Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

হিজরি সনের চতুর্থ মাস রবিউস সানি

Icon

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হিজরি সনের চতুর্থ মাস রবিউস সানি

আরবি বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সনের চতুর্থ মাস হলো রবিউস সানি। একে রবিউল আখিরও বলা হয়। এ নামের ব্যুৎপত্তি হলো ‘রবি’ অর্থ বসন্ত, ‘আউয়াল’ অর্থ প্রথম, ‘সানি’ অর্থ দ্বিতীয় এবং ‘আখির’ অর্থ শেষ বা অন্য। অর্থাৎ রবিউস সানি মানে বসন্তের দ্বিতীয় মাস। এটি রবিউল আউয়াল মাসের সঙ্গে যুগল হিসাবে গণ্য হয়। আল্লাহতায়ালা সময় ও মাসের গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলেন সূর্য ও চন্দ্র হিসাবের জন্য নির্ধারিত।’ (সূরা আর-রহমান,আয়াত : ৫।)

মানুষ এ হিসাব অনুযায়ী সময়কে বছর, মাস, সপ্তাহ, দিন ও ঘণ্টায় ভাগ করেছে। ইসলামে বছরের প্রতিটি মাসেরই গুরুত্ব রয়েছে, তবে কোনো মাসেই আল্লাহর বিধানবহির্ভূত বিশেষ আমল আবিষ্কার করা বৈধ নয়।

রবিউস সানি মাস ১১ তারিখ (৫৬১ হিজরি/১১৮২ খ্রিষ্টাব্দ) তারিখে মহান আলী হজরত শায়খ আবদুল কাদির জিলানী (রহ.) ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যু উপলক্ষ্যে কিছু জায়গায় ‘ফাতিহা ইয়াজদাহম’ নামে ওরস, মিলাদ বা বিশেষ মাহফিল পালিত হয়। কিন্তু শরিয়তের দৃষ্টিতে মৃত্যুবার্ষিকী, ওরস বা নির্দিষ্ট তারিখে অনুষ্ঠান পালন করা অনুমোদিত নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনে এমন কিছু নব উদ্ভাবন করল, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।-(সহিহ বুখারি ২৬৯৭।)

তবে শায়খ আবদুল কাদির জিলানী (রহ.) ছিলেন উচ্চ মর্যাদার বুজুর্গ ও অলি। তার জন্য অন্য যে কোনো সময়ে দোয়া, ইসালে সওয়াব এবং কুরআন তিলাওয়াত করা জায়েজ ও উত্তম। নির্দিষ্ট তারিখের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে উদ্যাপন করা বিদআত।

রবিউস সানিতে সুন্নাহসমর্থিত আমল

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে মাসভিত্তিক বা দিনভিত্তিক কিছু আমলের কথা এসেছে, যা সারা বছরই পালনযোগ্য। যেমন-তাহাজ্জুদের নামাজ : হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) তিনটি আমল কখনো পরিত্যাগ করেননি : তাহাজ্জুদ, আইয়ামে বিদের রোজা এবং রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৭৫।)

আইয়ামে বিদের রোজা : প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬০।)

সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের আমলগুলো সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়, তাই আমি চাই আমার আমল যখন পেশ করা হবে, আমি যেন সিয়ামরত থাকি।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৭।)

এগুলো ছাড়া রবিউস সানির জন্য আলাদা কোনো বিশেষ নামাজ, রোজা বা আমল শরিয়তে নির্ধারিত নেই।

বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের উপমহাদেশে বারো চান্দের আমল নামে কিছু কিতাবে রবিউস সানি মাসের জন্য বানোয়াট নামাজ ও আমল উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, নতুন চাঁদ দেখে বিশেষ নফল নামাজ পড়া। মাসের শেষ রাতে নির্দিষ্ট রাকাত নামাজ আদায় করা। পুরো মাস সূরা মুজ্জাম্মিল নির্দিষ্ট নিয়মে পাঠ করলে অলৌকিক উপকার হওয়ার বিশ্বাস। এসব আমল কোথাও সহিহ বা হাসান হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং এগুলোকে মনগড়া আমল হিসাবে আলেমরা বিদআত বলেছেন। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো বিদআত উদ্ভাবন করল এবং সেটিকে ভালো মনে করল, সে মনে করল মুহাম্মাদ (সা.) দ্বীনকে অসম্পূর্ণ রেখে গেছেন।-(আল-ইতিসাম, শাতিবি, খণ্ড : ১, পৃ. ৪৮।) অতএব, সুন্নাহসমর্থিত আমলকে আঁকড়ে ধরা এবং বিদআত থেকে বিরত থাকা জরুরি।

রবিউস সানি মাসেও সারা বছরের মতো নফল নামাজ, জিকির-আসকার, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা এবং দোয়া করা সর্বোত্তম ইবাদত। কুসংস্কার, মনগড়া আমল ও বিদআত থেকে বাঁচা ফরজসম অনুরূপ দায়িত্ব। আল্লাহর রাসূল (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের আমলকে অনুসরণ করাই মুক্তির পথ। আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা রাসূল যা তোমাদের দিয়েছেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক।’ (সূরা হাশর, আয়াত : ৭।)

পরিশেষে বলতে চাই, রবিউস সানি মাস ইসলামের দৃষ্টিতে একটি সাধারণ মাস, তবে এতে বিদআত প্রচলন করে একে বিশেষ মর্যাদার মাসে পরিণত করার সুযোগ নেই। সুন্নাহসমর্থিত আমল যেমন তাহাজ্জুদ, রোজা, দান-সদকা ও কুরআন তিলাওয়াত সব মাসের মতোই পালনযোগ্য। কিন্তু ফাতিহা ইয়াজদাহম, নির্দিষ্ট তারিখে বিশেষ নামাজ বা মনগড়া আমল শরিয়তে বৈধ নয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের সত্যিকার অর্থে সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এবং বিদআত থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন। আমিন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম