Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

মুমিনের সংকট আল্লাহর পরীক্ষা

Icon

নাজমুল হুদা মজনু

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৪, ০৭:৫০ পিএম

মুমিনের সংকট আল্লাহর পরীক্ষা

সুন্দর সুজলা সুফলা ভূমিতে সহসা যখন কোনো দুঃসময়-দুর্যোগ নেমে আসে তখন অনেকেই বলে থাকে— হায় হায় এ কী হলো! এখন কী হবে?

কিন্তু কুরআন মাজিদ কী বলে? আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়ভীতি দিয়ে ৷ কিছু ক্ষুধা বা আর্থিক সঙ্কট দিয়ে আবার কখনো জানমাল, ফল ও ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দিয়ে । এমতাবস্থায় সুসংবাদ দাও ওই সব ধৈর্যধারণকারীদেরকে যারা সর্বাবস্থায় অবিচল থাকে। তাদের ওপর যখন বিপদ- মুসিবত এসে পড়ে তখন তারা বলে ওঠে, 'নিশ্চয়ই আমরা একমাত্র আল্লাহর জন্য এবং আমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে।' (বাকারাহ-১৫৫)

আল্লাহ তায়ালা কেন আমাকে এ দুর্বিপাকে ফেললেন?  আমার ওপর কেন এত বিপদ এলো? এ ধরনের উক্তি-অভিযোগ একেবারে অবান্তর। এটি মুমিনের জন্য শোভা পায় না। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অনেক সময় মুমিনের জীবনে কিছু সমস্যা-সংকট দিয়ে পরীক্ষা করেন।‌ 

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দুনিয়াতে মুমিনদের কিছু দুঃখ বেদনা কষ্ট দিয়ে তাদেরকে পাক-সাফ ও পবিত্র জীবন দান করেন। মহীয়ান- গরিয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়াবিমুখ হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। 

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন—(হে নবী,) পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ ভোগ-বিলাসের সেসব উপকরণ আমি তাদের অনেককেই দিয়ে রেখেছি, তার দিকে তুমি কখনো তোমার দু'চোখ তুলে তাকাবে না, (আসলে আমি এসব কিছু এ কারণেই দিয়েছি) যেন আমি তাদের পরীক্ষা করতে পারি, (মূলত) তোমার মালিকের রিজিকই হচ্ছে উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। (ত্বহা-১৩১)

ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর বান্দাদের উদ্দেশে আল্লাহ জাল্লা শানুহু কুরআন মাজিদে বলেন, অবশ্যই এ কুরআন এমন এক পথের দিকে নির্দেশনা দেয় যা অতি (সরল ও) মজবুত এবং যেসব ঈমানদার মানুষ নেক আমল করে, এ (কিতাব) তাদের (এ) সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) এক মহা পুরস্কার রয়েছে। (বনি ইসরাঈল-৯)

পৃথিবীতে চলার পথে হরেক রকম হাজারো রঙের ফানুস ওড়ে। তবে কোন মানুষের সাথে মেলামেশা করতে হবে, একসাথে চলতে হবে; আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তা কুরআনুল কারিমের মাধ্যমে তার হাবিবকে অবগত করেছেন। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন, (হে নবী,) তুমি নিজেকে সদা সেসব মানুষের সাথে রেখে চলবে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের মালিককে ডাকে, তারা একমাত্র তারই সন্তুষ্টি কামনা করে এবং কখনো তাদের কাছ থেকে তোমার (স্নেহের) দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না, (তোমার অবস্থা দেখে এমন যেন মনে না হয় যে,) তুমি এই পার্থিব জগতের সৌন্দর্যই কামনা করো, কখনো এমন কোনো ব্যক্তির কথামত চলো না, যার অন্তকরণকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফিল করে দিয়েছি, আর যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির গোলামি করতে শুরু করেছে এবং যার কার্যকলাপ (আল্লাহ তায়ালার) সীমানা লঙ্ঘন করেছে।(আল-কাহাফ-২৮)

ক্ষনিকের এই দুনিয়া ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে এ কথা  অস্বীকার করার কারো কোনো সুযোগ নেই। তাই মৃত্যুর আগেই আখেরাতের সম্বল জোগাড় করতে হবে। কুরআন মাজিদের পাশাপাশি বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসেও পরকালের অমোঘ বাণী বর্ণনা করা হয়েছে। 

হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণীর লোককে কিয়ামাতের দিন তার ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। যে দিন তার ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) যে যুবক আল্লাহর ইবাদাতে রত থাকে, (৩) যার অন্তর মাসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, (৪) এমন দু’ব্যক্তি যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্য কেবল পরস্পরে ভালোবাসায় মিলিত অথবা পৃথক হয়, (৫) ওই ব্যক্তি, যাকে কোনো সুন্দরী উচ্চ বংশীয় নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য নিজের দিকে আকৃষ্ট করে আর সে বলে, আমি আল্লাহর আজাবকে ভয় করি, (৬) যে ব্যক্তি গোপনে সদাকাহ করে। এমনকি তার বাম হাত জানে না ডান হাত কী খরচ করছে, (৭) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর স্মরণকালে তার দু'চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। (বুখারি-৬২০)

এখানে উল্লেখযোগ্য আরেকটি হাদিস হলো ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত— তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,  জাহান্নামের আগুন  দু’টি চোখকে স্পর্শ করবে না। এক. আল্লাহর ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে এবং দুই. আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে বিনিদ্র রাত যাপন করে।(তিরমিজি-১৬৩৯)

লেখক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
 

মুমিন সংকট আল্লাহ পরীক্ষা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম