অহংকারে ধ্বংস হয়েছে আদ জাতি
আরবদেশের বর্তমান ওমান অঞ্চলে এক জাতির বসবাস ছিল, কুরআনে যাদের বলা হয়েছে ‘প্রথম আদ’। তাদের এক-একজনের শরীর ছিল বিশাল, আর ছিল দানবীয় শক্তি। তারা পাথর দিয়ে বড় বড় অট্টালিকা তৈরি করেছিল।
ধন-সম্পদের কোনো কমতি ছিল না, স্থাপত্যশিল্প ও জ্ঞান-বিজ্ঞানেও অনেক এগিয়ে ছিল। কিন্তু একটা জিনিসের অভাব ছিল, তা হলো ভারসাম্যবোধ। জ্ঞান ও সম্পদ মানুষকে অহংকারী করে তোলে, আর ঈমান ভারসাম্যবোধ তৈরি করে সেসবের সঠিক এস্তেমাল শেখায়।
আদ জাতি আল্লাহকে বিশ্বাস করত না, তাদের ঈমান ছিল না, তারা ছিল মূর্তিপূজারী। আর এটাই তাদের হঠকারী বানিয়ে তোলে, তারা অযথা দম্ভ করে বলত, ‘আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী আর কে আছে?’ (সুরা হা-মিম সাজদা, আয়াত ১৫)
কিন্তু আল্লাহ, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
আল্লাহ তাআলা তাদের মাঝে হজরত হুদকে (আ.) পাঠান। তিনি তাদেরকে বলেন—‘হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর এবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নাই। তোমরা কি আল্লাহকে ভয় করবে না?’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত ৬৫)
কিন্তু তারা এই নির্দেশনা মানতে অস্বীকার করে। তার কওমের কাফের নেতারা বলল, আমরা তো দেখতেই পাচ্ছি তুমি একজন বোকা, এবং তোমাকে মিথ্যাবাদীও মনে করি।
হুদ (আ.) বললেন, হে আমার জাতি, আমার মাঝে কোনো বোকামি নাই, আমি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালকের বার্তাবাহক। আদ জাতি তার কথা কানে নিল না। নুহ নবীর (আ.) প্রতি তার জাতি যেসব অভিযোগ হেনেছিল, আদ জাতিও হুদ নবীর (আ.) প্রতি একই রকম অভিযোগ হানে। তাকে নানাভাবে কষ্ট দেয়, তবু ধৈর্য ধরে দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যান।
হজরত হুদ (আ.) তাদেরকে উপদেশ দেন, ‘তোমরা কি প্রতিটি উঁচু স্থানে অনর্থক সৌধ নির্মাণ করছ না? তোমরা বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করছ যেন সেখানে চিরকাল বসবাস করবে! যখন তোমরা (দুর্বল শ্রেণির) কাউকে আঘাত হানো, তখন আঘাত হেনে থাক নিষ্ঠুর জালেমদের মতো। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আর ভয় কর সেই মহান সত্তাকে, যিনি তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন এমন কিছু দিয়ে—যা তোমরা জানো।
তিনি তোমাদের দান করেছেন গবাদি পশু ও সন্তান-সন্তুতি, এবং উদ্যান ও ঝরনা। আমি তো তোমাদের জন্য মহাদিবসের শাস্তির আশংকা করছি। জবাবে (আদ) জাতির নেতারা বলল, তুমি উপদেশ দাও বা না দাও—সবই আমাদের জন্য সমান।’ (সুরা শুআরা, আয়াত ১২৮-১৩৬)
অহংকার এমন এক জিনিস, এর কবলে পরে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আল্লাহ তাআলা যখন কাউকে নবী বানিয়ে পাঠান, তার মাঝে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দেন—দেখলেই বোঝা যায় তিনি নবী।
আদ জাতির কাফেররা যে হুদ নবীর (আ.) মাঝে নবুওয়তি বৈশিষ্ট্য দেখেনি এমন না, কিন্তু অহংকার তাদের ভেতরটা একদম নষ্ট করে ফেলেছিল। তারা ভেবেছিল ঈমান গ্রহণ করলে মাথানিচু হবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিশ্বজগতের মালিকের দরবারে মাথা নিচু করলে মাথা উঁচুই হয়, তার সামনে ছোট হতে পারলেই মানুষ বড় হয়।
তাদের কৃতকর্মের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ তাআলা অনাবৃষ্টি দেন—টানা তিন বৎসর বৃষ্টিপাত বন্ধ ছিল। তাদের শস্যখেত উজাড় হয়ে যায়, বাগান পুড়ে ছারখার হয়ে যায়, প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তবু তাদের মন নরম হয়নি—তারা কুফরিতে অটল থাকে।
একদিন হঠাৎ আকাশে লাল, সাদা ও কালো রঙের মেঘ দেখা দেয়। তারা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। গায়েব থেকে আওয়াজ আসে— ‘যেকোনো একটা মেঘ বেছে নাও।’ তারা কালো মেঘ বেছে নেয়। কিন্তু ওই মেঘের আড়ালেই ছিল আল্লাহর গজব। তাদের ওপর টানা আটদিন তুফান বইতে থাকে। গাছপালা উড়ে যায়, উঁচু দালান-কোঠা ভেঙে তছনছ হয়ে যায়, আর কাফেরদের হাড়গোড় একদম চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। (সুরা যারিয়াত, আয়াত ৪২)
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো হজরত হুদ (আ.) ও তার সাথীরা একটু কুঁড়েঘরে আশ্রয় নিলে এই প্রচণ্ড ঝড়-ঝাপ্টাতেও তাদের কিছুই হয়নি, তারা ছিলেন সম্পূর্ণ অক্ষত। (তাফসীরে মাআরেফুল কোরআন, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৫৩৪, ইফা)
অহংকারে ধ্বংস হয়েছে আদ জাতি
মওলবি আশরাফ
২৮ আগস্ট ২০২৩, ১৯:২০:৪৪ | অনলাইন সংস্করণ
আরবদেশের বর্তমান ওমান অঞ্চলে এক জাতির বসবাস ছিল, কুরআনে যাদের বলা হয়েছে ‘প্রথম আদ’। তাদের এক-একজনের শরীর ছিল বিশাল, আর ছিল দানবীয় শক্তি। তারা পাথর দিয়ে বড় বড় অট্টালিকা তৈরি করেছিল।
ধন-সম্পদের কোনো কমতি ছিল না, স্থাপত্যশিল্প ও জ্ঞান-বিজ্ঞানেও অনেক এগিয়ে ছিল। কিন্তু একটা জিনিসের অভাব ছিল, তা হলো ভারসাম্যবোধ। জ্ঞান ও সম্পদ মানুষকে অহংকারী করে তোলে, আর ঈমান ভারসাম্যবোধ তৈরি করে সেসবের সঠিক এস্তেমাল শেখায়।
আদ জাতি আল্লাহকে বিশ্বাস করত না, তাদের ঈমান ছিল না, তারা ছিল মূর্তিপূজারী। আর এটাই তাদের হঠকারী বানিয়ে তোলে, তারা অযথা দম্ভ করে বলত, ‘আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী আর কে আছে?’ (সুরা হা-মিম সাজদা, আয়াত ১৫)
কিন্তু আল্লাহ, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
আল্লাহ তাআলা তাদের মাঝে হজরত হুদকে (আ.) পাঠান। তিনি তাদেরকে বলেন—‘হে আমার জাতি, তোমরা আল্লাহর এবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নাই। তোমরা কি আল্লাহকে ভয় করবে না?’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত ৬৫)
কিন্তু তারা এই নির্দেশনা মানতে অস্বীকার করে। তার কওমের কাফের নেতারা বলল, আমরা তো দেখতেই পাচ্ছি তুমি একজন বোকা, এবং তোমাকে মিথ্যাবাদীও মনে করি।
হুদ (আ.) বললেন, হে আমার জাতি, আমার মাঝে কোনো বোকামি নাই, আমি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালকের বার্তাবাহক। আদ জাতি তার কথা কানে নিল না। নুহ নবীর (আ.) প্রতি তার জাতি যেসব অভিযোগ হেনেছিল, আদ জাতিও হুদ নবীর (আ.) প্রতি একই রকম অভিযোগ হানে। তাকে নানাভাবে কষ্ট দেয়, তবু ধৈর্য ধরে দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যান।
হজরত হুদ (আ.) তাদেরকে উপদেশ দেন, ‘তোমরা কি প্রতিটি উঁচু স্থানে অনর্থক সৌধ নির্মাণ করছ না? তোমরা বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করছ যেন সেখানে চিরকাল বসবাস করবে! যখন তোমরা (দুর্বল শ্রেণির) কাউকে আঘাত হানো, তখন আঘাত হেনে থাক নিষ্ঠুর জালেমদের মতো। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আর ভয় কর সেই মহান সত্তাকে, যিনি তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন এমন কিছু দিয়ে—যা তোমরা জানো।
তিনি তোমাদের দান করেছেন গবাদি পশু ও সন্তান-সন্তুতি, এবং উদ্যান ও ঝরনা। আমি তো তোমাদের জন্য মহাদিবসের শাস্তির আশংকা করছি। জবাবে (আদ) জাতির নেতারা বলল, তুমি উপদেশ দাও বা না দাও—সবই আমাদের জন্য সমান।’ (সুরা শুআরা, আয়াত ১২৮-১৩৬)
অহংকার এমন এক জিনিস, এর কবলে পরে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আল্লাহ তাআলা যখন কাউকে নবী বানিয়ে পাঠান, তার মাঝে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দেন—দেখলেই বোঝা যায় তিনি নবী।
আদ জাতির কাফেররা যে হুদ নবীর (আ.) মাঝে নবুওয়তি বৈশিষ্ট্য দেখেনি এমন না, কিন্তু অহংকার তাদের ভেতরটা একদম নষ্ট করে ফেলেছিল। তারা ভেবেছিল ঈমান গ্রহণ করলে মাথানিচু হবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিশ্বজগতের মালিকের দরবারে মাথা নিচু করলে মাথা উঁচুই হয়, তার সামনে ছোট হতে পারলেই মানুষ বড় হয়।
তাদের কৃতকর্মের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ তাআলা অনাবৃষ্টি দেন—টানা তিন বৎসর বৃষ্টিপাত বন্ধ ছিল। তাদের শস্যখেত উজাড় হয়ে যায়, বাগান পুড়ে ছারখার হয়ে যায়, প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তবু তাদের মন নরম হয়নি—তারা কুফরিতে অটল থাকে।
একদিন হঠাৎ আকাশে লাল, সাদা ও কালো রঙের মেঘ দেখা দেয়। তারা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। গায়েব থেকে আওয়াজ আসে— ‘যেকোনো একটা মেঘ বেছে নাও।’ তারা কালো মেঘ বেছে নেয়। কিন্তু ওই মেঘের আড়ালেই ছিল আল্লাহর গজব। তাদের ওপর টানা আটদিন তুফান বইতে থাকে। গাছপালা উড়ে যায়, উঁচু দালান-কোঠা ভেঙে তছনছ হয়ে যায়, আর কাফেরদের হাড়গোড় একদম চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। (সুরা যারিয়াত, আয়াত ৪২)
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো হজরত হুদ (আ.) ও তার সাথীরা একটু কুঁড়েঘরে আশ্রয় নিলে এই প্রচণ্ড ঝড়-ঝাপ্টাতেও তাদের কিছুই হয়নি, তারা ছিলেন সম্পূর্ণ অক্ষত। (তাফসীরে মাআরেফুল কোরআন, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৫৩৪, ইফা)
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023