Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

Icon

তামান্না ইসলাম

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

আল্লাহতায়ালা বলেন, হে নবি আপনি মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় পবিত্রতা। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। (সূরা নূর : ৩০)।

ইসলামি শরিয়তে শিরক ও হত্যার পর ব্যভিচার বা ধর্ষণ সুস্পষ্ট হারাম ও বড় ধরনের অপরাধ হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইসলামে ব্যভিচারী এবং ধর্ষণকারীকে জনসম্মুখে শাস্তি প্রদানের বিধানের বর্ণনা রয়েছে। যদি বিবাহিত কেউ ব্যভিচার করে তাহলে তার শাস্তি হলো প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া। আর যদি ব্যভিচারী অবিবাহিত হয় তাহলে তাকে প্রকাশ্যে একশটি বেত্রাঘাত করা হবে।

কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সূরা বনি ইসরাইল-৩২)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশটি করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে ওদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভূত না করে; যদি তোমরা আল্লাহতে এবং পরকালে বিশ্বাসী হও। আর মুমিনদের একটি দল যেন ওদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (সূরা আর নূর-০২)। হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, অবিবাহিত পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে একশ বেত্রাঘাত ও রজম তথা পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড। (সহিহ মুসলিম)।

ইসলামে ব্যভিচারের চেয়েও ধর্ষণের শাস্তি আরও কঠোর করে বর্ণনা করা হয়েছে। ব্যভিচারের ক্ষেত্রে দুজনেই সমানভাবে দোষী থাকে। আর ধর্ষণের ক্ষেত্রে একপক্ষের পাশবিক হিংস্রতার শিকার হয় অন্যপক্ষ। একপক্ষ হয় অত্যাচারী অপরপক্ষ হয় অত্যাচারিত। হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে নবিজি (সা.) মহিলাকে কোনোরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষককে ওদের শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ ২৫৯৮)।

হজরত সাঈদ ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, ‘সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে যে ব্যক্তি নিহত হয়েছে, সে শহিদ। জীবন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে শহিদ। দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সেও শহিদ। আর সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সেও শহিদ।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)। ওই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, যদি কেউ নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় তাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) শহিদ বলে অবিহিত করেছেন।

সাধারণ আইনে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯ ধারা মতে, ‘যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবে এবং তার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে।’ আর ইসলামে ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে, প্রথমে ধর্ষক ব্যভিচারের শাস্তি পাবে পরে হত্যার শাস্তি পাবে। ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি কঠোর করে প্রদানের হুকুম দেওয়া হয়েছে। যা দেখে অন্য কেউ যাতে এ ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়।

ইসলামে ধর্ষণ ও ব্যভিচারকারীকে সবার সামনে শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে যাতে মানুষ এ শাস্তি স্বচক্ষে দেখতে পায় ও নিজে এমন গর্হিত কাজ করতে সাহস না পায়। প্রকাশ্য শাস্তি দেখলে মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকবে এবং এ ধরনের জঘন্য কাজ থেকে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে হেফাজত করবে। এক্ষেত্রে পারিবারিক শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব অনেক।

বর্তমান বাংলাদেশের চিত্র দেখলে বোঝা যাচ্ছে, ধর্ষণ এখন আর মানুষের শারীরিক গঠনের ওপর আকর্ষিত হয়ে ঘটছে এমনটা নয়। মানুষের নীতি নৈতিকতার এত অবনতি হয়েছে যে চার বছর, আট বছরের শিশুও এর থেকে রেহায় পাচ্ছে না।

প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললে দেখা যাচ্ছে কোথাও না কোথাও, কেউ না কেউ কারও দ্বারা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। গত কিছুদিনের তথ্য দেখলে বোঝা যাচ্ছে এর শিকার শিশুরাই বেশি। চকলেট, চিপসের প্রলোভন দেখিয়ে কাছে টেনে বাচ্চাদের নির্মমভাবে পাশবিক নির্যাতন করছে কিছু মানুষ রূপের পশু। জাহেলি যুগে নারীদের যেমন ভোগের বস্তু মনে করা হতো। বর্তমান চিত্র দেখলেও তেমনটাই অনুভব হচ্ছে। অথচ ইসলামে নারীদের রানির মতো রাখা হয়েছে। মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা এদের সঙ্গে সৎ ব্যবহারের ফলে জান্নাত যাওয়ার মাধ্যম বলা হয়েছে তাদের। ধর্ষণ মুক্ত আদর্শ সমাজ গড়তে জনসচেতনতার পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচার প্রসার জরুরি। ইসলামি আইন বাস্তবায়নই ধর্ষণ প্রতিরোধের স্থায়ী সমাধান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম