Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

রমজানে ক্ষুধা ও অবসাদ নিয়ন্ত্রণের ৭ উপায়

Icon

ফরহাদ খান নাঈম

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০৭:৫৭ এএম

রমজানে ক্ষুধা ও অবসাদ নিয়ন্ত্রণের ৭ উপায়

রমজানে আমরা সাধারণত দুটি কারণে শারীরিকভাবে কষ্ট পেয়ে থাকি। প্রথমটি হচ্ছে ক্ষুধা, আর দ্বিতীয়টি অবসাদ। তবে এই দুটি যেন আমাদের রমজানের বরকত হাসিল করা ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমাদের দায়িত্বসমূহ পালন করা থেকে বাধা না দেয়- সত্যিকারের মুসলমান হিসেবে আমাদের এ বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। 

সাধারণত পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে পুরো রমজানজুড়ে অনেকে দিনের বেলা ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভোগেন। তা ছাড়া স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণে ব্যত্যয় ঘটলেও ক্ষুধার অনুভূতি বেড়ে যায়। 

তবে রমজানে পরিমিত পরিমাণে ক্ষুধা লাগা স্বাভাবিক। সে সময় ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর কাছে এর জন্য পুরস্কারের দোয়া করা উচিত। 

আমাদের নবীজিকেও (সা.) অনেক সময় প্রচণ্ড ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভুগতে হয়েছে। তবে সে সময় তিনি ধৈর্য হারা হননি, কারও কাছে এ বিষয়ে অভিযোগও করেননি। 

বুখারির বর্ণনায় এসেছে, সাহাবি জাবির (রা.) বলেন, ‘খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননকালে একটি বড় ও শক্ত পাথর সামনে পড়ে। যা ভাঙ্গা অসম্ভব হয়। রাসুলকে (সা.) বিষয়টি জানানো হলে তিনি এসে তাতে কোদাল দিয়ে আঘাত করলেন, যাতে তা ভেঙে চূর্ণ হয়ে বালুর স্তূপের ন্যায় হয়ে গেল, যা হাতে ধরা যায় না। অথচ ওই সময় ক্ষুধার্ত রাসুল (সা.)-এর পেটে পাথর বাঁধা ছিল। আমরাও তিনদিন যাবৎ অভুক্ত ছিলাম।’

আরেক বর্ণনায় এসেছে, সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মুহাম্মাদ (সা.) ও তার পরিবার তার ইনতিকাল পর্যন্ত একনাগাড়ে তিনদিন পরিতৃপ্তির সঙ্গে আহার করতে পারেননি।

উপরোক্ত হাদিস থেকে বোঝা যায়, তীব্র ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভুগলেও নবীজি (সা.) তার নিজ দায়িত্ব থেকে সরে আসেননি; বরং ধৈর্যসহকারে ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করে নিজের দায়বদ্ধতা পূরণ করেছেন। তাই আমাদেরও রমজানে দিনেরবেলা সাময়িক ক্ষুধার যন্ত্রণা বরণ করে নিতে হবে এবং বেশি বেশি সৎ কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে এ মাসের বরকত হাসিল করার চেষ্টা করতে হবে। 

তবে রমজানে ক্ষুধা ও অবসাদ নিয়ন্ত্রণ করার কিছু ব্যবহারিক নিয়ম রয়েছে। এখানে এরকম সাতটি নিয়ম উল্লেখ করা হলো -

১. পর্যাপ্ত ঘুম

খুব বেশি ঘুম এবং খুব কম ঘুম দুটোই শরীরে অবসাদ আনয়ন করে। রমজানকে কেন্দ্র করে কার্যকরী ঘুমের রুটিন তৈরি করে নিতে হবে। গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষ কত সময় ঘুমায়- এর চেয়ে কত ভালোভাবে ঘুমায়, তা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। 

তারাবি নামাজের পর অযথা সময় নষ্ট না করে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে হবে; যাতে করে সেহরির সময় সতেজভাবে জাগ্রত হওয়া যায়। জোহরের পর সামান্য সময় ঘুমিয়ে নেয়াও এক্ষেত্রে ভালো কাজ দেয়।

২. শরীরচর্চা

ক্ষুধার অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রেখে শরীরে সতেজভাব নিয়ে আসার ক্ষেত্রে শরীরচর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরচর্চার মাধ্যমে আমরা ঘনঘন গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করি। ফলে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ এনার্জি উৎপন্ন হয়। 
অনেকে মনে করেন, কষ্টসাধ্য ব্যায়ামকেই কেবল শরীরচর্চা বলা হয়। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। সামান্য হাঁটাহাঁটি করাও শরীরচর্চার অন্তর্ভুক্ত। সেহরি শেষ করার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে দিনের বাকিটা সময় শরীরে সক্রিয়তা ও বল পাওয়া যায়। 

৩. ক্ষুধা ও অবসাদগ্রস্ততা থেকে মনোযোগ সরিয়ে রাখা

মানুষের মন একটি বিস্ময়কর যন্ত্র। এটি চাইলে সবকিছু উপেক্ষা করে মানুষকে সারাদিন একটি বিষয় নিয়ে ব্যস্ত রাখতে পারে। একই পরিবেশে কেউ গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারে, আবার কেউ কোলাহল ও আওয়াজের কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। এ সবই মনের কারসাজি। 

ক্ষুধা ও অবসাদের ক্ষেত্রেও একই কথা। চাইলেই আমরা ক্ষুধা ও অবসাদগ্রস্ততা থেকে মনোযোগ সরিয়ে রেখে এ দুটির অনুভূতি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারি।

৪. রমজানের সময়সূচি অনুযায়ী দৈনন্দিন কার্যক্রমের রুটিন সাজিয়ে নেয়া এবং ব্যস্ত থাকা 

রমজানে আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমের রুটিনে কিছুটা পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনের আলোকে নিজের সারাদিনের কর্মসূচি সাজিয়ে নিতে হবে। অলস সময় পার না করে অর্থবহ কোনো কাজ করার মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখা যায়। ইবাদত করা ও পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটানোর মাধ্যমে ক্ষুধা ও অবসাদের অনুভূতি থেকে নিজের মানসিকতা সরিয়ে রাখা যায়। 

আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ঘরের কাজকর্মে অংশগ্রহণ করা। এতে করে একদিকে যেমন ব্যস্ত থাকা যাবে, অন্যদিকে বিপুল সওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে।

৫. অধিক পরিমাণে পানি পান করা 

ইফতারের পর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। চা কিংবা কফির জায়গায় পানিকে নিয়ে আসতে হবে। কারণ পানির মাধ্যমে শরীরের শিরা-উপশিরা সিক্ত হয় এবং মন সতেজ থাকে।

৬. সচেতনভাবে পানাহার করা

যে কোনো খাবার গ্রহণের পূর্বে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, এই খাবার শরীরের জন্য কতখানি উপকারী। সাহরি ও ইফতারে এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে, যা শরীরের এনার্জি লেভেল ধরে রাখতে সাহায্য করে। খাবারের প্রতিটি কণা চিবিয়ে খেতে হবে। ঘুমের ঠিক আগমুহূর্তে খাওয়া যাবে না। খাদ্যের মধ্যে চিনি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

৭. কখনোই সেহরি মিস না করা

সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজা রাখার শক্তি অর্জিত হয়। সেহরি না খেয়ে রোজা রাখলে রোজাদার ব্যক্তি ক্লান্ত হয়ে পড়বে।
 
এ প্রসঙ্গে নবিজি (সা.) বলেন, তোমরা সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে দিনে রোজা রাখার শক্তি অর্জন করো আর দিনে হালকা ঘুমের মাধ্যমে রাত জেগে ইবাদত করার শক্তি অর্জন করো।

রমজান ক্ষুধা অবসাদ নিয়ন্ত্রণ উপায়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম