সমিতির জাকাতের টাকা থেকে ঋণ দেওয়া যাবে?
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৫, ০৩:২২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রশ্ন: আমাদের একটি সামাজিক সংগঠন আছে। এই সংগঠনের জন্য আমরা সাধারণ দানের পাশাপাশি জাকাতদাতাদের কাছ থেকে জাকাতের টাকাও সংগ্রহ করে থাকি এবং এই টাকা আমরা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত অভাবী ব্যক্তিদের চিকিৎসা, চাষাবাদ, লেখা-পড়া, বিবাহ-শাদী, সুদী লোনে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদেরকে সেখান থেকে মুক্ত করা প্রভৃতি কাজে খরচ করি।
জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয় এমন অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে এই ফান্ড থেকে সুদমুক্ত ঋণও নিতে চায়। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি যে, আমাদের জন্য এই ফান্ডের জাকাতের টাকা থেকে লোকদেরকে ঋণ দেওয়া বৈধ হবে কি না।
উত্তর: জাকাত আদায় হওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে জাকাতের টাকা অথবা জাকাতের অর্থে খরিদকৃত বস্তুর পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি। জাকাতের টাকা থেকে ঋণ দিলে জাকাত আদায় হয় না। যদিও ঋণগ্রহীতা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয়।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত সংগঠনের পরিচালকরা দাতাদের জাকাত আদায়ের প্রতিনিধি মাত্র। দাতাগণের পক্ষ থেকে সঠিক খাতে জাকাতের টাকা পৌঁছানোর দায়িত্ব তারা নিয়েছেন। দাতাগণও নিজেদের জাকাতের অর্থ যথাযথ পন্থায় ব্যয় হবে– এমন আস্থা নিয়েই তাদের কাছে দিয়ে থাকেন।
অতএব তাদের কর্তব্য হল, দ্রুত উপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে এ টাকাগুলোর মালিক বানিয়ে দেওয়া। যাতে করে সঠিকভাবে দাতাগণের জাকাত আদায় হয়ে যায়। কিন্তু তা না করে সংগঠনের পরিচালকগণের জন্য জাকাত ফান্ড থেকে কাউকে ঋণ দিলে তা মানুষের জাকাতের অর্থে অন্যায় হস্তক্ষেপের শামিল হবে।
এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কয়েকটি সমস্যা তৈরি হয়–
১. মানুষের জাকাতের অর্থ সরাসরি জাকাতের খাতে ব্যয় না করে অন্য কাজে ব্যবহার করা। অথচ প্রতিনিধির জন্য এ ধরনের তসরুফ জায়েজ নয়।
২. দাতাগণের জাকাত দীর্ঘদিন অনাদায়ী থেকে যাওয়া বা জাকাত আদায়ে অনেক বিলম্ব হওয়া। কেননা জাকাতের টাকাগুলো ঋণ দেওয়ার পর ঋণগ্রহীতা থেকে ফেরত নিয়ে যতক্ষণ না তা জাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া হবে, এর আগ পর্যন্ত এ টাকার জাকাত আদায় হবে না। আর জাকাত আদায়ে অল্প কিছুদিন বিলম্ব করা জায়েজ হলেও বেশি বিলম্ব করা শরীয়তসম্মত নয়।
৩. এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে জাকাতের অর্থগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। কোনো ঋণগ্রহীতার অসামর্থ্য বা অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে সেই টাকা সম্পূর্ণ খোয়াও যেতে পারে। বর্তমান যুগে ঋণের ক্ষেত্রে তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমনটি ঘটলে ওই টাকার জাকাত আদায় হবে কীভাবে। সেক্ষেত্রে তো দায়িত্বশীলদের নিজ পকেট থেকে মানুষের ওই জাকাত আদায় করতে হবে।
এসব সমস্যার কারণে উক্ত সংগঠনের জন্য জাকাতের টাকা সরাসরি জাকাতের খাতে আদায় না করে এ টাকা দিয়ে ঋণ দেওয়া বৈধ হবে না।
সাংগঠনিকভাবে জাকাতের অর্থ জমা করে তা উপযুক্ত লোকদের মধ্যে বিলি করার ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে যে, জমা হওয়া জাকাতের পুরো টাকাই হকদারদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। সংগঠনের ব্যবস্থাপনাগত কোনো খরচ এ টাকা থেকে নেওয়া যাবে না।
মনে রাখতে হবে, জাকাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধান। তাই এক্ষেত্রে খুব সতর্কতা কাম্য। এজন্য যাদের সামর্থ্য ও যাচাই-বাছাইয়ের যোগ্যতা আছে, তাদের জন্য নিজ হাতে জাকাত আদায় করা উত্তম। অবশ্য নিজের জাকাতের অর্থ আদায়ের জন্য বিশ্বস্ত এবং মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত বিজ্ঞ ব্যক্তিকেও দেওয়া যেতে পারে।
প্রকাশ থাকে যে, এ ধরনের সংগঠন পরিচালনা করার আগে এর যাবতীয় নিয়মনীতি কোনো নির্ভরযোগ্য দারুল ইফতায় দেখিয়ে সংশোধন ও সত্যায়ন করিয়ে নেওয়া কর্তব্য। যেন মানুষের ফরয হক আদায়ে কোনো প্রকারের ত্রুটি না হয়ে যায়।
সূত্র: আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৬১; আলমাবসূত, সারাখসী ২/২০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৬৪৪; ফাতাওয়া রাহীমিয়া ৭/১৪৩
