ফিলিস্তিনিদের জন্য আলাদা কোনো নামাজ পড়া যাবে?

মুফতি শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:১৬ পিএম

প্রশ্ন: বর্তমানে ফিলিস্তিনের গাজার মুসলমানরা মারাত্মক কষ্টের মধ্যে রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য আলাদা কোন নামাজ পড়া যাবে কিনা? ফিলিস্তিনিদের জন্য যদি নফল নামাজ নিয়ত করে পড়ি, সে ক্ষেত্রে কি আলাদা কোন নিয়ম আছে?
উত্তর: বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে মানবিক বিপর্যয়ে রয়েছে গাজা-ফিলিস্তিনের মুসলমানরা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে মুসলমানদের বিপদে নফল নামাজ তথা কুনুতে নাজেলা আদায়ের বিধান রয়েছে।
কুনুতে নাজেলা কখন পড়তে হয়?
মুসলমানদের উপর কোন বিপদ আপদ আসলে, ইসলামের শত্রুদের জন্য হেদায়াতের দোয়া বা বদদোয়া করার জন্য ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে কুনুতে নাজেলা পড়া মুস্তাহাব।
সর্বদা ফজরের নামাজের সময় এমনটি করবে না। বাকি যদি কেউ করে, তাহলে সেটিকে বাতিল বলে বাঁধা দেবারও প্রয়োজন নেই। তবে কথা হল, কুনুতে নাজেলা শুধু বিশেষ মুহুর্ত তথা ব্যাপক বিপদ, যুদ্ধকালীন সময় ইত্যাদি মুসিবতের সময় পড়াই মুস্তাহাব।
হযরত আবু মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, হে আমার পিতা! নিশ্চয় আপনি রাসূল সা., হযরত আবু বকর রা., হযরত উমর রা., হযরত উসমান রা. ও হযরত আলী রা. এর পেছনে কুফায় প্রায় পঞ্চাশ বছর নামাজ পড়েছেন, তারা কি ফজরের নামাজে সর্বদা কুনুত (নাজেলা) পড়তেন? তিনি বললেন, হে আমার বৎস! না এটি নতুন করে শুরু হয়েছে। (আগে পড়া হতো না)।
{মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-১৫৮৭৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১২৪১, সুনানে তিরমিজী, হাদিস নং-৪০২, তাহাবী শরীফ, হাদিস নং-১৪৭৪, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদিস নং-১২৯২}
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা. ফজরের নামাজের সময় সর্বদা কুনুত (নাজেলা) পড়তেন না। শুধু পড়তেন কোন জাতির জন্য দোয়া করতে বা বদদোয়া করার প্রয়োজন হলে।তিনি কুনুত পড়তেন যখন ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতের রুকু থেকে মাথা উঠাতেন।
{সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং-১০৯৭, নসবুর রায়াহ, আলমুসনাদুল জামে, আসারুস সুনান-২/২০}
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রা. থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল সা. ফজরের নামাজের সময় কুনুত পড়তেন না, শুধুই একমাস পড়েছিলেন। এর আগে বা পড়ে আর এমনটি করতে দেখা যায়নি। সে সময় তিনি কিছু মুশরিকদের উপর বদদোয়া করতে পড়েছিলেন। {মুসনাদে আবী হানীফা বিরিওয়াতে হিসকাফী, হাদিস নং-৩৪}
অর্থাৎ, কুনুতে নাজেলা রহিত হয়নি বরং তা এখনো বহাল রয়েছে। মুসলমানদের দুর্যোগ কালে ফজরের নামাজে ইমাম কুনুত পড়বে। (এলাউস সুনান – ৬/৮১)
মুসলমানদের উপর যদি ব্যাপক বালা-মুসিবত ও বিপদ আসে, তাহলে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার নিকট সাহায্য কামনার্থে কুনুতে নাজেলা পড়া মুস্তাহাব। রাসূল সা. বিপদ আপতিত হলে ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন সময় কুনুতে নাজেলা পড়েছেন। {সহিহ বুখারি-২/৬৫৫, তাহাবী শরীফ-১/১৭৪, সহিহ মুসলিম-১/২৩৭}
তাই হানাফী মাজহাব মতে কাফের, মুশরিক ও জালেমদের পক্ষ থেকে বা আসমানি কোন বিপদ আসলে কুনুতে নাজেলা পড়া উচিত। {ফাতওয়ায়ে শামী ২/৪৪৮-৪৪৯}
কুনুতে নাজেলা পড়ার পদ্ধতি
ফজরের নামাজের ফরজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠে ইমাম আওয়াজ করে দু’আ পড়বেন, আর মুসল্লিরা আস্তে আস্তে আমীন বলবেন। দোয়া শেষে নিয়ম মোতাবিক সেজদা, শেষ বৈঠক ইত্যাদির মাধ্যমে নামাজ শেষ করবেন। (এলাউস সুনান – ৬/৮১)
কুনুতে নাজেলার দোয়া
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا ، وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ ، وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ، اللَّهُمَّ الْعَنْ كَفَرَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِكَ ، وَيُكُذِّبُونَ رُسُلَكَ ، وَيُقَاتِلُونَ أَوْلِيَاءَكَ اللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمَ ، وَزَلْزِلْ أَقْدَامَهُمْ، وَأَنْزِلْ بِهِمْ بَأْسَكَ الَّذِى لاَ تَرُدُّهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُثْنِى عَلَيْكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّى وَنَسْجُدُ، وَلَكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ ، نَخْشَى عَذَابَكَ الْجَدَّ، وَنَرْجُو رَحْمَتَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكَافِرِينَ مُلْحَقٌ.
বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মাগ ফিরলানা ওয়ালিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত, ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত, ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম, ওয়া আসলিহ জাতা বাইনিহিম, ওয়াংসুরহুম আলা আদুওয়িকা ওয়া আদুওয়িহিম, আল্লাহুম্মাল আন কাফারাতা আহলিল কিতাবিল্লা জিনা ইয়াসুদ্দুনা আন সাবিলিকা, ওয়া ইউকাজজিবুনা রুসুলাকা, ওয়া ইউকাতিলুনা আওলিয়াআকা, আল্লাহুম্মা খালিফ বাইনা কালিমাতিহিম, ওয়া জালজিল আকদামাহুম, ওয়া আনজিল বিহিম বাসাকাল্লাজি লা তারুদ্দুহু আনিল কাওমিল মুজরিমিন, আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নুসনি আলাইকা ওয়ালা নাকফুরুক ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুকু মাই-ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইইয়াকা নাবুদু ওয়া লাকা নুসাল্লি, ওয়া নাসজুদু, ওয়া লাকা নাসআ, ওয়া নাহফিদু, নাখশা আজাবাকালঝাদ্দা, ওয়া নারজু রাহমাতাক। ইন্না আজাবাকা বিল কাফিরিনা মুলহিক।’
বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ, ক্ষমা করুন আমাদের এবং মুমিন নারী-পুরুষদের, আর মুসলমান নারী-পুরুষদের। তাদের অন্তরসমূহ জুড়িয়ে দিন আর তাদের মাঝে মীমাংসা করে দিন। তাদের সাহায্য করুন আপনার ও তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে। হে আল্লাহ, অভিসম্পাত বর্ষণ করুন কাফের সম্প্রদায়ের ওপর, যারা আপনার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং যারা অস্বীকার করে রাসুলদেরকে আর যুদ্ধবিগ্রহ করে ওলিদের সাথে। হে আল্লাহ, বিভেদ সৃষ্টি করে দিন তাদের ঐক্যের মাঝে এবং কম্পন সৃষ্টি করুন তাদের পদযুগলে আর নাজিল করুন এমন শাস্তি যা অপরাধী থেকে অপসারণ করা হয় না। বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, হে আল্লাহ, আমরা আপনার নিকট সাহায্য এবং ক্ষমা চাই, সকল মঙ্গল আপনার দিকেই ন্যস্ত করি। আপনার অকৃতজ্ঞ হই না। যারা আপনার নাফরমানি করে আমরা তাদের পরিত্যাগ করে চলি। বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, হে আল্লাহ, আমরা আপনারই দাসত্ব করি, আপনার জন্যে নামাজ পড়ি এবং আপনাকেই সিজদাহ করি। আমরা আপনার দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আপনার কঠিন আজাবকে ভয় করি এবং রহমতের আশা রাখি আর আপনার আজাব তো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত। (বা্ইহাকি, হাদিস: ২৯৬২)