Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

মুমিনের পরিচয়

Icon

মওলবি আশরাফ

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:১৮ পিএম

মুমিনের পরিচয়

মুমিন তাকে বলা হয় যিনি আল্লাহ তায়ালাকে একইসঙ্গে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন আবার সবচেয়ে বেশি ভয় পান। একজন মুমিনের ধ্যান-জ্ঞান ইচ্ছা-অভিলাষ সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হবেন এক আল্লাহ। আল্লাহর নির্দেশনাবলী সে এমনভাবে মান্য করবে যেন এটাই তার অভ্যাস—আল্লাহর চাওয়াই তার চাওয়া, আল্লাহকে পাওয়াই তার পাওয়া।

কোনো মানুষ যদি এমন অবস্থানে যেতে পারে, তখন আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও সে ভিন্ন এক মানুষ হয়ে যাবে। তার অন্তরের অন্তস্থলে আপনাআপনিই মানুষের প্রতি মহব্বত ও ইনসাফের মনোভাব তৈরি হবে। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু। (সুরা তওবা, আয়াত ৭১) আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, হৃদ্যতা ও কোমলতায় মুমিনের উদহারণ হলো একটি দেহের মতো। যখন তার একটি অঙ্গে ব্যথা হয়, তখন তার সারা শরীর বিনিদ্রা ও জ্বরাক্রান্ত হয়ে দুঃখে সমান অংশীদার হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস ১০/ ৪৩৮)

একজন মুমিন আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে সবসময় উত্তম আচরণ করবে। সবসময় পরোপকারের বাসনা তার মনে জীয়ন্ত থাকবে। তার কোনো ভুলত্রুটি যদি অন্য কোনো মুমিন ভাই দেখিয়ে দেয়, বিনাদ্বিধায় গ্রহণ করে সংশোধনে সচেষ্ট হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন: এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ এবং এক মুমিন অপর মুমিনের ভাই। (সুনানে আবু দাউদ ৫/৩২০)

মুমিন হবে ‘রব্বানি’ মানুষ। এক মুমিন কখনোই অপর মুমিনের প্রতি অন্যায়-অবিচার করবে না। এবং কেউ যদি অন্যায়-অবিচার করে, মুমিনের প্রতি দায়িত্ব তার ভাইকে মুক্ত করে ইনসাফ কায়েম করা। 

হাদিসে আছে—এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে কখনো তার উপর জুলুম করে না, এবং জালিমের হাতে তাকে ছেড়ে দেয় না। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৫/৯৭) 

অন্য হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, তোমার ভাইকে সাহায্য করো; চাই সে জালেম হোক অথবা মাজলুম। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল (সা.), মজলুমকে সাহায্য করার বিষয়টি বুঝলাম, কিন্তু জালেমকে কীভাবে সাহায্য করব? তিনি বললেন, তার হাত শক্ত করে চেপে ধরো। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৫/৯৮)

মুমিন যখন কথা বলবে, খুবই নরম আওয়াজে বলবে। গিবত ও পরনিন্দা করবে না। গালি দিবে না। কাউকে ছোট করে কথা বলবে না। কখনো কাউকে কথা বা কাজে আহত করবে না। আল্লাহর রসুল বলেন, প্রকৃত মুসলমান সে যার হাত ও জবান থেকে অন্যান্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস ১/৫৩) 

মুমিনের জবান কেবল অন্য মুমিন নয়, অবিশ্বাসীদের গালমন্দ করা থেকেও নিরাপদ থাকবে। এমনকি অবিশ্বাসী যদি কটুকথা বলে, তখন তাকে ‘সালাম’ দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে।

আল্লাহ অসন্তুষ্ট যেন না হন মুমিনের হৃদয়ে সবসময় সেই ভয় থাকবে— এই ভয়ের উৎস ভালোবাসা থেকেই। এই কারণে কখনো আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করবে না। 

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘মুমিন তো তারাই, যাদের অন্তরসমূহ প্রকম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের সামনে আল্লাহর কালাম পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে; এবং যারা কেবলমাত্র তাদের প্রতিপালকের ওপরই ভরসা করে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত ২)

মুমিন সবসময় মনে রাখবে আল্লাহ তার পর্যবেক্ষণে আছেন। সবসময় সবকাজে কিয়ামত দিবসের মালিকের সামনে জবাবদিহি করতে হবে—এই চিন্তা রাখবে। এবং আল্লাহ তাআলা তাকে যেই নেয়ামত দিয়েছেন, তার শুকুরগুজার হবে।

আল্লাহ আমাদের সত্যিকারের মুমিন হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন  

মুমিন পরিচয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম