|
ফলো করুন |
|
|---|---|
হাসি সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের বহিঃপ্রকাশ। আন্তরিকতার প্রতীক। হাসিতে দূর হয় মনোকষ্ট। কেটে যায় বিষাদ ও হতাশার কালোমেঘ। হাসিতে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। বৃদ্ধি হয় মনোবল ও কর্ম সক্ষমতা। জীবনে আসে গতি, উদ্যমতা, চাঞ্চল্যতা।
হাসি মানুষের স্বভাবগত বিষয়। কিন্তু কিছু হাসিতে পাবেন ইবাদতের সওয়াব। ভারী হবে আমলনামা। আল্লাহ পক্ষ থেকে মিলবে পুরস্কার ও সম্মান। নবীজি ইরশাদ করেন, অপরের সঙ্গে সাক্ষাতে মুচকি হাসাও একটি সদকা। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯৫৬)
তাই নবীজি সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল থাকতেন। হাস্যোজ্জ্বল থাকতে উৎসাহিত করেতেন।
হাস্যোজ্জ্বল মানুষকে সবাই আপন ভাবে। ভালো পায়। হাস্যবদন বা প্রফুল্লতাকে আল্লাহও পছন্দ করেন।
নবীজি বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে খুশি করার জন্য এমনভাবে সাক্ষাৎ করে, যেমনটি সে নিজের জন্য পছন্দ করে। তাহলে কেয়ামতের দিন এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তাকেও খুশি করবেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস: ১৩৭২১)
কোনো নেক আমলে ছোট নয়। সাধারণ আমলও নাজাতের উসিলা হতে পারে। অন্যের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা ছোট আমল মনে হতে পারে। কিন্তু নবীজি এ আমলকেও তুচ্ছ ভাবতে নিষেধ করেছেন।
তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা কোনো ভালো কাজকেই তুচ্ছ ভেবো না; যদি সেটা তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে দেখা করাও হয়। (সহিহ মুসলিম: ২৬২৬)
গোমড়া মুখ কেউ পছন্দ করেনা। এড়িয়ে যায়। পরস্পর সম্পর্কে সৃষ্টি করে ভুল বোঝাবুঝি। তৈরি হয় দূরত্ব ও বৈরিতা । এর বিপরীতে মুচকি হাসি পরস্পরের সম্পর্কে আনে নতুন মাত্রা। অর্জিত হয় সদকার সওয়াব। প্রকাশ পায় মানুষের চরিত্রের কোমলতা ও সৌন্দর্যবোধ।
এক হাদীসে নবীজি বলেন, তোমার ভাইয়ের সামনে মুচকি হাসা সদকাস্বরূপ। (সুনানের তিরমিজি, হাদিস: ১৯৫৬)
প্রফুল্লতা বা হাসিমুখ থাকা আল্লাহর নেয়ামত। ঈমান ও ইবাদতের সৌন্দর্য। আমলের নুর।
এক হাদীসে নবীজির ইরশাদ করেন, ফুরফুরে মেজাজে থাকা আল্লাহর নেয়ামত সমূহের অন্যতম একটি নিয়ামত। (সুনানে ইবনে মাজাহ: হাদিস- ২১৪১)
অপর হাদিসে তিনি বলেন, তোমার কোনো ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা এবং অপরের পাত্রে পানি ঢেলে দেয়া নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত। (সুনানে তিরমিজি: ১৯৭০)
হজরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন, নবীজি যখনই আমার দিকে তাকাতেন, তখনই মুচকি হাসতেন। সহিহ বুখারি: ৩০৩৫
চেহারাকে মেঘলা আকাশ বানিয়ে রাখা, ভ্রু কুঁচকে অবজ্ঞাভরে কথা বলা নিন্দনীয় স্বভাব। কুরআনে এমন আচরণের তিরস্কার করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, তুমি মানুষের প্রতি অবজ্ঞাভরে গাল ফুলিয়ো না এবং জমিনে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কোনো অহংকারীকে পছন্দ করেন না। সুরা লোকমান: ১৮
নবীজি সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হারিস রা. বলেন, আমি নবীজির চাইতে বেশি মুচকি হাসতে আর কাউকে দেখিনি। সুনানে তিরমিজি: ৩৬৪১
মুচকি হাসি বিষাদ বা থমথমে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে তোলে। আপনার হাসির সংক্রমনে বা দেখাদেখি অন্যরাও হয়ে উঠবে হাস্যোজ্জ্বল। ফলে পরিবেশ হয়ে যাবে ফুরফুরে ও সতেজ। বিষাদে আচ্ছন্ন মানুষদের মনে-প্রাণে জন্মাবে নতুন শক্তি। তৈরি ইতিবাচক ভাবনা। এতে করে আপনার আমলনামায় যুক্ত হবে পরকালীন পুঁজি। কেননা অন্যের কষ্ট লাঘব করাও ইবাদত। আর মানসিক কষ্ট শারীরিক কষ্টের চাইতেও বেশি পীড়াদায়ক।
হযরত আবু যর গিফারি রা. থেকে বর্ণিত। নবীজি বলেন, তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে দেখা করা সদকা। পথহারা মানুষকে পথ দেখিয়ে দেওয়া, অন্ধ বা দুর্বল দৃষ্টিশক্তির মানুষকে সাহায্য করা সদকা। পথের কাঁটা বা বাঁধা সরিয়ে দেওয়া, নিজের বালতি থেকে অন্য ভাইয়ের বালতিতে পানি দিয়ে ভরে দেওয়াও সদকা। সুনানে তিরমিজি: ১৯৫৬
তবে ভাইরাল হওয়ার ধান্দায় বা মনোযোগ আকর্ষণের জন্য মিথ্যা কথা বলে মানুষ হাসানো পাপ। নবীজি ইরশাদ করেন, ধ্বংস ওই ব্যক্তির জন্য, যে মিথ্যা কথা বলে মানুষ হাসায়। আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯০
মুচকি হাসিতে থাকে মায়া, থাকে প্রশান্তি। মুচকি হাসিতে প্রকাশ পায় ভালোবাসা। মুচকি হাসির স্নিগ্ধতার কাটুক সবার জীবন। সমাজ দূর হোক সব দূরত্ব ও বিদ্বেষের কালো মেঘ।
লেখক: শিক্ষক, শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন চৌধুরীপাড়া মাদরাসা, হাতিরঝিল, ঢাকা -১২১৯

