুঝতে পারে যে, মহাপুরুষ হতে চাইলে নফসের আশা- আকাঙ্ক্ষা এবং সংসারের মোহ-মায়া ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু তারা অনায়াসে সেরূপ মনোভাব অর্জন করতে পারবে না ভাবিয়া ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মুসলমান হতে পারে না (দ্র. কোরান দর্শনঃসদর উদ্দিন আহমদ চিশতী)।

আল্লাহপাক কিছু মানুষ বা আত্মাকে এমনভাবে আলোকিত করেছে যে, তারা জীবনবোধের নির্যাস ও মূলতত্ত্ব এমনভাবে বোঝেন, যা বর্ণনাতীত এবং যে কেউ এভাবে গভীরে ইসলাম বা জীবনবিধানকে বোঝেন না। এমনকি আল্লাহর তত্ত্বের নিগূঢ় সত্যসমূহ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো পক্ষেই বোঝা সম্ভব না।

এ কারণে পবিত্র কোরআন পাঠের ক্ষেত্রে বারবার দুরুদ শরিফ পড়ার কথা উল্লেখ করা হয়, যাতে করে আপনি যতখানি পবিত্র কোরআনের পাঠোদ্ধার করবেন আল্লাহর হুকুমে পবিত্র কোরআন যেন আপনাকেও আল্লাহর আদেশ-নির্দেশ বুঝতে সাহায্য করে।

যেমন পবিত্র কোরআনে আলিফ-লাম-মিম যে তিনটি বর্ণ আছে; অথচ এর অর্থ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা ছিল না কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি যে, "আলিফ" অর্থ আমি বা স্বয়ং, "লাম" অক্ষরে বুঝায় লা অবস্থা বা নাই অবস্থা, লাম এর ওপর বড় মদ থাকার কারণে অসীমভাবে বা অবিরামভাবে না বুঝায়। বড় মদসহ মিম অক্ষরে বুঝায় অনন্ত মোহাম্মদ। সুতরাং ব্যক্তিসত্তার আমিত্ত্ব অসীমভাবে লয়প্রাপ্ত হলে সেই সত্তা মোহাম্মদে পরিণত হয় এবং অসীমত্ব লাভ করে।

অথবা আলিফ লাম মিম শব্দ ৩টির আলিফ ও লাম দিয়ে হয় আল এবং মিম দিয়ে হয় মোহাম্মদ। আল অর্থ বংশধর, মিম অর্থ মোহাম্মদ। আল ও মিম-এর ওপর বড় মদ থাকার কারণে বোঝায় অনন্ত মোহাম্মদের অনন্ত বংশধর। মিম-এর ওপর তাশদিদ থাকার কারণে বোঝায় মোহাম্মদের পুনঃপুনঃ বিকাশ।

এরূপে মোহাম্মদ হয়েছেন তাঁহার আল তথা বংশধরের মাধ্যমে সর্বজনীন ও সর্বকালীন। এর জন্যই রাসুলাল্লাহ (সা.) বলেন, আদি, অন্ত, মধ্যে সর্বকালেই মোহাম্মদরূপে আমরা বিরিজিত আছি (কোরআন দর্শন- সদর উদ্দিন আহমেদ চিশতী)।

পবিত্র কোরআনে করণীয় প্রসঙ্গে এবং যা পরিত্যাগ করা প্রয়োজন তা সম্পর্কেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সালাত আদায়ের কারণগুলো জানলে বোঝা সহজ। যেমন নামাজের আগে ওজু আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে সাহায্য করে, বিনয়ের সঙ্গে আচরণের কথা মনে করিয়ে দেয়, ঐক্যের সঙ্গে জামায়েত হওয়ার  বিষয়ও মনে করে দেয়।

শায়লা সিমি, ভাস্কর, শিল্পী ও মরমী কবি।

এবাদত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম