Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

শ্রেণিবৈষম্য দূর করেছে ইসলাম

Icon

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৪, ০৬:৫২ পিএম

শ্রেণিবৈষম্য দূর করেছে ইসলাম

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একজন মহান সমাজ সংস্কারক। প্রাক- ইসলামী যুগে আরবের সামাজিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। গোত্র কলহ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারামারি, হানাহানি, সামাজিক বিশৃঙ্খলার নৈরাজ্য পূর্ণ অবস্থার মধ্যে নিপতিত ছিল গোটা সমাজ। 

সামাজিক সাম্য- শৃঙ্খলা, ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ, নারীর মর্যাদা ইত্যাদির কোনো স্থায়িত্বই ছিল না। জঘন্য দাসত্ব প্রথা, সুদ, ঘুষ, জুয়া- মদ, লুন্ঠন, ব্যভিচার, পাপাচার, অন্যায়-অত্যাচারের চরম তাণ্ডবতায় সমাজ কাঠামো ধসে পড়েছিল, এমন এক দুর্যোগময় যুগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাব। 

তিনি আরবের বুকে বৈপ্লবিক সংস্কার সাধন করে বিশ্বের ইতিহাসে অতুলনীয় খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজকে নবুওতের আলোকে উদ্ভাসিত করেন। 

ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, মালিক-শ্রমিকের বৈষম্য ঘুচিয়ে আনতে ইসলাম প্রবর্তন করেছে জামাতে নামাজ আদায়ের বিধান।

সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধভাবে একই কিবলামুখী হয়ে নামাজ আদায় করে সাম্যের ডাক দিয়ে যাচ্ছে। এই সাম্য ও ঐক্যের জন্যই প্রবর্তন করা হয়েছে হজের বিধান, যেখানে সবাই একই পোশাকে হজ আদায় করে। 
ইসলামের দর্শন হলো গোটা সৃষ্টিকুল একটি পরিবারের মতো। রাসুলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘পুরো সৃষ্টিজগত আল্লাহর পরিবার। আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় সেই ব্যক্তি যে তার সৃষ্টির প্রতি উত্তম আচরণ করে।’ (শুয়াবুল ঈমান : ৭০৪৮)

যেহেতু গোটা সৃষ্টিকুল একটি পরিবারের মতো তাই সৃষ্টিজীবের সাথে ব্যবহার হবে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের মতো। তদ্রুপ সব মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক হচ্ছে, ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। কারণ সব মানুষের পিতা একজন, মাতাও একজন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন আর তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গিনীকে, বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত নারী ও পুরুষ।’ (সূরা নিসা : ১)

আল্লাহর কাছে ধনী-গরিব, কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ সবাই সমান। প্রিয় নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের দেহকায় ও বাহ্যিক আকৃতি দেখেন না; বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তরসমূহ।’ (সহিহ মুসলিম : ৬৪৩৬)

শ্রেণিবৈষম্য অন্যের অধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার। তা ছাড়া বৈষম্যমূলক আচরণ বড় ধরনের জুলুমও বটে। আল্লাহ তায়ালা কোনো মানুষের প্রতি জুলুম করাকে বরদাশত করেন না। পূর্ববর্তী বহু জাতিকে কেবল জুলুম ও অত্যাচারী আচরণের কারণেই তিনি ধ্বংস করেছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই আমি তোমাদের আগে বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি, যখন তারা জুলুম করেছে।’ (সুরা ইউনুস : ১৩)

বর্তমান বিশ্বে উন্নত জাতি গঠনের দাবিদার জ্ঞান পাপীরাই মানুষের মাঝে সাদা-কালোর বৈষম্য, ধনী-গরীব তথাকথিত শিক্ষিত ও অশিক্ষিতের পার্থক্য করে ব্যক্তি-সমাজ তথা বিশ্বব্যাপী এক ভয়াবহ অস্থিতিশীল পরিবেশ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। যা সমগ্র বিশ্বের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে।

অথচ আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আরাফাতের ময়দানে অমর কালজয়ী ভাষণে বিশ্ববাসীকে এই জঘন্য ব্যাধি বর্ণ-বৈষম্যের ব্যাপারে সতর্ক করে সর্বজনীন মানবাধিকারের কথা ঘোষণা করে বলেন-

‘হে মানবমণ্ডলি! মনে রেখো! প্রত্যেক মুসলমান একে অন্যের ভাই এবং সব মুসলমান ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। কেউ কারো চেয়ে ছোট নও, কারো চেয়ে বড়ও নও। আল্লাহর চোখে সবাই সমান।

নারীজাতির কথা ভুলে যেয়ো না। নারীর ওপর পুরুষের যেরূপ অধিকার আছে, পুরুষের ওপর নারীরও সেরূপ অধিকার আছে। তাদের প্রতি অত্যাচার কোরো না। মনে রেখো, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তাদেরকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছ।

হে মুসলমানগণ! হুঁশিয়ার! নেতার আদেশ কখনো লঙ্ঘন করো না। যদি কোনো ক্রীতদাসকেও তোমাদের নেতা নির্বাচন করা হয় এবং সে যদি আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালনা করে, তবে তার আদেশ মেনে চলবে।

দাস-দাসীদের প্রতি সদা সদ্ব্যবহার করবে। তাদের ওপর কোনো অত্যাচার করবে না। অতপর তিনি দাস-দাসী ও শ্রমিকের অধিকার ঘোষণা করে বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলি! তোমরা নিজেরা যা ভক্ষণ করবে, তোমাদের অধিনস্থ গোলাম বা দাস-দাসীদেরকেও তা খেতে দেবে। যা তোমরা পরিধান করবে, তা তাদেরও পরিধান করাবে। ভুলে যেয়ো না, তারাও তোমাদের মতো মানুষ।

বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত ভয়াবহ বর্ণ বৈষম্যকে রোধ করতে হলে বিশ্বনবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের বাস্তবায়ন একন্তভাবে জরুরি। বর্ণ বৈষম্য রোধে বিশ্বনবীর আদর্শ বাস্তবায়ন মুসলিম উম্মাহ ঈমানের দাবি।
 

শ্রেণিবৈষম্য দূর ইসলাম

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম