অফিস-দোকানে কি লাউডস্পিকারে তিলাওয়াত ছাড়া যাবে?
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০২:০০ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রশ্ন: অফিস-দোকান বা লিফটের মধ্যে কী লাউডস্পিকারে কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া যাবে?
উত্তর: পবিত্র কুরআন আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী। এটি তিলাওয়াত করা যেমন সওয়াবের কাজ, তেমনি মনোযোগ সহকারে শোনাও এক মহৎ ইবাদত।
এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন-
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
“যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগসহ তা শোনো এবং নিশ্চুপ থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।” (সুরা আল-আরাফ, আয়াত : ২০৪)
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক সময় হাট-বাজার, অফিস বা লিফটে অডিও রেকর্ড থেকে কুরআন বাজানো হয়।
এর উদ্দেশ্য অবশ্যই ভালো, তবে এরূপ স্থানে মানুষ সাধারণত ব্যস্ত থাকে এবং মনোযোগ দিয়ে শোনা সম্ভব হয় না। ফলে আল্লাহর নির্দেশিত আদব লঙ্ঘিত হয় এবং কুরআনের প্রতি অসম্মানও ঘটে।
ফিকহের বিখ্যাত গ্রন্থ ফতোয়ায়ে শামীতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে - বাজার বা কোলাহলপূর্ণ স্থানে কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরূহ। কারণ মানুষ তখন ব্যস্ত থাকায় শোনে না এবং এতে কুরআনের মর্যাদা হ্রাস পায়।
একই রকম ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ইমাম নববি (রহ.) ও অন্যান্য ফকিহের কাছ থেকেও।
সমসাময়িক আলেমরাও একই মত পোষণ করেছেন। মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ.) তার “জাদিদ আলাত কে শরঈ আহকাম” গ্রন্থে লিখেছেন—রেকর্ড করা কুরআন বাজানো বৈধ, তবে এমন স্থানে নয় যেখানে মানুষ মনোযোগী হতে পারে না। অন্যথায় সওয়াবের বদলে গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
পাকিস্তানের বানুরি টাউন মাদ্রাসা থেকেও একই ধরনের ফতোয়া প্রদান করা হয়েছে।
সুতরাং বাজার, লিফট বা অফিসের মতো ব্যস্ত স্থানে লাউডস্পিকারে কুরআন বাজানো উচিত নয়। এভাবে চালানোতে সাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হওয়ার আশঙ্কাই প্রবল। তবে শান্ত পরিবেশে, যেখানে মানুষ মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারে সেখানে কুরআন বাজানো জায়েজ ও ফজিলতপূর্ণ।
কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণের আদব সম্পর্কে আলেমরা লিখেছেন, সরাসরি তিলাওয়াত শোনার যে আদব, রেকর্ড করা কুরআনের তিলাওয়াত শোনার আদবও সেই একইরকম। এমনকি রেকর্ড করা তিলাওয়াত শোনার দ্বারাও সাওয়াব অর্জিত হয়।
সুতরাং যেসব স্থানে মানুষ শুনতে মনোযোগী হতে পারে না, সেখানে লাউডস্পিকারে কোরআন তিলাওয়াতের রেকর্ড বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
সূত্র: তাফসিরে কুরতুবি, ৭/৩৪৬; তাফসির ইবনে কাসির, ২/২২০; বাদায়েউস সানায়ি, ১/২৭০; ফতোয়ায়ে শামী (রদ্দুল মুহতার), ১/৪০৫-৪০৬; জাদিদ আলাত কে শরঈ আহকাম, মুফতি মুহাম্মদ শফী. ২০৭;ফতোয়া: জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া, বানুরি টাউন, করাচি (নং: ১৪৪২০৮২০০৬০৫)।

