Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

মানুষের সেবায় মিলে খোদার সন্তুষ্টি

Icon

মুহাম্মাদ হাসিব আলী

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মানুষের সেবায় মিলে খোদার সন্তুষ্টি

জীবনের পরিধি যেমন ব্যাপক, ইসলামের শাখা-প্রশাখাও তেমনই বিস্তৃত। মানবসেবা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘তোমরাই সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানবজাতির কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা পৃথিবীতে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (জামে আত-তিরমিজি : ১৯২৪)।

মানবসেবায় নিয়োজিত থাকতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা আদম সন্তানদের উদ্দেশে বলবেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমার সেবা করোনি; আমি খাদ্য চেয়েছিলাম, তুমি দাওনি; আমি পানি চেয়েছিলাম, তুমি দাওনি।’ বান্দা তখন বলবে, ‘আপনি তো মহান রব, আপনাকে কীভাবে সেবা করব? কীভাবে খাদ্য দেব? কীভাবে পানি দেব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, তুমি দেখতে যাওনি; অমুক বান্দা খাবার চেয়েছিল, তুমি দাওনি; অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল, তুমি পানি দাওনি। অথচ তাদের সেবার মাধ্যমে তুমি আমাকে পেতে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৫০)। এখানে মানবসেবার মাধ্যমে আল্লাহর করুণা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইসলাম মানুষকে শুধু নামাজ, রোজা বা হজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে বলে না; বরং অন্যের কল্যাণে নিয়োজিত থাকাকেও ইবাদত হিসাবে ঘোষণা করেছে।

এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, মানবসেবা ইসলামেরই শিক্ষা। মানবসেবা করা মানেই আল্লাহর ইবাদত করা। আর এর প্রতিদান আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন প্রদান করবেন। ইসলামের ইতিহাসে নবী, সাহাবা ও পরবর্তী খলিফারা এ শিক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। খলিফা উমর (রা.) রাতের বেলা ছদ্মবেশে বের হতেন প্রজাদের কষ্ট জানার জন্য। একবার এক মা সন্তানদের জন্য হাঁড়িতে পাথর ফুটাচ্ছিলেন যাতে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। উমর (রা.) নিজে কাঁধে খাদ্য বহন করে গিয়ে সেই পরিবারকে খাওয়ালেন। এটি শুধু মানবতাবাদী কাজ নয়, বরং ইমানেরই দাবি। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন নয়, যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা ভালোবাসে, ভাইয়ের জন্যও তাই ভালোবাসে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

ইসলামে মানবসেবায় জাতি, ধর্ম বা বর্ণের পার্থক্য নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আদম সন্তানের প্রত্যেককে সম্মানিত করেছি।’ (সূরা ইসরা : ৭০)। অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকে হত্যা করলে তার জন্য জান্নাত হারাম করা হয়েছে। (আবু দাউদ : ২৭৬০)। অতএব, ইসলাম মানুষের মধ্যে বৈষম্য নয়, ন্যায্যতা ও করুণার শিক্ষা দেয়।

ইসলাম শুধু দান করতে বলে না, বরং ন্যায়ের সঙ্গে সম্পদ বণ্টনের নির্দেশ দেয়। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্তদের অধিকার।’ (সূরা যারিয়াত : ১৯)। তাই ইসলাম মানবসেবাকে শুধু আবেগের বিষয় নয়, বরং ন্যায্যতা ও সামাজিক দায়িত্বের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মানবসেবা যেমন পৃথিবীতে শান্তি আনে, তেমনই পরকালের মুক্তির পথ দেখায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক নারী তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে জান্নাতে গেছে, আর এক নারী একটি বিড়ালকে বন্দি রেখে মৃত্যুর কারণে জাহান্নামে গেছে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম